নুন নিয়ে দীপঙ্করদা জরুরি কিছু অধিকারের প্রশ্ন তুলেছেন। এই একচেটিয়া করণ মোটেই নতুন ইতিহাস নয়, বঙ্গভাগের পরেও এটা হয় নি, এটা শুরু হয়েছিল মীর কাশিমের রাজত্বের পরে।
এ সময়ের লুঠের ইতিহাস নিয়ে কামিনী রায়ের পিতা চন্ডীচরণ সেন কয়েকটি উপন্যাস লেখেন, তার একটি মহারাজা নন্দকুমার - শতবত্সর পূর্বের বঙ্গের সামাজিক অবস্থা - এই তথ্য-উপন্যাসটি লিখে তিনি জেলও খাটেন। সেখান থেকে কয়েকটি স্তবক তুলে দেওয়া গেল।
এর পরে দুই বাংলার লবণ পলাশীর পরের লবণ লুঠ বিষয়ে আরও একটা ধারাবাহিক করব, সে লুঠের ইতিহাস জানা দরকার।
'১৭৬৫ সনের ১৮ই সেপ্টেম্বর ক্লাইব এবং তাহার কৌন্সিলের মেম্বরগণ লবন তামাক ও গুবাকের বাণিজ্য সম্বন্ধে আর কয়েকটি কঠিন নিয়ম প্রচার করিলেন, নবাবের লাভালাভ কিংবা প্রজাসাধারণের সুবিধার প্রতি একবার ভ্রমেও দৃষ্টিপাত করিলেন না। কিন্তু পাছে ডিরেক্টরগণ এই নিয়ম না মঞ্জুর করেন সেই আশংকায় এইরূপ বন্দোহস্ত করিলেন যে লবণ, তামাক, এবং গুবাকের বাণিজ্যে বণিকসভার যে লাভ হইবে তাহাতে শতকরা পাঁচিশ টাকা হারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পাইবেন বাকী টাকা গবর্ণর কৌন্সিলের মেম্বর, সৈন্যাধ্যক্ষ এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সমুদায় ছোট-বড় সমুদায় কর্মচারীগণ স্বীয় স্বীয় পদমর্যাদা অনুসারে ভাগ করিয়া লইবেন। এই বাণিজ্যের লাভ হইতে প্রায় কোন কর্মচারীই বঞ্চিত হইলেন না। খ্রীষ্টধর্ম প্রচারার্থ যে দুইজন ধর্মযাজক(chaplains) কলিকাতায় তত্কালে অবস্থান করিতেন তাঁহারাও কিছু কিছু পাইতেন।
'লবণের বাণিজ্য এইরূপ একচেটিয়া করিবার অব্যবহিত পূর্বে ক্যারাপিট আরাটুন নামক জনৈক আরমানিয়ান বণিক ত্রিশ হাজার মণ লবণ গোলায় ক্রয় করিয়া তাঁহার দিনাজপুরস্থ গোলায় মজুদ রাখিয়া ছিলেন। তিনি যখন শুনিতে পাইলেন যে, দেশের সমুদয় লবন ইংরেজরা ক্রয় করিয়া, পরে অত্যাধিক মূল্যে দেশিয় বণিকদেগের নিকট বিক্রয় করিবেন বনিয়া স্থানে স্থানে নবাবের পরওয়ানা জারি করাইয়াছেনব, তখন তাঁহার নিজের গোলার লবন বিক্রয় বন্ধ করিয়ে রাখিলেন। তিনি মনে করিলেন যে এই নিয়ম প্রচারের পর লবণের মূল্য পাঁচগুণ বৃদ্ধি হইবে, সুতরাং সেই মূল্যে বাজারে আপন লবন বিক্রয় করিয়া অন্তত এই বত্সরে কিছু লাভ করিতে পারিবেন, মনে মনে এই সংকল্প করিয়া আরাটুন সাহেব স্বীয় গোম্তাকে লবনের গোলা বন্ধ করিয়া রাখিতে আদেশ করিলেন. কিন্তু ইংরেজগণ তাহার গেলার নবণ আত্মসত্ করিবার অভিপ্রায়ে নানানবিধ অবৈধ উপায় অবলম্বন করিতে লাগিলেন। ত্রিশ হাজারমণ লবণ তাঁর গোলায় মজুদ রহিয়াছে. এখন একটাকা হারে মণ ক্রয় করিতে পারিলেও বাঙালি বণিকদিগের নিকট পাঁচটারা হারে বিক্রয় করিয়া একলক্ষ বিশ হাজার টাকা লাভ করিতে পারিবেন।
'বণিকসভার বেরেলস্ট এবং সাইক সাহেব এই আরমানিয়ান বণিকের লবন হস্তগত করিবার নিমিত্ত বিশেষ চেষ্টা করিতে লাগিলেন. অবশেষে তাংহাকে দুইটাকা হারে প্রত্যেক মণের মূল্য দিতে স্বীকার করিলেন। কিন্তু আরাটুন সাহেবে তাঁহার লবন দুই টাকা হারেও বিক্রয় করিতে সম্মত হইলেন না। তকন ইংরাজগণ বল পূর্বক তাঁহার গোলা ভাঙিয়া সমুদয় লবণ হস্তগত করিবেন বলিয়া কৃতসংকল্প হইলেন। বাণিজ্যে লাভ হইলেই হইল। টাকা সঞ্চয় করাই তাঁহাদিগের একমাত্র খ্রিষ্টীয়ধর্ম। বণিকসভার অধ্যক্ষ বেরেলস্ট এবং সাইক সাহেব আরাটুন সাহেবের গোলা ভাঙিয়া, তাঁহার তাঁহার দিনাজপুরের গোলার লবণ হস্তগত করিবার নিমিত্ত লেপ্টেন্যান্ট ডবসনকে কয়েকজন গোরা ও সিপাহীর সহিত দিনাজপুর প্রেরণ করিলেন। ডবসন সাহেব দিনাজপুর পৌঁছিয়া আরাটুন সাহেবের লবণের গোলা ভাঙিয়া, তাঁহার সমুদয় লবণ হস্তগত করিলেন।'
No comments:
Post a Comment