রাজেশ কোছার
এই দমন কাজকে তাত্ত্বিকভাবে ন্যায্যতা প্রতিপাদনের নামই হল প্রাচ্যবাদ। এডওয়ার্ড সঈদের অসাধারণ তাত্ত্বিক অবস্থানকে আঞ্চলিকতায় টেনে এনে আমরা বলতে পারি orientalism as an ideological and operational paradigm consciously created by the west to define and describe the east in such a manner as to facilitate and justify its control by the west। বিশ্বকে পূর্ব ও পশ্চিম, এই দুইভাগে ভাগ করে মানে করাই হল প্রাচ্যবাদের প্রথম তাত্ত্বিক সফলতা। প্রাচ্যবাদ একদেহী নয়। পূর্ব দেশগুলির বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় চরিত্র অনুসারে, এবং ইওরোপের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে মেলার তারতম্যে সে বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছে।
হিন্দি এবং অন্যান্য দেশিয় ভাষায় ইওরপিয়দের নাম হল ফিরঙ্গি যা ফ্রাঙ্ক শব্দ থেকে উদ্ভুত। কিন্তু ফ্রান্সই বা ইয়োরোপের প্রতিনিধি হল কেন? ফিরঙ্গি শব্দটা ভারতে এসেছে মুসলমানেদের সঙ্গে যারা আদতে ইওরোপকে চিনত ধর্মযুদ্ধের মাধ্যমে, এবং সেখানে যৌথভাবে ইওরোপকে ফ্রাঙ্ক বলা হত(আরেকটা তথ্য রাজেশ এখানে বলেন নি, সেটা হল ক্রুসেড কিন্তু শুরু করে ফ্রান্সই – এবং আমাদেরর ধারণা সেই জন্যেই মধ্যপ্রাচ্যের মানুষেরা ইওরোপিয় বলতে ফ্রাঙ্কই বুঝতেন)। এই সূত্র থেকে আমরা দুটি বিন্দুতে পৌঁছই, প্রথমত ইওরপিয় আর মুসলমান সমাজের মধ্যে আদানপ্রদানের সূত্রই হল অতীতের সঙ্ঘর্ষর স্মৃতি। দ্বিতীয়টি হল উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে কিন্তু ইওরোপিয়দের তেমন কোন সঙ্ঘর্ষ ঘটে নি এবং ইওরোপিয়দের নিয়ে তাদের পুরোনো কোন ধারণাই ছিল না, এবং উপনিবেশের তাত্ত্বিকদের ইন্দো-ইওরোপিয়তার আবিষ্কারের সুবাদে হিন্দুরা নিজেদের ইওরপিয়দের সঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে নেয়। প্রাচ্যবাদ মুসলমান বিশ্বের সাথে তত্ত্ব হিসেবে সাঙ্ঘর্ষিক ভূমিকা পালন করেছে। ভারতে আবার উল্টোটা - প্রাচ্যবাদ সম্মোহনী এবং প্ররোচক ভূমিকা গ্রহণ করে। ভারতীয় উচ্চবর্ণিক প্রাচ্যবাদকে ভারত এবং ইওরোপে স্থাপিত এশিয়াটিক সোসাইটি জাতীয় সঙ্গঠনের গবেষণাগারে উদ্ভুত ইঙ্গ-ইওরোপিয় মতবাদ হিসেবে আত্মিকভাবে লালনপালন করেছে আর মান্যতা দিয়েছে।
বিজ্ঞানের ব্রাহ্মনীকরণ
যতই কূতাভাষিক মনে হোক, এটা সত্য যে ভারতের (উচ্চবর্ণ) ব্রিটিশ শাসন আসতে আসতে মেনে নেওয়ার মধ্যে থেকেই কিন্তু ব্রিটিশদের থেকে মুক্তির পথ উন্মুক্ত করেছে। ১৮২৩ সালের ডিসেম্বরে পলাশী-পরবর্তীকালএ উদ্ভুত মধ্যবিত্তদের প্রতিনিধি, রামমোহন রায় গভর্নর জেনারেলকে একটি স্মারকলিপি লিখে পড়ুয়াদের সংস্কৃত পদ্ধতিতে না পড়িয়ে ইংরেজি মাধ্যম এবং ব্যবস্থায় পড়াবার পদ্ধতি প্রবর্তন করতে অনুরোধ করেন। তাঁর যুক্তি ছিল দেশিয় মানুষদের উন্নতির জন্যে তুলনামূলকভাবে মুক্তচিন্তার এবং নবজাগরনীয় পদ্ধতিতে অঙ্ক, প্রাকৃতিক দর্শন, রসায়ন এবং দেহতত্ত্বর সঙ্গে আরও হাজারো উপযোগীবিদ্যা শিক্ষিত, ভদ্রলোক, প্রতিভাধর, শিক্ষিত ইওরোপিয়দের মাধ্যমে শেখানো প্রয়োজন। তাঁর স্মারকলিপিটির কোন উত্তর আসে নি শাসকদের থেকে। বারো বছর পর এই সূত্র ধরে টমাস ব্যাবিংটন মেকলে নামক এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক তার প্রস্তাবে সংস্কৃতকে স্থানচ্যুত করে(এটা সম্পূর্ণভাবে ঠিক বলেন নি রাজেশ, উইলিয়াম এডামের শিক্ষা সমীক্ষা দেখলেই বোঝা যাবে যে গ্রামে গঞ্জে যে বিকেন্দ্রিভূত বিপুল সংখ্যক পাঠশালা চলত সেগুলির মাধ্যম শুধুই সংস্কৃত ছিল না) দেশিয়দের জন্যে ইংরেজি মাধ্যম পড়াশোনার ব্যবস্থা শুরু করার নির্দেশ দেন।
