পর্ব ১
আমরা জানি না বাংলা বানানের প্রমিতিকরণ আদৌ সম্ভব কি না। কতগুলো মৌলিক সমস্যা আমি অন্তত আমার অদীক্ষিত, অশিক্ষিত, ইতরদের সঙ্গঠনের সঙ্গে থাকাকালীন, নিজের চোখে দেখছি, সেই দৃষ্টিতে আমরা(বলা দরকার আমি - এটা আমারই দৃষ্টিভঙ্গী - সঙ্গঠনে কথা হয় নি) Prabhakara আপনার প্রস্তাব নিয়ে কি ভাবছি, নিচে বলছি - সাঁটে।
১) রাজনৈতিক - আমরা প্রায় সক্কলেই জানি উপমহাদেশে বাংলা ভাষা দুটি আন্তর্জাতিক সীমান্তে বিভক্ত - এবং ভারতে তিনিটি রাজ্যে(বাংলা, ত্রিপুরা, অসম)ও বিভক্ত। দুই সীমান্তের দুপাশ খুবই শক্তিশালী কেন্দ্র কলকাতা আর ঢাকা - প্রমিত অপ্রমিততা নিয়ে - প্রমিততা নিয়ে দুই পাশের দুই সরকার এমন কেন্দ্রিভবন তৈরির সংগঠন করেছেন যেগুলির উপসর্গ পাশ্চাত্যিক, ইওরোপিয় - একাডেমি যেমন বাংলা একাডেমি, ফোক একাডেমি, (এশিয়াটিক) সোসাইটি, ফাউন্ডেশন বা আমাদের সঙ্গঠনের গিল্ড ইত্যাদি শব্দের প্রাধান্য। ফলে ক্ষমতায় যারা আছেন(এক সময় আমাদেরও) তাঁদের মানসিকতা বুঝতে খুব বেগ পেতে হয় না - এঁরা নবজাগরণীয় উদ্গারে নিশ্চিন্ত বোধ করেন। যে একাডেমি/আকাদেমি/অকাদেমি ইত্যাদি নাম কলকাতা/ঢাকা কেন্দ্রিকতাতেই বর্তমান, তাঁদের কাজকর্মে পাশ্চাত্য নির্ভরতা স্পষ্ট। ফোক/লোক আদতে অপ্রমিত (রাজবংশীকে এক ভাষা আচার্য বলে দেন বাহে ভাষা) তত্বের প্রভাব পড়ছে ভাষা চর্চায়। কলকাতানির্ভর সাহিত্যে যেভাবে বালিগঞ্জিয়(আদতে শান্তিপুরী) প্রমিততার চর্চা হয়ে আসছে মোটামুটি দেড়শ বছর ধরে - উত্তরহুতোমি - সেটা নিয়ে তাঁরা প্রায় আগোছালো একটা কেন্দ্রিভবনের দিকে যাচ্ছেন - তার প্রমান নানান ডিক্সনারির নানান উচ্চারণ আর বানানে।
এই দুই কেন্দ্রকে মেলানো মুশকিল - বাংলাদেশে প্রবল জাত্যাভিমান (আমরা স্বাধীন বাঙালি আর তোরা শালা ইন্ডিয়া/হিন্দির পাচাটা কুত্তা) আর উন্নাসিক কলকাতার(ওটা আবার বাংলা হল কবে? ওটাতো বাঙ্গাল, আঞ্চলিক) - যে কোন মিলনের সমীকরণ তৈরির পক্ষে কোনভাবেই অনুকূল নয়।
এই দুই কেন্দ্রকে মেলানো মুশকিল - বাংলাদেশে প্রবল জাত্যাভিমান (আমরা স্বাধীন বাঙালি আর তোরা শালা ইন্ডিয়া/হিন্দির পাচাটা কুত্তা) আর উন্নাসিক কলকাতার(ওটা আবার বাংলা হল কবে? ওটাতো বাঙ্গাল, আঞ্চলিক) - যে কোন মিলনের সমীকরণ তৈরির পক্ষে কোনভাবেই অনুকূল নয়।
