এনকাউন্টারিং
ডেভেলাপমেন্টঃ দ্য মেকিং এন্ড আন্মেকিং অব দ্য থার্ড ওয়ার্লডঃ আর্তুরো এসকোবারএর
বই থেকে
যদিও ভাবা যে সব
লব্জ ব্যবহার করেছেন তার অধিকাংশই উপনিবেশিক প্রতর্কে বিশেষভাবে প্রযোজ্য, কিন্তু
উপনিবেশ নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি উন্নয়নের পরিসর একই ধরণের মানুষেরাই নিয়ন্ত্রণ
করে থাকেন, যারা এমন এক গুরুত্বপূর্ন প্রয়োগযোগ্য ব্যবস্থা(এপারেটাস) তৈরি করেছেন,
যা নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক জ্ঞান তৈরি করে, তার তৃতীয় বিশ্বের জ্ঞান-গ্রহীতার ওপরে
কর্তৃত্ব করতে সাহায্য করে। এই ব্যবস্থা মোটামুটি ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৫এর ব্যপ্তিতে বিকশিত
হয়েছিল, এবং তখন থেকেই পর্যায়ক্রমে তৃতীয় বিশ্বেকে শাসন করতে নতুন ধরণের জ্ঞান,
ক্ষমতা, নতুন প্রথা (প্রাক্টিসেস) বিকাশে দুর্মর প্রয়াস করে চলেছে। এককথায় বলতে
গেলে পশ্চিম তৃতীয় বিশ্বের ওপরে নতুন ধরণের সরকার চাপিয়ে দিয়েছে; যাতে মানুষকে
নির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণের পরিসর(স্পেস) তৈরি করা যায়।
এই ব্যবস্থা একটি
ভূরাজনৈতিক ব্যবস্থা বিষয়ক ধারণা, সঈদের ভাষায় আ সিরিজ অব ইমাজিনেটিভ জিওগ্রাফিজ।
উন্নয়নের প্রতর্কতে অবশ্যই একটা আবশ্যিক অলীক ভৌগোলিক কল্পনা তৈরি করা হয়, যা
উন্নয়নের ধারনাকে গত চার দশক(এসকোবার বইটা লিখছেন নয়ের দশকের মাঝে - অনুবাদক) গঠন
করেছে। কেউ কেউ(স্ল্যাটার) বলছেন স্থানিক ক্ষমতার (স্পেশিয়াল পাওয়ার) বিকাশ আসলে উন্নয়নের
একটি আবশ্যিক শর্ত। এবং প্রথম এবং তৃতীয় বিশ্ব, উত্তর দক্ষিণ, কেন্দ্র এবং প্রান্ত
এই লব্জগুলোতেই তাদের ভাবনার চরিত্রায়ণের চিত্র পরিষ্কার হয়ে যায়। উৎপাদনের
সামাজিকতার বহর এই লব্জগুলির উৎপাদন ব্যবস্থার পার্থক্য, সামাজিক ব্যবস্থা থেকে
পরিষ্কার হয়ে যায়। এই ভূরাজনৈতিক ব্যবস্থায় নানান সব সংশোধনী ব্যবস্থা নেওয়া হল -
যেমন বিশ্বের কেন্দ্রিভবন, দ্বিতীয় বিশ্বের অবলুপ্তি, বিশ্বআয়নের শহরগুলির মধ্যে
আন্তঃযোগাযোগ বাড়া, কৃষ্টিগত উৎপাদনে বিশ্বায়নের প্রভাব ইত্যাদিকে ব্যবহার করা হল
চূড়ান্ত সৃষ্টিশীল ক্ষমতা কেন্দ্রিকতার মাধ্যমে।
এক কথায় বলতে গেলে
আমি উন্নয়নের ধারনাকে অদ্বিতিয় অভিজ্ঞতার ভাবনা হিসেবে তার সৃষ্টি, তার ভাবনা এবং
কর্মপদ্ধতির সমালোচনা যেতে চাইছি, তার চরিত্র এবং যে তিনটি অক্ষ এটিকে সংজ্ঞায়িত
