তার বাল্য, যৌবন, প্রৌঢত্বের স্বপ্ন সব কিছুইও ইওরোপ ঘিরে
তাই জন্য বাংলার গ্রাম কৃষ্টি রক্ষায় ভদ্রদের এত তাচ্ছিল্য
Bhaswatiকে অনুরোধ করেছিলাম হরিহর মন্দিরের যে ছবিটা দিয়েছিল, সেটি এবং দক্ষিণের সুপ্রাচীন কাঠের অলঙ্কৃত বাড়িগুলি নিয়ে একটা ছোট প্রবন্ধ লেখার। আজও সেখানে সেই শিল্পীরা আছেন তাই সেগুলি সংরক্ষিত হয়, উদ্যমী মানুষজন আছেন, যারা সেই দেশিয় শিল্পকলা প্রযুক্তি সংরক্ষণ কাজে সম্পদ ব্যয় করেন। আমাদের অনুরোধে তিনি এই লেখাটি তাঁর দল AAKARএ লিখেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ।
স্বদেশি নিয়ে যখন আমরা ঠিক এর আগেই প্রবন্ধটা লিখছি, প্রশ্ন করছি স্বদেশি শিল্প আন্দোলন নামে যা চলছে তার কতটা স্বদেশি তাই নিয়ে, কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম, দক্ষিণের মানুষেরা কেন জানি আজও তাঁদের শেকড়ে দাঁড়িয়ে আছেন, নিজেদের সম্পদকে নিজেদের বলে ভাবতে ভালবাসেন এবং সেগুলি সংরক্ষণের কাজ হাতে কলমে করে দেখান।
নিচে তাঁর প্রবন্ধটি-
২০১৫ সালের জানুয়ারীতে কোচির ফোক-লোর মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম। ২০০৯ সালে তৈরী এই মিউজিয়ামটির অন্যতম আকর্ষণ এর স্থাপত্য বা গঠনশৈলী। এখানেই প্রথম খেয়াল করে দেখি কেরালার বাড়ি তৈরির প্রায় হাজার বছরের পুরোন এই রীতি কে।
কেরালার কোচির পর এই একই গঠন শৈলীর স্থাপত্যের দেখা পেলাম দিন কতক আগে উডুপি বেড়াতে গিয়ে। এখানেই মনিপালে ১৯৮৮ সালে শ্রী বিজয়কান্ত শ্যেনয় শতাব্দী প্রাচীন বাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপত্যগুলি কে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই তৈরী করেন “হস্তশিল্প হেরিটেজ ভিলেজ”। কেরালার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রায় ৮০০ বছরের পুরোন শাল কাঠের হরিহর মন্দির (এটি এখন শুধুই স্থাপত্য, কোন বিগ্রহ এখানে নেই) টি কে অবিকৃত অবস্থায় তুলে এনে এখানে সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হয় ১৯৯১ সালে।
উডুপির বিখ্যাত কৃষ্ণ মঠের মূল মন্দিরটিও এই একই রীতিতে তৈরী ।সাম্প্রতিক সংস্কারের কাজ হয়েছে এখানে। বুঝতে পারছিলাম না এটি কেরালার নিজস্ব গঠন রীতি অথবা কর্ণাটকের। স্থানীয় মানুষদের সাথে কথা বলে জানলাম, পশ্চিমে আরব সাগর আর পূর্বে পশ্চিমঘাট পর্বতের মাঝখানের এই উপকূল অঞ্চল আদপে কোঙ্কণ উপকূল। আলাদা আলাদা রাজ্য হলেও এই উপকূলের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি তে বেশ মিল রয়েছে।
স্থাপত্যের এই বিশেষ রীতির মূল বৈশিষ্ট্য জানালার গঠন। বছরে দুটো ঘন বর্ষা আর গরম মোকাবিলার জন্য কাঠের তৈরী ঘরের এক দেওয়াল থেকে অন্য দেওয়াল পর্যন্ত টানা এই জানালাগুলিতে কোন পাল্লা থাকেনা। কিন্তু কারিগরি নিখুঁত মাপ আর গঠনশৈলীর জন্য জানালা দিয়ে ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ঢুকতে পারলেও বৃষ্টির জল ঢুকতে পারেনা, তাই ঘরগুলি বসবাসের জন্য আরামদায়ক।
প্রয়োজন, নিজেদের শিকড়ের প্রতি টান আর পরম্পরার প্রতি শ্রদ্ধা আজ প্রায় হাজার বছর ধরে এই স্থাপত্যরীতিকে এখনো টিকিয়ে রেখেছে। সময়ের সাথে সাথে গঠনশৈলী ও উপাদান বিবর্তিত হয়েছে। শাল কাঠের দাম এখন সাধারন মানুষের সাধ্যের বাইরে, রক্ষণা বেক্ষণও কষ্টসাধ্য তাই জানালা কাঠের হলেও ঘরের মেঝে আর বাকি দেওয়াল কংক্রীটের।উডুপি সহরের ইন্দ্রালী তে গড়ে ওঠা যক্ষ্মাগণা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র “শিভপ্রভা” র কিছু ঘর এখনো এই রীতিতেই তৈরী। ঘরগুলি তে তাই ফ্যানের দরকার হয়না।
No comments:
Post a Comment