২) সাংস্কৃতিক - ভাষার উদ্ভব বিষয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতদ্বৈধতা - আপনি জানেন এটি বিস্তৃত করার প্রয়োজন নেই - গ্রিয়ার্সন জোনসের আর্য উদ্ভব (ইন্দো-ইওরোপিয়) এবং অন্যান্যদের অনার্য উদ্ভব তত্ত্ব যেমন সুহৃদ ভৌমিক ইত্যাদিদের (সুহৃদবাবু বলেছেন সুনীতিকুমারও সেই তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন) দেশিয় মানুষদের ভাষা এবং ব্যকরণ উদ্ভব যেটা আপনার লেখায় পাই(আমি আপনার-সুহৃদ তত্ত্বের পক্ষে)। বাংলাদেশে অপ্রমিততার ঝোঁক খুব সম্প্রতির, কয়েক দশকের। এ প্রান্তে বসে শুধু ইন্টারনেট-ফেবু নির্ভর হয়ে সেটির গতি আর অভিমুখ বলা আমার পক্ষে অন্তত সম্ভব নয়। একটা বিষয় পরিষ্কার, এখানে নবজাগরনীয় প্রমিততা উপেক্ষিত হয়ে উচ্চারণ নির্ভর লেখ্য বিবর্তনের দিকে চলেছে। মহাকাল বলবেন এর রূপ কি হবে - কিন্তু প্রমিততার আশেপাশে যে থাকবে না এটা পরিষ্কার।
আরও তাত্ত্বিক ভাগ করা যায় বেশিদূর গেলাম না।
আরও তাত্ত্বিক ভাগ করা যায় বেশিদূর গেলাম না।
পর্ব ২
আমি যেহেতু একসময় হকার আজ কারিগরদের সঙ্গঠনের সঙ্গে যুক্ত, মূলত লেখ্যরূপের অক্ষর বিবর্তনের বাইরের না হলেও ভাষার ক্ষমতা কেন্দ্রিভূততার হাতার বাইরে থাকা মানুষদের সঙ্গ করি। মনে করি না জাতি রাষ্ট্র প্রণোদিত পাঠশালার অপ্রাচ্যিক কেন্দ্রিভূত জ্ঞান, দক্ষতা, প্রজ্ঞান শেষ কথা বলে। বাংলাজুড়ে হাজার হাজার বছর ধরে অকেন্দ্রিভূত জ্ঞানচর্চার বাইরে দাঁড়িয়ে সমাজ/গুরু/বংশ/ব্যক্তি পরম্পরার একটি অনতিক্রম্য অকেন্দ্রিভূত বৈচিত্র্যময় ধারা তৈরি করেছে এই ছোটলোক/ইতরেরা(শব্দসূত্র দীনেশ সেন মশাই) তাদের গান, পালা, বাদনবোলি, প্রযুক্তির লব্জ, পরিবারে ব্যবহৃত ভাষা, স্ত্রীআচার, রান্নাবান্না(বাপের বাড়ির লব্জ, শ্বশুরবাড়ির লব্জ এবং দুটিকে মিলিয়ে মিশিয়ে বিবাহিত মহিলাটি তৈরি করলেন নতুন একটা লব্জ) মাধ্যমে সেই পরম্পরা বোঝা দরকার। এই বয়ানটা আমরা বলেছি পরমের পাঠশালা সঙ্খ্যার ভূমিকায় কেন আমরা বিদ্যালয় ক্ষমতানির্ভর জ্ঞানকে চরম জ্ঞানের মর্যাদা দিচ্ছি না। এই পথ ব্যবসায়ীরা কোন কেন্দ্রিভূত পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত না হয়েও (এই সেদিনও কয়েক দশক আগে পর্যন্ত গন্ধ, স্বর্ণ ইত্যাদি বণিকদের ছানাপোনারা পাঠশালাতেই যেত না, তাদের নিজস্ব জ্ঞানচর্চা ছিল, যেমন কারিগরদের) কোন কেন্দ্রিভূত ভাষা ছাড়াই কারিগরদের উতপাদিত পণ্য সারা এশিয়া জুড়ে বিক্রি করতেন এটাও মনে রাখা দরকার।
এমনকি উইলিয়াম এডামকৃত ত্রিহূত থেকে নাটোর পর্যন্ত বাংলা ভূখণ্ডে বিপুল অকেন্দ্রিভূত পাঠশালা, তার পাঠ্যক্রম, তার অর্থনীতি, তার পড়ুয়া-শিক্ষকদের জাতিভাগ, পড়ানোর রীতি, বিদ্যালয় জ্ঞানের উপযোগিতা ইত্যাদি নিয়ে শিক্ষা সমীক্ষায় কিন্তু অকেন্দ্রিভূততার প্রাধান্যই দেখি।
প্রথাগত/অপ্রথাগতভাবে জ্ঞানঅর্জন করা কারিগরকে দৈনন্দিনভাবে পরীক্ষা দিতে হয় তার সমাজে মানুষের কাছে, বাজারে যাওয়ার মধ্যেই, তার ভাব/পণ্য তৈরির প্রকাশের মধ্যেই। সেটাও বিকেন্দ্রিত।