করে তাদের আন্তঃসম্পর্কের বিশ্লেষণ আলোচনায় আনার চেষ্টা করছি – ক) উন্নয়ন
সম্পর্কিত জ্ঞানের স্বরূপ, এবং যে জ্ঞান ভিত্তি করে এটি বাস্তবে প্রতিভাত হয় এবং
গ্রহীতাদের বিশ্লেষণ, ধারনা, তত্ত্ব ইত্যাদি রূপায়িত করে; খ) ক্ষমতার ব্যবস্থা যা
এর নীতিগুলি নিয়ন্ত্রণ করে; গ) উন্নয়ন আলোচনায় বস্তুতান্ত্রিকতার স্বরূপ চাপিয়ে
দেওয়া হয়, যার বলে জনগণ নিজেদের চিহ্নিত করে আদতে তারা উন্নত না অনুন্নত। এই অক্ষগুলির
চারদিকে যে সব বিন্যাস খেলা করে, তারাই উন্নয়নকে একটি জ্ঞানচর্চামূলক প্রতর্কে
পরিণত করেছে এবং বেশ কিছু কার্যকর ব্যবস্থা বিকাশ করেছে, যা নির্দিষ্ট পদ্ধতি
অনুসারে কিছু জ্ঞানের বিন্যাসের সঙ্গে এবং ক্ষমতার কারিগরিকে জুড়েছে।
এই বিশ্লেষণটি
জ্ঞানচর্চার প্রণালী(রেজিমস অব ডিসকোর্স) বর্ণনা আর তার প্রতিনিধিত্ব আলোচনা করবে।
প্রতিনিধিত্বের প্রণালী(রেজিমস অব রিপ্রেজেন্টেশন) আলোচনা করা যাবে মোকাবিলার পথে
যেখানে পরিচিতি তৈরি হয় এবং যেখানে হিংসার উদ্ভব এবং প্রতীকিকরণ ঘটে এবং সেটি
ব্যবস্থাপিত হয়। এই কার্যকর হাইপথিসিসটি বিকাশ করেছেন এক কলম্বিয়ার গবেষক, উনবিংশ
শতে তার দেশে ব্যাপক হিংসা কর্মের বর্ণনায়। সে কাজে তিনি সাহায্য নিয়েছেন বাখতিন,
ফুকো এবং জিরার্ডের। তিনি অতীতের ভাষার মোকাবিলার বাইরে দাঁড়িয়ে(যেমন সভ্যদের ভাষা
এবংত বর্বরদের ভাষা) তিনি প্রতিনিধিত্বের প্রণালীর ধারণাটি, ভেতরের বাইরের ভাষা,
আত্ম এবং অন্যান্যদের ভাষার ধারণাটি বর্ণনা করলেন(রোজাস ডি ফেরো, ১৯৯৪)। এই একই
ধরণের মোকাবিলা বিংশ শতের চল্লিশের দশকের শেষের দিকে ঘটেছিল উন্নয়নের ধারণা আসার
পরে যার সঙ্গে জুড়েছিল আধুনিক কিছু হিংসাত্মকতা৬।
রেজিমস অব
রিপ্রেজেন্টেশনের তাত্ত্বিক ধারণাটি দিয়ে আমরা তৃতীয় বিশ্ব তৈরির ধারণাটার
প্রক্রিয়া এবং তার ফলাফল আলোচনা করতে পারি। উন্নয়নের প্রতর্কের উদ্বৃত্ত হিসেবে
তৃতীয় বিশ্বের রেজিমস অব রিপ্রেজেন্টেশনের তালিকা তৈরি করে আমরা জ্ঞান এবং ক্ষমতার
মানচিত্র তৈরি করতে পারি যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কে বর্ণনা/সংজ্ঞায়িত
করতে পারে। চন্দ্রা মোহান্ত বলছেন এটা আসলে লড়ায়ের মানচিত্রনির্মানবিদ্যা। যদিও
সেই মানচিত্রগুলি তৃতীয় বিশ্বের মানুষের অভিজ্ঞতা বোঝার জন্য তৈরি হয়েছিল কিন্তু
পরোক্ষে আমরা মানুষের লড়ায়ের শ্রেণীবিভাগগুলি আন্দাজ করতে পারি।
No comments:
Post a Comment