Saturday, September 2, 2017

চুরাশি সিদ্ধর কাহিনী - যোগীদের কথা

ডাকিনী ছাড়াও সিদ্ধদের গুরু ছিলেন যোগীরা। লীলাপা সিদ্ধদের তালিকায় দ্বিতীয়। তিনি একটা কাহিনী বলছেন,

দক্ষিণ ভারতের এক রাজা এক সময়ে সিংহাসনে বসেছিলেন। ভিনদেশি এক যোগী তার কাছে এলেন। তাঁকে দেখে রাজা বললেন 'দেশে দেশে ব্রমণ করে আপনি ক্লিষ্ট হয়েছেন।'
'আমি কিছু কষ্ট ভোগ করছি না, কিন্তু আপনি নিজেই ক্লিষ্ট। রাজ্য হারাবার ভয়ে, প্রজাদের অসন্তোষের আশংকায় আপনি সর্বদা বিব্রত। আমি আগুণে লাফিয়ে পড়লেও পুড়ব না, বিষ খেলেও মরব না। রসায়নে সিদ্ধি আমার আছে।' তাঁর কথা শুনে রাজার শ্রদ্ধা হল।

শুধু লীলাপাই নন চুরাশি জনের মধ্যে একত্রিশ জনকেই যোগীরা সিদ্ধ করেছেন। কারা এই যোগী? এরা কোন বাঁধা পথের পথিক নন। কখন যে কোথায় এরা হাজির হচ্ছেন তা বোঝা মুশকিল। ভদ্রসমাজের বাইরে ছায়ার মত এঁদের গতিবিধি। শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত এরা নন। বৌদ্ধ, জৈন, শৈব, ব্রাহ্মণ - কোন ধর্মেতেই এদের ফেলা যাবে না। নিষিদ্ধ মদ্য, মাংস, মৈথুন - কোন কিছুতেই এদের বিরাগ নেই।

ধনী ব্রাহ্মণ গৃহস্থ আর ভদ্রপার কাহিনী
মণিধর নামে এক ধনী ব্রাহ্মণ অসংখ্য অনুচর সহ ভোগসুখে বাস করত।
একদিন অনুচরেরা স্নান করতে গেল আর তিনি গৃহেই ছিলেন। এমন সময় এক যোগী এসে তার কাছে আহার চাইলেন।
ব্রাহ্মণ তুমি আশুচি, আমার গৃহ অপবিত্রে করবে না, চলে যাও এখান থেকে। আমার অনুচর অ অন্যান্যরাও পছন্দ করবে না, চলে যাও।
যোগীঃ অশুচি কাকে বলে?
ব্রাহ্মণঃ যাদের দেহ অস্নাত, বসনহীন, নরকপালধারী... যাতা অপবিত্র খাদ্য খায়, নীচকুলের যারা, তারাই অশুচি। শীঘ্র অন্যত্র যাও।
পরে কিন্তু ব্রাহ্মণের শ্রদ্ধা হল।
তিনি বললেন আমি এখানে ধর্ম শ্রবণ করি তাহলে আমার অনুচর ও অন্যান্যরাও আমার উপর বিরক্ত হবে। আপনি যেখানে থাকেন সেখানে যাব। কোথায় আপনি থাকেন?
যোগীঃ আমি থাকি শ্মশানে। মদ ও শুকর মাংস নিয়ে সেখানে এস।
ব্রাহ্মণঃ আমি ব্রাহ্মণ মদ ও শূকর মাংসের নাম উচ্চারণ করাও আমার অনুচিত, কী করে আমি তা নিয়ে যাব?
যোগীঃ উপদেশ যদি চাও তাহলে এগুলি নিয়ে আসবে।
ছদ্মবেশে বাজারে গিয়ে ব্রাহ্মণ বাজারে গিয়ে মদ ও শূকর মাংস কিনলেন আর শ্মশানে গিয়ে যোগীকে সেগুলি পরিবেশন করলেন। যোগী কিছুটা নিজে খেলেন, বাকিটা ব্রাহ্মণকে খেতে দিলেন। তারপর তাঁর জাতের অহংকার দূর করার জন্য ব্রাহ্মণকে ঝাড়ুদারের কাজে লাগালেন।

কারা এই সিদ্ধ
সমাজের বাইরে লোকালয় থেকে দূরে বাস করতেন এই অজ্ঞাতপরিচয় যোগীরা। সংসারী মানুষের কাছে অস্পৃশ্য অথচ রাজা-রানী, রাজপুত্র-রাজকন্যা, ব্রাহ্মণ মন্ত্রী তত্ত্বজ্ঞ পণ্ডিত, ধনী গৃহস্থ, চাষভুষো পর্যন্ত এদের গুরু মেনছেন। এরা কারা?

বহু পণ্ডিত তাঁদের মত করে ব্যখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু তিব্বতী ভাষায় (চুরাশীতি-সিদ্ধ-প্রবৃত্তি)) কোন বাগাড়ম্বর না করে সোজাসুজি বলা হয়েছে ডুপথোব অর্থাৎ সিদ্ধ বা সিদ্ধিলাভ করে যারা। এই প্রসঙ্গে যে ওষ্ট সিদ্ধির তালিকা পাই - খডগ, অঞ্জন, পাদলেপ, অন্তর্ধান, রসরসায়ন, খেচর, ভূচর, পাতাল সিদ্ধি।

সূত্রঃ চুরাশি সিদ্ধর কাহিনী, অলকা চট্টোপাধ্যায়

No comments: