সুন্দরবনের রাজস্ব
হেঙ্কেল আবাদ বাড়ানোর জন্য তিনটে বড় বাজার বা মার্ট বা গঞ্জ তৈরি করেছিলেন যার একটা ২৪ পরগণার কালিন্দি তীরে হেঙ্কেলগঞ্জ বা হিঙ্গলগঞ্জ বা বাঙ্গালপাড়া নামে আজও টিকে আছে। হেঙ্কেল সাহেবের আদেশ ছিল বাঁশ পুতে সীমা নির্ধারণ করা। হেঙ্কেল তার রায়তদের কম রাজস্ব বন্দোবস্ত করলেন। ফলে মহম্মদ স্বামী, রাজবল্লভ রায় বা জন এলয়াসের মত সুন্দরবনের জমিদার এই জমিগুলি লাঠিয়াল দিয়ে দখল করে নিল। নবোবদের অত্যাচারে কোম্পানি তার চাহিদামত রাজস্ব পাচ্ছিল না।
১৮১১-১৪তে নানান বিপজ্জনক ঘটনার মধ্যে দিয়ে ২৪ পরগণার সুন্দরবনের জরিপ শেষ করেন লেফটানেন্ট মরিসন। সমুদ্রের দিকে তিনি এগোতে পারেন নি। সমুদ্রের অংশটুকুর জরিপ শেষ করলেন ব্লেন সাহেব। এতদিনে কোম্পানির কাছে সুন্দরবন লুঠ করার পরিকল্পনার জন্য জমির একটা হিসেব বেরোল।
নবোব জমিদারেরা পতিতাবাদএর জমিগুলোর ওপর সরকারের দখল নিয়ে বিতর্ক শুরু করল আজকের খুলনা (সেদিনের যশোর) রক কোলব্রুক কোম্পানি ১৮১৪তে সুন্দরবনের জমি বিলির ব্যাপারে কোম্পানিকে একটা সমীক্ষা পেশ করলে গভর্নর সেটি অনুমোদন করে। ঠিক হল প্রকৃত জরিপের পর তদন্তে জমিদারদের মৌজার মধ্যে যে সুন্দরবনের তালুক অধিকার করে নিয়েছে সেগুলি কেড়ে নিয়ে পুনর্বহাল হরতে হবে।
এইজন্য সুন্দরবনের জন্য রাজস্ব কমিশনার নিযুক্ত হলেন স্কট। তিনি চিংড়ি ক্রিক থেকে হেতেড়া, সাহাপুর খাড়ি দিকে মেপে চললেন। ১৮১৬য় তিনি ১১টি পরগণার ১২২টি তালুকের সন্ধান দিলেন। ১৮১৭তে আরও কিছু জমি বেরোল যা থেকে সরকার খাজনা পায় না। এই নিয়ে আপত্তি উঠল জমিদারদের পক্ষ থেকে। সরকার ১৮১৭, ১৮১৯এ দুটী আইন করল।
১৮২১এ এলেন নতুন কমিশনার ডেল। সার্ভেয়ার হলেন এনসাইন প্রিন্সেপ। ডেল অরুণ নগর, ফিঙা, টোনা, দোসরভগবানপুর, কিষ্টপুর, ঘোলা প্রভৃতি ২৬টা তালুক জরিপ করেন। প্রিন্সেপ ১৮২২এ চাষের হিসেব তৈরি করেন। ডেল রাজারামপুর, মুলাদাঁড়ি, কোলদাঁড়ি প্রভৃতি আরও ২২টা তালিকের জরিপ শেষ করেন। দেখা গেল যে চাষের জমি ধরে রাজস্ব তৈরি হয়েছিল, চাষের জমি বেড়ে গিয়েছে। রাজস্ব বাড়ানোর প্রশ্নে আবার বিতর্ক মাথা চাড়া দিল।
No comments:
Post a Comment