কেন্দ্রিভবন প্রয়োজন হল যখন শিক্ষার (জাতি)রাষ্ট্রপ্রণোদিত ক্ষমতায়ন তৈরি হল আর পলাশীর পরে কর্পরেটিকরণ শুরু হল - সীমান্ত পারে সাম্রাজ্য (পন্থ এবং রাজনৈতিক) চালাতে কেন্দ্রিভূত ভাষার উদ্ভব। এক সময় রাজারা বৌদ্ধপন্থ তৈরি করে করেছেন সারা এশিয়াজুড়ে বৌদ্ধ দর্শন ছড়ানোর জন্যে, সনাতনীরা তাদের মত করে করেছেন উপমহাদেশজুড়ে এমন কি দাক্ষিণাত্যের শ্রীবিজয় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় সাম্রাজ্য স্থাপন করতে।
আমরা যারা কেন্দ্রিভূত অর্থনীতির বাইরের মানুষ, অমিত বৈচিত্র্য, ছড়িয়ে থাকাই আদতে কর্পোরেট উৎপাদন ব্যবস্থা/তাত্ত্বিক অবস্থানকে প্রতিহত করার অন্যতম মৌল শর্ত, তাদের কাছে প্রমিততার দিকে এগোনো ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণের প্রথম ধাপ। যে অকেন্দ্রিভূত প্রযুক্তি, অর্থনীতি, লব্জ আমরা ইতরেরা ছোটলোকেরা আজও পালন করে চলি আমাদের জীবনযাত্রায়, কৃষ্টি পালনে এবং অর্থনীতিতে, তাদের প্রমিততার দিকে যাত্রা করা একটি অবাস্তব প্রকল্প।
আমরা মনে করি প্রমিততা, কেন্দ্রিভূততা, রাজপোষণের জন্যেই বিপুল বিশাল বৈচিত্র্যময় ব্যপ্ত বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা এই উপমহাদেশে ভেঙ্গে পড়েছে। যাঁরা টিকে আছেন, তারা বিকেন্দ্রিভূত অবস্থায় ছিলেন বলেই, সাধারণ মানুষের ইচ্ছে অনিচ্ছেকে গুরুত্ব দিতেন বলেই কিন্তু আজও বেঁচে আছেন। যেমন অসমের বিপুল বিশাল বৈষ্ণব সত্র আজও টিকে আছে সাধারণ মানুষের সংযোগে।
ফলে আমি অন্তত মনে করি প্রমিততা আদতে একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রকল্প।
আমি যেহেতু একসময় হকার আজ কারিগরদের সঙ্গঠনের সঙ্গে যুক্ত, মূলত লেখ্যরূপের অক্ষর বিবর্তনের বাইরের না হলেও ভাষার ক্ষমতা কেন্দ্রিভূততার হাতার বাইরে থাকা মানুষদের সঙ্গ করি। মনে করি না জাতি রাষ্ট্র প্রণোদিত পাঠশালার অপ্রাচ্যিক কেন্দ্রিভূত জ্ঞান, দক্ষতা, প্রজ্ঞান শেষ কথা বলে। বাংলাজুড়ে হাজার হাজার বছর ধরে অকেন্দ্রিভূত জ্ঞানচর্চার বাইরে দাঁড়িয়ে সমাজ/গুরু/বংশ/ব্যক্তি পরম্পরার একটি অনতিক্রম্য অকেন্দ্রিভূত বৈচিত্র্যময় ধারা তৈরি করেছে এই ছোটলোক/ইতরেরা(শব্দসূত্র দীনেশ সেন মশাই) তাদের গান, পালা, বাদনবোলি, প্রযুক্তির লব্জ, পরিবারে ব্যবহৃত ভাষা, স্ত্রীআচার, রান্নাবান্না(বাপের বাড়ির লব্জ, শ্বশুরবাড়ির লব্জ এবং দুটিকে মিলিয়ে মিশিয়ে বিবাহিত মহিলাটি তৈরি করলেন নতুন একটা লব্জ) মাধ্যমে সেই পরম্পরা বোঝা দরকার। এই বয়ানটা আমরা বলেছি পরমের পাঠশালা সঙ্খ্যার ভূমিকায় কেন আমরা বিদ্যালয় ক্ষমতানির্ভর জ্ঞানকে চরম জ্ঞানের