এক প্রাচ্যবিদের উদ্ভব ও
বিকাশ
হেস্টিংস যে কাজটা করতে
চাইছিলেন, ১৭৮৩ সালে ভারতে পদার্পণ করে সেই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেন উইলিয়াম
জোনস। তাঁর জন্ম, লন্ডনে সাধারণ পরিবারে, ১৭৪৬ সালে। তাঁর পিতা ছিলেন ওয়েলসের মধ্যকরণিক
যার কাজ ছিল বাড়ি গোনা এবং পরের দিকে তিনি সমুদ্র যাত্রা করে লন্ডনে থিতু হন। তিনি
শিক্ষক ছিলেন, অঙ্ক এবং বন্দুকশাস্ত্র নিয়ে বই লিখে নিউটন আর এডমন্ড হ্যালির সঙ্গ
পান। নিউটনের কাজকর্ম বিষয়ে তিনি বিশদে আলোচনা করে এবং লিবনিতজের সঙ্গে যখন
নিউটনের বিপুল বিতর্ক চলছে, তিনি নিউটনের পাশে দাঁড়ানোর পুরষ্কার হিসেবে রয়্যাল সোসাইটির
সদস্যপদ পান ১৭১২ সালে। মারা যান ১৭৪৯ সালে। মৃত্যুর পর হার্ডউইক এবং ম্যাসেলসফিল্ডের
মত কিছু প্রভাবশালী বন্ধু জোনসের উদ্ধার কর্তা হয়ে দ্যাখা দিলেন।
কড়াহাতে অস্বচ্ছল পরিবার চালানো
বিধবা মায়ের নিয়ন্ত্রণে বড় হওয়া জোনসের বড় হওয়ার সময় তার মনের খোরাক দিতেন নিউটন,
লক, মিলটন ইত্যাদিরা। তার মা প্রায়ই বলতেন পড়লেই জানবে। চার বছর বয়সে তিনি জোনসকে
সেক্সপিয়ার থেকে আবৃত্তি গে’র উপকথা থেকে লিখতে শেখান। খুব অল্প সময়ে স্মৃতি অবলম্বন
করে দ্য টেমপেস্ট লিখলেন। সাত বছরে হ্যারোতে ভর্তি হয়ে গ্রিক আর ল্যাটিন শিখে ফেলে
ভার্জিল এবং সফোক্লিসের অনুসরণে কবিতা লিখতে শুরু করেন। অনুকরণ তাঁর জীবনের
গুরুত্বপুর্ণ চরিত্র হয়ে ওঠে। হ্যারোয় তার
বন্ধুরা পরের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হুইগ সদস্য হবেন যেমন উইলিয়াম বেনেট হন
শ্রীলঙ্কার বিশপ, স্যামুয়েল পার হন সেন্টপসের প্রেবেন্ডারি এবং হাটনের কিউরেট, আয়ারল্যান্ডের চ্যানসেলর অব এক্সচেকার
হন জন পারনেল, রয়্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট হন যোসেফ ব্যানকস এবং ভারতে আসা দুই
প্রখ্যাত বন্ধু ন্যাথানিয়েল হ্যালহেড এবং জন শোর, যিনি জোনস সম্বন্ধে প্রশস্তিমূলক
বই(hagiographer) লেখেন।
সাহিত্যকে পেশা হিসেবে নেওয়া
মনস্থ করে জোনস অক্সফোর্ডের ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি হল ১৭৬৪ সালে, ধ্রুপদী পাঠ্য
পড়তে। তাঁকে আরবি পড়তে উৎসাহ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবির অধ্যাপক যোসেফ হোয়াইট।
সিরিয়ার আলেপ্পোর মির্জার সঙ্গে যোগাযোগ হয় এবং তাঁকে তিনি লন্ডনে নিয়ে এসে তাঁর
সঙ্গে রাখেন। আমরা পরের দিকে দেখব দেশিয় বিশ্বস্ত মধ্যস্থরা তার ভাষা শিক্ষায়
গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি প্রত্যেক দিন সকালে এন্টনি গ্যালান্ডের(Antoine Galland) ১২ খণ্ডের, Les
mille et une nuits আরবিতে অনুবাদ করা শুরু করেন। আধুনিক আর্বি আর ফারসির
মধ্যে সৌসাদৃশ্য অনুভব করে তিনি ফার্সিও শিখতে শুরু করেন। তার ভাবনা হল ফারসি
যেহেতু মুঘল ভারতের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা, এই ভাষাটি কোম্পানির চাকরির দৌড়ে কাজে
লাগতে পারে।
প্রাচ্য দেশিয় ভাষায় তার
উৎসাহ থাকলেও তিনি বুঝে যান এ বিষয়ে তার আর্থিক সম্পদশালী এবং কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে
যাওয়ার ভাবনা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। নিজেকেই এগিয়ে যেতে হবে বুঝে তিনি ১৭৬৫ সালে
ভিসকাউন্ট এলথ্রপ(পরে নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধে ফার্স্ট লর্ড অব এডমিরালিটি) সাত
বছরের পুত্র জর্জ জন স্পেনসারকে পড়াতে থাকেন। জোনসের সামাজিক উত্থানে স্পেনসারদের
পারিবারিক যোগাযোগ খুব গুরুত্বপুর্ন হয়ে ওঠে। তার শিক্ষার কিছু ছিদ্র পুরণ করা এবং
ভদ্র সমাজের উপযুক্ত হয়ে ওঠার নানান আদবকায়দা যেমন ঘোরায় চড়া, নৃত্য শিক্ষা,
তরোয়াল চালানো, এবং মহাদেশে ছুটি কাটানো ইত্যাদিতে দক্ষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। এই
পরিবার তাঁকে হাঙ্গেরিয়ান কাউন্ট চার্লস রেজভিজকি(যার ওরিয়েন্টাল লাইব্রেরি আর্ল
সম্প্রতি কেনেন), এবং যশুয়া রেনল্ডসের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন। ১৭৬৯ সালে যশুয়া তার
পোট্রেট আঁকেন, এই কাজে তাঁর মা ৩৭ পাউন্ড খরচ করেন।
স্পেনসারের মাধ্যমেই তার ভাবী
স্ত্রী আনা মারিয়া শিপলির সঙ্গে পরিচয় ১৭৬৬ সালে। শিপলিদের মার্ফত তার পরিচয় হয়
বেশ কিছু আমেরিকিয় বিপ্লবীর সঙ্গে যার মধ্যে প্রখ্যাততম হলেন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন,
যিনি পরবর্তী কালে তার উৎসাহী বন্ধু হয়ে উঠবেন। স্পেনসার্সের মাধ্যমেই অবশেষের
ডেনমার্কের রাজা তঁকে ফার্সি পাণ্ডুলিপি, নাদির সাহের জীবনী, তারিখইনাদরিকে
ফরাসীতে অনুবাদ করার অনুরোধ করেন। জোনস বুঝতে পারেন এটা তার ভবিষ্যতের জন্যে
অসম্ভব উপাদেয় পথ্য হতে পারে।
কপিল রাজের রিলোকেটিং মডার্ন
সায়েন্স থেকে, ১১৭ পাতা
No comments:
Post a Comment