রাহুল সংকৃত্যায়ন বলছেন সরহ মতাদর্শগতভাবে বিপ্লবী। তাঁর গানে সব রকম ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে তীব্র শ্লেষই তার চরম প্রমান।
সরহর গান বা দোঁহা
হতভাগারা যোগীদের নিয়ে পরিহাস করে;
বলে ওরা বিষাক্ত সাপের মত,
দেখামাত্র ভয়ে পালাও।
ব্রাহ্মণেরা আসলে কিন্তু ভেড়ুয়া(অজ্ঞ, বোকা),
ওরা অর্থহীন চতুর্বেদ আওড়ায়।
মাটি, জল আর কুশ নিয়ে ওরা
বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ে।
ঘরে বসে হোম করার নামে
কাঠ পুড়িয়ে সেই ধোঁয়ায়
শুধু জ্বালা ধরায় নিজের চোখে।
রকমারি কাঠের ডাণদা ধরে
ওরা একদণ্ডী, ত্রিদণ্ডীর আজব বেশে
জ্ঞানীর ভাণ করে -
যেন তারা পরমহংস।
অথচ ধর্ম ও অধর্মের তফাত
কোনটাই তারা জানে না।
মিথ্যা কথা বলে শুধু
মানুষকে ঠকায়।
ঈশ্বরবাদী যারা তারা গায়ে ছাই মাখে,
মাথায় জতা বাঁধে, ঘরের কোণে বসে
প্রদীপ জ্বালায় আর
ঘণ্টা বাজায়।
জোড়াসনে বসে তারা চোখ বুঁজে
রণ্ডিমুণ্ডি আর রকমারি বেশের লোকেদের
ফুসফুস করে কানে মন্ত্র পড়ে।
গুরুদক্ষিণা -
এইভাবেই ঠকায় লোক।
ক্ষণপকদের(জৈন?) লম্বা লম্বা নখ
নোংরা শরীরে দুর্গন্ধ,
বিবিস্ত্র, আর চুলে জট,
ভাণ করে আত্মমুক্তির আর
লোক ঠকায় ভুল পথের নির্দেশ দিয়ে।
নগ্ন থাকলেই যদি মুক্তি পাওয়া যায়
তাহলে শেয়াল কুকুররাইবা
তা পাবে না কেন?
লোম উৎপাটনেই মোক্ষ হয়
তাহলে যুবতীর নগ্ন নিতম্বই বা
বাদ যাবে কেন?
পুচ্ছ ধারণ(জৈনদের চামর দোলানো) করল্রি যদি
মোক্ষ হয়
ময়ূর ও চামরী গাভীর বা
মুক্তি নয় কেন?
উচ্ছিষ্ট(দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলে?)
যদি মুক্তি হয়
তাহলে মুক্তি পাবে না কেন
হাতি ঘোড়ারা?
সরহ বলে, ক্ষপণকদের মোক্ষ
আমার ধারণার আগম্যসত্যকে জনে না তারা
আর সেই অজ্ঞতাতেই
নিপীড়ন করে দেহকে।
স্থবিরের উপদেশে প্রবজ্যাগ্রহণকেই
সর্বোত্তম বলে প্রচার করে
শ্রমণ আর ভিক্ষুরা;
সূত্রপাঠ করে, এদের
কেউ কেউ বা সাস্ত্র বচনে
শুধু উত্যক্ত করে নিজের মন।
অন্যরা মহাযানের রথে দৌড়য়
আর বলে
তাদের শাস্ত্রই শ্রেষ্ঠ।
কেউ বা ধ্যান করে মণ্ডলচক্রের
চতুঃ-তত্ত্বের ব্যাখ্যা করে অন্যরা।
সূত্রঃ চুরাশি সিদ্ধর কাহিনী, অলকা চট্টোপাধ্যায়
No comments:
Post a Comment