মর্যাদা দিচ্ছি না। এই পথ ব্যবসায়ীরা কোন কেন্দ্রিভূত পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত না হয়েও (এই সেদিনও কয়েক দশক আগে পর্যন্ত গন্ধ, স্বর্ণ ইত্যাদি বণিকদের ছানাপোনারা পাঠশালাতেই যেত না, তাদের নিজস্ব জ্ঞানচর্চা ছিল, যেমন কারিগরদের) কোন কেন্দ্রিভূত ভাষা ছাড়াই কারিগরদের উতপাদিত পণ্য সারা এশিয়া জুড়ে বিক্রি করতেন এটাও মনে রাখা দরকার।
এমনকি উইলিয়াম এডামকৃত ত্রিহূত থেকে নাটোর পর্যন্ত বাংলা ভূখণ্ডে বিপুল অকেন্দ্রিভূত পাঠশালা, তার পাঠ্যক্রম, তার অর্থনীতি, তার পড়ুয়া-শিক্ষকদের জাতিভাগ, পড়ানোর রীতি, বিদ্যালয় জ্ঞানের উপযোগিতা ইত্যাদি নিয়ে শিক্ষা সমীক্ষায় কিন্তু অকেন্দ্রিভূততার প্রাধান্যই দেখি।
প্রথাগত/অপ্রথাগতভাবে জ্ঞানঅর্জন করা কারিগরকে দৈনন্দিনভাবে পরীক্ষা দিতে হয় তার সমাজে মানুষের কাছে, বাজারে যাওয়ার মধ্যেই, তার ভাব/পণ্য তৈরির প্রকাশের মধ্যেই। সেটাও বিকেন্দ্রিত।
কেন্দ্রিভবন প্রয়োজন হল যখন শিক্ষার (জাতি)রাষ্ট্রপ্রণোদিত ক্ষমতায়ন তৈরি হল আর পলাশীর পরে কর্পরেটিকরণ শুরু হল - সীমান্ত পারে সাম্রাজ্য (পন্থ এবং রাজনৈতিক) চালাতে কেন্দ্রিভূত ভাষার উদ্ভব। এক সময় রাজারা বৌদ্ধপন্থ তৈরি করে করেছেন সারা এশিয়াজুড়ে বৌদ্ধ দর্শন ছড়ানোর জন্যে, সনাতনীরা তাদের মত করে করেছেন উপমহাদেশজুড়ে এমন কি দাক্ষিণাত্যের শ্রীবিজয় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় সাম্রাজ্য স্থাপন করতে।
আমরা যারা কেন্দ্রিভূত অর্থনীতির বাইরের মানুষ, অমিত বৈচিত্র্য, ছড়িয়ে থাকাই আদতে কর্পোরেট উৎপাদন ব্যবস্থা/তাত্ত্বিক অবস্থানকে প্রতিহত করার অন্যতম মৌল শর্ত, তাদের কাছে প্রমিততার দিকে এগোনো ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণের প্রথম ধাপ। যে অকেন্দ্রিভূত প্রযুক্তি, অর্থনীতি, লব্জ আমরা ইতরেরা ছোটলোকেরা আজও পালন করে চলি আমাদের জীবনযাত্রায়, কৃষ্টি পালনে এবং অর্থনীতিতে, তাদের প্রমিততার দিকে যাত্রা করা একটি অবাস্তব প্রকল্প।
আমরা মনে করি প্রমিততা, কেন্দ্রিভূততা, রাজপোষণের জন্যেই বিপুল বিশাল বৈচিত্র্যময় ব্যপ্ত বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা এই উপমহাদেশে ভেঙ্গে পড়েছে। যাঁরা টিকে আছেন, তারা বিকেন্দ্রিভূত অবস্থায় ছিলেন বলেই, সাধারণ মানুষের ইচ্ছে অনিচ্ছেকে গুরুত্ব দিতেন বলেই কিন্তু আজও বেঁচে আছেন। যেমন অসমের বিপুল বিশাল বৈষ্ণব সত্র আজও টিকে আছে সাধারণ মানুষের সংযোগে।
ফলে আমি অন্তত মনে করি প্রমিততা আদতে একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রকল্প।
No comments:
Post a Comment