যতই কূতাভাষিক মনে হোক, এটা সত্য যে ভারতের (উচ্চবর্ণ) ব্রিটিশ শাসন আসতে আসতে মেনে নেওয়ার মধ্যে থেকেই কিন্তু ব্রিটিশদের থেকে মুক্তির পথ উন্মুক্ত করেছে। ১৮২৩ সালের ডিসেম্বরে পলাশী-পরবর্তীকালএ উদ্ভুত মধ্যবিত্তদের প্রতিনিধি, রামমোহন রায় গভর্নর জেনারেলকে একটি স্মারকলিপি লিখে পড়ুয়াদের সংস্কৃত পদ্ধতিতে না পড়িয়ে ইংরেজি মাধ্যম এবং ব্যবস্থায় পড়াবার পদ্ধতি প্রবর্তন করতে অনুরোধ করেন। তাঁর যুক্তি ছিল দেশিয় মানুষদের উন্নতির জন্যে তুলনামূলকভাবে মুক্তচিন্তার এবং নবজাগরনীয় পদ্ধতিতে অঙ্ক, প্রাকৃতিক দর্শন, রসায়ন এবং দেহতত্ত্বর সঙ্গে আরও হাজারো উপযোগীবিদ্যা শিক্ষিত, ভদ্রলোক, প্রতিভাধর, শিক্ষিত ইওরোপিয়দের মাধ্যমে শেখানো প্রয়োজন। তাঁর স্মারকলিপিটির কোন উত্তর আসে নি শাসকদের থেকে। বারো বছর পর এই সূত্র ধরে টমাস ব্যাবিংটন মেকলে নামক এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক তার প্রস্তাবে সংস্কৃতকে স্থানচ্যুত করে(এটা সম্পূর্ণভাবে ঠিক বলেন নি রাজেশ, উইলিয়াম এডামের শিক্ষা সমীক্ষা দেখলেই বোঝা যাবে যে গ্রামে গঞ্জে যে বিকেন্দ্রিভূত বিপুল সংখ্যক পাঠশালা চলত সেগুলির মাধ্যম শুধুই সংস্কৃত ছিল না) দেশিয়দের জন্যে ইংরেজি মাধ্যম পড়াশোনার ব্যবস্থা শুরু করার নির্দেশ দেন।
১৮১৭ সালে বিদ্যালয় হিসেবে শুরু হওয়া হিন্দু কালেজের স্থাপন ঘটল সম্ভ্রান্ত বংশের শিশুদের পড়ানোর জন্যে। এই কাজের জন্যে ভদ্রলোকেরা বেছে নিলেন ঘড়ি আর রূপো মিস্ত্রি স্কট দেশিয় ডেভিড হেয়ারকে। সেই বিদ্যালয়, যেটি পরে হেয়ার স্কুল নাম হবে, সেখানে গরীব ঘরের ছাত্রদের বিনামূল্যে পড়িয়ে তিনি হিন্দু কলেজের উপযোগী করে তুলতেন ছাত্রদের। পরস্পরকে Boreahs ডাকত ছাত্ররা, these pupils invariably proved the most distinguished and ... carried almost all the honours’, turning the college into ‘a mighty instrument for improving and elevating the Hindoos।
এখানে একজন Boreahs হলেন মহেন্দ্রলাল সরকার হিন্দু কলেজ থেকে মেডিক্যাল কলেজে গেলেন। এলোপ্যাথি থেকে হোমিওপ্যাথি ডাক্তারি করা মহেন্দ্রলাল ভারতীয় মধ্যবিত্তের যৌথ স্মৃতির মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানের বীজটি বপন করে দেওয়ার উদ্যম নিয়ে বহু চেষ্টায় ইন্ডিয়ান এসসিয়েশন ফর কালটিভেশন অব সায়েন্স কলকাতায় ১৮৭৬ সালে গঠন করেন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীওয়ালা ইন্ডিয়ান এসোসিয়েসনের সাথী সংগঠন হিসেবে, যা পরে জাতীয় কংগ্রসের উদ্গাতা হিসেবে কাজ করবে।
রাজেশ কোছারের Science and domination: India before and after independence প্রবন্ধ থেকে
No comments:
Post a Comment