নিজের বুকে হাত রেখে প্রশ্ন করুণ হে প্রমিত ঔপনিবেশিক সুবিধে পাওয়া ভদ্র উপাধিযুক্ত সমাজ, কেন শূদ্র এবং অন্যান্য অস্বচ্ছল অসুবিধেভোগী সমাজ এই গণতান্ত্রিক নানান পরিকাঠামো যেমন শিক্ষা ব্যবস্থায় নিজেরা অংশ নিতে চান না?
এই পাঠ্যসূচীই নয় গোটা ব্যবস্থাই গাঁইয়াদের লক্ষ্য রেখে তৈরি হয় নি - জাতিবাদভিত্তিক মেকলেবাদের প্রমিততা আর মেট্রোপলিটনবাদ জড়িয়ে আছে এই পাঠ্যক্রমের আনাচেকানাচে। মমতা সরকার তার মত করে চেষ্টা করছে পাঠ্যক্রম শোধরানোর। গোড়ায় গলদ যে ব্যবস্থার তার প্রসাধনী পরিবর্তন হয়ত শুনতে ভাল কিন্তু আদতে অকার্যকরী। তাই মিডডে মিল দিয়ে, কন্যাশ্রী দিয়ে ছানাপোনাদেরকে বিদ্যালয়ে আটকে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। সেটাও ভদ্রবাবুদের নাপসন্দ, যারা সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়েও সরাসরি সরকারের সংরক্ষণ পান সামাজিকভাবে গণতান্ত্রিকভাবে বংশপরম্পরায় সেই পলাশীর পর থেকে।
ভদ্রবাবুরা ভাবুন, বিদ্যাচর্চায় ২৫ লক্ষ শিশু প্রাথমিকে ঢোকে - এঁদের অধিকাংশ শূদ্র এবং দলিত, তাঁদের ২০% যদি স্নাতকস্তরে উচ্চশিক্ষা চান, সেটা দেওয়ার পরিকাঠামো ভদ্রলোক আপনারা রেখেছেন তো? স্নাতকে ৮০ হাজারের পরীক্ষার চাপ নিতেই আপনারা হাঁপিয়ে যান না? আপনারা তো চান এরা ড্রপআউটই হোক। না হলে আপনারা সামাজিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েন।
তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম আপনি উচ্চশিক্ষায় এই পরিকাঠামোটা বানিয়ে দিলেন। কিন্তু এই যুবা-যুবতীরা পরীক্ষায় সফল হয়ে করবেনইটা কি? যে পাঠ পড়িয়েছেন তাতে চপ ভাজতে বললে, রাস্তায় হকারি করতে বললে মারতে আসবে। তাকে আপনি চাকর তৈরি করতে চাচ্ছেন। জিডিপি বাড়লেও রোজ প্রাতিষ্ঠানিক চাকরির বাজার ছোট হচ্ছে। স্বচ্ছল চার পাঁচ পুরুষের সমাজের সুবিধেভোগী শ্রেণীকেই আপনারা চাকরি দিতে পারছেন না, এরা চাকরির বাজারে এলে তো যে কোন সরকার ল্যাজে গোবরে হয়ে যাবে, দাঙ্গাপরিস্থিতি তৈরি হবে।
এটা স্বীকার করে নিন এই ধরণের পড়াশোনা, চাকরিবাকরি কোনটাই সত্যিই ছোটলোকেদের জন্য নয়। এই গণতন্ত্রও ছোটলকেদের জন্য নয়। ভদ্রলোকের পরিকল্পনায় এর উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে পশ্চিমে। এখানেও আমারা সেটা নকল করে সংরক্ষণ নামক একটা খুড়োরে কল ঝুলিয়ে দিয়েছি তাদের অংশ নেওয়ানোর ভান করতে।
মমতা তাঁর মত করে ছোটলোকেদের জন্যে চেষ্টা করছেন, কিন্তু সেটুকুও অবিলম্বে নাক উঁচু, স্বার্থবাজ, জাতিবাদী, ঔপনিবেশিক, ইংরেজি শিক্ষিত, সাম্রাজ্য-বন্ধু উভয় ধর্মের প্রমিতবাদী ভদ্রলোকেদের জন্য ব্যর্থ হবে। হবেই।
No comments:
Post a Comment