খাড়ির রাজস্ব
উপনিবেশে ১৮৪৬-৫২তে জেলার রাজস্ব জরিপ করেন ক্যাপ্টেন আর স্মিথ। তাঁর সমীক্ষায় পাচ্ছি, খাড়ির দক্ষিণ জঙ্গলসমাবৃত এবং জঙ্গলের মধ্যে প্রাচীন মন্দির প্রাসাদ ইত্যাদির ধ্বংসাবশেষ, মজা পুকুর, গৃহস্থালীর নানান তৈজস, দেবমূর্তি ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক দশক আগে আদগঙ্গার মজাখালে স্টেট রিলিফের কাজ করতে গিয়ে প্রাচীন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ, সোনার মুদ্রা ইত্যাদি পাওয়া গিয়েছে। বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটির গবেষনায় পাওয়া যাচ্ছে, খাড়ি খুঁড়ে দ্বাদশ শতের পাথরের জানালার ফ্রেম, অষ্টম শতের বিষ্ণুমূর্তি ইত্যাদি অস্তিত্বের কথা জানা যায়।
সুন্দরবনের জরিপের সংবাদের ঢোকার আগে রায়মঙ্গলে বর্ণিত দক্ষিণরায়ের কথা বলা দরকার। বড়খাঁ গাজি খাড়িতে আস্তানা গড়েন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দক্ষিণরায়। স্তনানীয় পল্লীগাথা আর রায়মঙ্গলে এই লড়ায়ের প্রচুর কাহিনী থেকে গিয়েছে। দক্ষিণরায় আজও ধপধপিতে বেঁচে আছেন তাঁর বীরত্বের জন্য। এছাড়াও দক্ষিণে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় তিনি পূজিত হন।
সুন্দরবনের জরিপ
ভাটি অর্থ নিচুজমি, যা জোয়ারের জলে ভরে যায় আম্বার ভাটার টানে ভেসে ওঠে। খুলনা বা বরিশাইল্যারা আজও সুন্দরবনকে ভাটি বলেন। আইনিআকবরিতে সুন্দরবন আর ভাটি সমার্থকপ্রায়।
সুন্দরবনের এলাকা হল উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, খুলনা আর বাখরগঞ্জ। এ বাংলার সুন্দরবনের সীমান্ত বলতে পূর্বে কালিন্দি নদী পশ্চিমে হুগলি আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর আর বাকিটুকু বাংলাদেশে।
টোডরমল্লের জরিপে সুন্দরবনের কোন রাজস্ব ধরা হয় নি। সাতগাঁ সরকারের শেষ সীমা ছিল হেতেড়া বা হাতিয়াগড়, যেখানে পীর গোরাচাঁদের সঙ্গে রাবণের শালা আকানন্দ বাকানন্দর লড়াই হয়, চেকোবাণে পীর আহত হন। তারপরে অরণ্যময় সুন্দরবন। শাহসুজা বাংলার সীমানা সুন্দরবন পর্যন্ত বাড়িয়ে নিয়ে যান। ১৬৫৮তে সুন্দরবনের একাংশকে মুরাদখানা বা জোরাদখানা নাম দিয়ে আট হাজার চারশ চুয়ান্ন টাকা রাজস্ব ধার্য করেন। এটার বড় অংশ বাখরগঞ্জের অংশ ছিল। আকবরের সময় বাংলার শাসনকর্তা মুরাদ খাঁর নামে এই অঞ্চলের নাম হয়। এই প্রথম কোন সীমান্ত এলাকায় খাজনা ধার্য হল। কারণ মুঘল আমলে সীমান্ত এলাকাগুলির জমিদারিগুলিতে খাজনা ধার্য হত না।
মুর্শিদকুলিখাঁর রাজত্বে যে জরিপ হয় জমাইকামিল তুমার নামে, সেখানে সুন্দরবনের কোন রাজস্ব বেড়েছিল কি না তার কোন উল্লেখ নেই।
ব্রিটিশ দেওয়ানিতে ২৪ পরগণা পেল বটে কিন্তু ততদিনে সুন্দররন মগের মুলুকে পরিণত হয়েছে। তাদের লুঠেরা উদ্দেশ্যে রাজস্ব বাড়াতে সুন্দরবনের দিকে হাত বাড়াল। সুন্দরবনের অসীম সম্ভাবনা তারা আঁচ করতে পেরে বুঝল জঙ্গল কেটে আবাদ করলে সুন্দরবনে যে সোনা ফলবে।
১৭৮৩তে ওয়ারেন হেস্টিংসের সময় যশোরের(আজকের খুলনা, সে জেলা তৈরি হবে আরও একশ বছর পর) জজ টিলম্যান হেঙ্কেল রায়তদের থেকে বন্দোবস্ত করে সুন্দরবনে রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করতে লাগলেন। হেঙ্কেলের প্রস্তাব ছিল জমিগুলো সীমানা ও প্লট করে রায়তদের মধ্যে লিজ দেওয়া। প্রথম তিন বছর রাজস্ব মকুব, চতুর্থ বছরে বিঘা প্রতি দুআনা, পঞ্চম বছরে চার আনা, ষষ্ঠ বছরে ছ আনা, সপ্তম বছরে আট আনা ইত্যাদি। এই প্লটগুলি মূলত খুলনার মধ্যে, এগুলোর নাম হল হেঙ্কেলের তালুক।
No comments:
Post a Comment