তাদের আগের সময়টা কেন চরিত্রগতভাবে নয়
মালিকানা
জমির মালিক কে?
এই বিতর্কটা যদিও সমাধা হয় মোটামুটি ১৭৯৩ সালে কর্নওয়ালিস যখন বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করলেন(মনে রাখা দরকার এই সময়ে দক্ষিণে কিন্তু কিছুটা জমিদারি এবং ব্যপ্তভাবে রায়তিয়ারি ব্যবস্থা – রায়তের থেকে সরাসরি অর্থ গ্রহনের প্রথা চালু ছিল)। এই বিতর্কটা ইওরোপিয়দের মধ্যে শুরু হয়েছিল সপ্তদশ শতে ফ্রান্সিস বার্নিয়ের মন্তব্য থেকেই। বার্নিয়ের বক্তব্য ছিল জমিদারই জমির মালিক। বার্নিয়েরের পরে যে সব ইওরোপিয় পর্যটক বাংলায়/উপমহাদেশে এসেছেন, তারা বিনাবাক্যব্যয়ে তাঁর অনুমানটাই সত্য ধরেছেন। ১৭৯৩র আগে বাংলায় ব্রিটিশ এবং বাঙ্গালি আমলাদের মধ্যে এই নিয়ে তীব্র বিতর্ক এবং মতভেদ হয়। ফিলিপ ফ্রান্সিসের ধারনা জমির মালিক হলেন জমিদার। তার প্রবল বিরোধী ওয়ারেন হেস্টিংস এবং রিচার্ড বারওয়েলও এই মতের শরিক। কিন্তু ভারতীয় আমলারা নন। বিহারের নায়েব দেওয়ান, সিতাব রায় জমিদার হয়ত জমির মালিক, কিন্তু রাজা হলেন জমির স্বত্ত্বাধিকারি। সমকালীন কানুনগো রাম রাম চৌধুরীর বক্তব্য ছিল জমিদার আর রাজা উভয়েই জমির যৌথ মালিকানা ভোগ করেন। রাজা রাজবল্লভএর মত রাজাই জমির মালিক।
ফলে লুঠ যখন সরকারের প্রশাসনিক হাতিয়ার, তখন সেটা আরও কত সুচারু রূপে করা যায় তা নিয়ে চিরস্থয়ী বন্দোবস্ত পূর্ব সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী তাত্ত্বিকদের মধ্যে বিতর্ক চলছিল। ফলে জমির মালকানা আদতে কার, তাই নিয়ে তাদের মাথাব্যথার অন্ত ছিল না – কারণ পলাশীর পরেপরেই বাংলা জুড়ে চলছে লড়ায়ের আবহ – সরাসরি রায়তদের থেকে বর্ধিত রাজস্ব তোলা মুশকিল।
কোম্পানির ভূমি রাজস্ব আমলা মুরল্যান্ড বললেন মুঘল আমল অর্ধস্বাধীন জমিদারদের সময়। তাদের ক্ষমতাও প্রবল ছিল। 'প্রভিনশিয়াল গভর্মেন্ট অব মুঘলস ১৫২৬-১৬৫৮' বইতে পরমাত্মা সারণ বলছেন মুঘল আমলে সব জায়গায় জমিদারদের অস্বিত্ব ছিল না। সমস্যা হল সারণ ব্লকল্যান্ডের আইনিআকবরিকে কোন প্রশ্ন না করেই অনুসরণ করে গিয়েছেন, ফলে তিনি সে সময়ের সামাজিক অবস্থা নিয়ে নানান ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
জমিদারদের ভবিষ্যৎ
কার কাকে দরকার?
মুঘল আমলে জমিদারদের দুটি পরস্পর বিরোধী চরিত্র ছিল
১) জমিদার রাজা/নবাব/পাদশাহের সুরক্ষায় থাকতে চাইতেন, কিন্তু তাদের নির্দেশ মানতে রাজি ছিলেন না
২) রাজা/নবাব/পাদশাহ জমিদারদের থেকে ভূমিরাজস্ব আদায় করতেন, কিন্তু জমিদারদের স্বাধীনতা দিতে তার সমস্যা ছিল।
গোটা মুঘল আমলে এই দুই পরস্পর বিরোধী চরিত্র কাজ করেগিয়েছে। মুঘল আমলে বলা যায় জমিদারি ব্যবস্থা রাবড়ি ব্যবস্থায় কাজ করেছে, ওপর দিক থেকে পাদশাহেরা বাতাস দিয়েছেন আর নিচ থেকে তাদের সুবার প্রতিনিধিরা দিয়েছেন আগুশে সেঁক। জমির মালকানা নিয়ে প্রবল বিতর্ক ছিল। কিন্তু সেটার কোন সমাধান বের হয় নি। সে সময়ের ভারতীয় আমলারাও খুব একটা পরিণত সিদ্ধান্তে আসতে পারেন নি। পাদশাহদের কড়া নির্দেশ ছিল পতিত জমি উদ্ধার এবং সেই কাজে রায়তদের সহায়তা করা এবং তাদের থেকে জমি চাষের পরে উৎপন্ন ফসলের একাংশ রাজস্ব হিসেবে নেওয়া। তারজন্য তারা নানান ধরণের পরিকল্পনা করেছিলেন যা আমরা অতীতে নানান সময়ে আলোচনা করেছি। মন্বন্তর হলে চাষ খারাপ হলে সেই সময়ে ভূমি রাজস্বে ছাড় ছিল। কিন্তু ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পরে কোম্পানির রাজস্ব আদায় বেড়েছিল।
No comments:
Post a Comment