হিন্দু কালেজ এবং ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি স্থাপন করার মধ্যেদিয়ে শহুরে স্বচ্ছল এবং অভিজাতরা ব্রিটিশ জ্ঞানপ্রথার সঙ্গে নিজেদের আত্মস্থ করতে চাইল। এই উপমহাদেশে ব্রিটিশেরা যখন থেকে এসেছে তারা দক্ষিণ এশিয়ার জ্ঞান আত্মস্থ করেচলেছে। তবে এই সময়ে ভদ্রলোকেদের একটাই উচ্চাশা ছিল ব্রিটিশদের সামনে নিজেদের একমাত্র দেশিয় অভিজাত শ্রেণী হিসেবে তুলে ধরা, যাদের কাজ হবে ইওরোপিয়দের সঙ্গে দেশিয় মানুষদের মধ্যে মধ্যস্থতা। ততদিনে কলকাতা একটা খোড়োবাড়িময় ঘুমিয়ে থাকা গ্রাম্য সমাজ থেকে এশিয়ার সব থেকে বড় ব্যবসা কেন্দ্র, এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, এবং নব্য অভিজাতরাও একইভাবে নিজেদের তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। এই শহরে তারা অপরিমিত অর্থ রোজগার করেছেন এবং এমন আইন অর্জন করেছেন যার মাধ্যমে তারা বিপুল বিশাল গ্রাম্য সম্পদ আর শহুরে ঔপনিবেশিক প্রশাসনের সুবিধের জন্যে খোলা পেশাদারি সঙ্গঠন – দপ্তর, বিদ্যালয়, বিচারালয়, এবং অন্যান্য পেশাদার সঙ্গঠনের ওপর নিয়ন্ত্রণ কব্জা করতে পারেন। এটা আজ পরিষ্কার যে ইংরেজি ভাষার ওপর দখল নব্য কলকাতায় স্বচ্ছলতার প্রাথমিক শর্ত –ইংরেজি না জানলেও চাকরি পাওয়া হয়ত যাবে, কিন্তু তা বেঁচে থাকার জন্যে যথেষ্ট নয়(People ignorant of English no doubt got berths, but berths to which only paltry salaries were attached)। উনবিংশ শতাব্দের প্রথম দশকেই দেশিয় এবং ইওরোপিয় ব্যক্তিগত উদ্যমে কলকাতায় একের পর এক ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় গজিয়ে উঠছিল। এই ধরণের বিদ্যালয়গুলিতে সর্বপ্রথম ইংরেজি ও ইংরেজি মাধ্যমে পড়েন রাধাকান্ত দেব, রামকমল সেন, দ্বারকানাথ ঠাকুর ইত্যাদি।
হিন্দু কলেজের পাঠ্যসূচী থেকে পরিষ্কার, অন্যগুলির মত এটি শুধুমাত্র ইংরেজি শিক্ষার বিদ্যালয় ছিল না। কলকাতার বৃদ্ধির হারের সঙ্গে তালমিলিয়ে শিক্ষার কেন্দ্রগুলি আর প্রশাসনিক প্রাতিষ্ঠানগুলি তৈরি হচ্ছিল, যা ১৮১০ সালের আগে তৈরি হওয়া সম্ভব ছিল না, কারণ নব্য ঔপনিবেশিক সমাজে সে প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে যে জ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রয়োজন ছিল তা ভদ্রলোকেরা তার আগে করে উঠতে পারেন নি। ভদ্রলোকেরা যেহেতু সামাজিকভাবে উপনিবেশের সঙ্গে থেকে সুবিধেপ্রাপ্ত হয়েছে, স্বচ্ছল এবং ক্ষমতাশালী হয়েছে, এখন তাদের সময় এসেছে সামাজিক জ্ঞান, সামাজিক প্রযুক্তি, সামাজিক প্রজ্ঞাকে কর্পোরেট লুঠেরা আকার দিয়ে প্রমিতিকরণ করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় রূপান্তরকরণ করার। বিদ্যালয়গুলি নব্য ক্ষমতার পকড় রাখা আর সামাজিক সিঁড়িতে ওঠার হাতিয়ার হয়ে উঠছে। ১০০ বছর পরে সাইমন কমিশন মন্তব্য করবে, ভদ্রলোক সমাজের ঢোকার একমাত্র রাস্তা বিদ্যালয়গুলি(The school is the one gate to the society of the Bhadralok)।
নতুন ব্যবস্থাপনাযুক্ত জ্ঞান অর্জনের প্রতি অভিজাত ভদ্রলোকেদের আগ্রহ বাড়ল। সাধারণভাবে আমরা ইওরোপিয় জ্ঞানব্যবস্থা পশ্চিমের বাইরে বিকিরত হওয়ার যে তত্ত্ব শুনে আসছি, বাংলায় এসে দেখা গেল সেই তত্ত্ব কাজ করছে না। এখানে পশ্চিমি জ্ঞানের চারা তৈরি করে লাগাতে হচ্ছে। ফলে পশ্চিমি জ্ঞানচর্চার বিকিরণের নিস্ক্রিয়তার তত্ত্ব কলকাতায় একে দেখাগেল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা দেখব ইওরপিয়রা ভারতে এসে যে ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছিল, বা ব্রিটেনেও যে ধরণের জ্ঞানচর্চার ধারা ছিল, সেই তুলনায় হিন্দু কলেজের পাঠ্যক্রম যথেষ্ট ব্যতিক্রমী।
নতুন ব্যবস্থাপনাযুক্ত জ্ঞান অর্জনের প্রতি অভিজাত ভদ্রলোকেদের আগ্রহ বাড়ল। সাধারণভাবে আমরা ইওরোপিয় জ্ঞানব্যবস্থা পশ্চিমের বাইরে বিকিরত হওয়ার যে তত্ত্ব শুনে আসছি, বাংলায় এসে দেখা গেল সেই তত্ত্ব কাজ করছে না। এখানে পশ্চিমি জ্ঞানের চারা তৈরি করে লাগাতে হচ্ছে। ফলে পশ্চিমি জ্ঞানচর্চার বিকিরণের নিস্ক্রিয়তার তত্ত্ব কলকাতায় একে দেখাগেল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা দেখব ইওরপিয়রা ভারতে এসে যে ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছিল, বা ব্রিটেনেও যে ধরণের জ্ঞানচর্চার ধারা ছিল, সেই তুলনায় হিন্দু কলেজের পাঠ্যক্রম যথেষ্ট ব্যতিক্রমী।
কপিল রাজএর রিলোকেটিং মডার্ন সায়েন্স – সার্কুলেশন অব কন্সট্রাকশন অব নলেজ ইন সাউথ এশিয়া ১৬৫০-১৯০০ের অনুবাদ ১৬৭ পৃ
No comments:
Post a Comment