সম্প্রতি সত্যের সামাজিক ইতিহাস লিখতে গিয়ে স্টিভেন শাপিন(Steven Shapin, A Social History of Truth: Civility and Science in Seventeenth-Century England) বলছেন বৈজ্ঞানিক সমাজের নৈতিক অর্থনীতির ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে সম্পর্কের বিশ্বাসের ওপর। ব্যক্তি নয়, নৈতিক সমাজ আদপে বিজ্ঞানের মৌল একক। এবং জ্ঞানীক শাসন/শৃংখলা সমসময় সামাজিক শাসন/শৃঙ্খলার সঙ্গে হাত মিলয়ে চলেছে। সপ্তদশ শতকে রয়্যাল সোসাইটির বৈজ্ঞানিক গবেষণার ওপর আলো ফেলে শাপিন দেখাচ্ছেন কিভাবে এটি ভদ্রলোকিয় কৃষ্টির শাসন/শহুরেপনা/শিষ্টাচার(সিভিলিটি) থেকে উদ্ভুত হয়েছে। তার মতে ভদ্রলোকের মৌল চরিত্র হল স্বাধীনতা, সে কোন কিছুর প্রতি দায়বদ্ধ/বাধিত নয়, যে ভাবনার প্রভূত প্রভাব পড়ে তার বক্তব্য/উচ্চারণের সত্যতার ওপর। বৈজ্ঞানিক এবং ভদ্রলোকিয় শিষ্টাচারের মিলের জায়গাগুলি হল, প্রথম দিককার রয়্যাল ফেলোরা সক্কলে ভীষণভাবে সুশীল। ভদ্রলোকেদের অধিকার হল এক্সপেরিমেন্টগুলোকে ভদ্রভাবে দ্যখা। সে সময় অন্যতম এক্সপেরিমেন্টাল দার্শনিক রবার্ট বয়েলের লেখালিখির বড় তাত্ত্বিক অংশই হল কি ভাবে the experimental way of lifeএর নৈতিক অত্যাবশ্যকীয়তার শিষ্টাচার নির্ধারণ করা যায়।
যদিও শাপিন বইটির শেষ করতে গিয়ে বলছেন, বিজ্ঞান আন্তঃব্যক্তিগত বিশ্বাসের ওপর কাজ করে, শিষ্টাচার এবং সামাজিক প্রথার ওপর এই বিশ্বাসটা দাঁড়িয়ে থাকে। গত তিন শতক ধরে এটি অবশ্যই পরিবর্তিত হচ্ছে বৈজ্ঞানিক অনুশীলনের অন্তর্জাতিকতা যতই বাড়ছে। অষ্টাদশ শতকেই নানান সামাজিক স্তরের বেশ ভাল সংখ্যায় ব্রিটন এবং ইওরোপিয়, নানান ধরণের সামাজিক উচ্চাশার রণকৌশলে এই শিক্ষিত সমাজের অন্তর্ভূক্ত হতে থাকেন যেমন পৃষ্ঠপষণা এবং কর্মভারহীনপদ(sinecures,) নেভি বা অন্যান্য আন্তঃমহাদেশিয় ব্যবসা কোম্পানিতে অংশ নেওয়া। শেষের এই দুটি ক্ষেত্র বিপুল সংখ্যার ভদ্রলোককে, ব্রিটেনের দ্রুত হারে বাড়তে থাকা সাম্রাজ্যে বিশ্ব ভ্রমণের সুযোগে প্রাকৃতিক ইতিহাস, প্রাকৃতিক দর্শন এবং প্রাচীন জ্ঞান সংগ্রহ করে শান্ত, সমাহিত সুশীল, শিক্ষিত সমাজে প্রবেশের ছাড়পত্র দিয়েছে। এই সুযোগে ভদ্রলোক তকমা পেতে ৪০ হাজার পাউন্ডও রোজগার করার সুযোগ করে দিয়েছে।
নতুন দর্শনের এই সব অসামান্য গুণগুলি আত্মীকরণ করা ছাড়াও, বয়েলের মত প্রথিতযশা বিজ্ঞানী, ভ্রমণকারী আর সংগ্রাহকদের নির্দেশ দিচ্ছেন, কিভাবে বিশ্বকে দ্যাখা উচিত। এ বিষয়ে আমি আগেই উল্লেখ করেছি, সেই সব পাঠে আমরা বুঝতে পারি সাম্রাজ্যের কেন্দ্রের গবেষণাগারগুলির বাইরে যত তথ্য উদ্ভুত হচ্ছে সবেতেই উপনিবেশের দেশিয় কোলাবোরেটরদের অংশগ্রহণ রয়েছে। এই সামাজিক উচ্চাশাপূরণের নির্দেশাবলী আর কৌশলের ফলে এই জ্ঞানের ব্রিটিশ উতপাদকেরা ভদ্রলোকিয় শিষ্টাচার এবং কর্তৃত্ব দাবি করল। এবং এর সঙ্গে হাত ধরাধরি করে ঊঠে এল এই ভদ্রলোকেদের সঙ্গে দেশিয় জ্ঞানালোচক এবং তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা, যাদের ভাষা আর সাক্ষ্য আর প্রমাণে, নতুন জ্ঞানের ভিত্তি এবং তার সঙ্গে বস্তুগত প্রথাগুলি নির্ভর করত। ভ্রমণকারীদের প্রতি যে নির্দেশ দেওয়া থাকত সেটা হল পারস্যের মত এলাকায় দেশিয় (autochthonous)দের সঙ্গে সহযোগিতা। বয়েল ভ্রমণকারীদের প্রশ্ন করতে বলছেন, the[ir] present Studies . . . and what kind of Learning they now excel in. What other Trades and Arts they are now skilled in, besides that of making of Silk and Tapistry. Whether, there being already good descriptions in Words, of the excellent Pictures, and Basse Relieves, that are about Persepolis at Chimilnar, yet none very particular, some may not be found sufficiently skill’d, in those Parts, that might be engaged to make a Draught of the Place, and the Stories there Pictured and Carved.।
এতদসত্ত্বেও অধিকাংশ ভ্রমণকারীর লেখায় I-witnessing ঘোমটায় দেশিয়দের সম্পৃক্ততাকে লুকিয়ে ফেলা যেত। তবে সবসময়ে সম্ভব হত না, কারণ নানান উদ্দেশ্যে বহু লেখক তার হাতে তৈরি হতে যাওয়া অমেট্রোপলিটনিয় জ্ঞানে দেশিয় কোলাবরেটরের নাম উল্লেখ করত – এমন নয় যে, অনেক সময় তার বিরুদ্ধ পক্ষের দাবি নস্যাৎ করতে, বহু সময় তারা দেশিয়দের অখ্যাতি করত – বরং তার নিজের জ্ঞানের বৈধতার অবস্থান, তার সামাজিক স্তরকে জোরদার করতে।
কপিল রাজের রিলোকেটিং মডার্ন সায়েন্স থেকে, ১০৪ পাতা
No comments:
Post a Comment