তাদের আগের সময়টা কেন চরিত্রগতভাবে নয়
জমিদারদের চরিত্রবিভাগ
মোটামুটি তিন ভাগ
মোটামুটি তিন ভাগ
১) বড় জমিদার যাদের উপাধি রাজা, পারসিতে যাদের বলা হত জমিদারানিউমদা
২) মাঝারি জমিদার, খুব বড় নয় খুব ছোটও নয়
৩) প্রাথমিক স্তরের, ছোট জমিদারি
এইভাবে মোটাদাগে দাগিয়ে দেওয়ার একটা সমস্যা আছে। একটি জমিদারির চরিত্র কোথাও কোথাও আবার অপরের সঙ্গে মিলে মিশে যেত। একটা বড় জমিদারিতে মাঝারি বা প্রাথমিক ছোট জমিদারি থাকত। কিন্তু কখোনো কখোনো বড় জমিদারই কোথাও কোথাও প্রাথমিক জমিদার ছিল। আমার প্রত্যেকটার চরিত্রও একশিলা ছিল না। আবুলফজল বড় জমিদারদের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলছেন, ১) কোন এলাকার জমিদার অর্থাৎ কাংড়া বা জম্মুর রাজা, ২) আদিবাসীদের রাজা, বালুচ রাজা। তিনি আদিবাসীদের জমিদারদের আলুস বলছেন।
যদিও এই দুয়ের পার্থক্য খুব সামান্য। আদিবাসীদের রাজার নিজস্ব জোর ছিল তাদের সংঘবদ্ধ সমাজের, যেখানে রাজা সেই সমাজকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মনে রাখতে হবে তার রাজত্বে আদিবাসি ছাড়াও অন্যান্য সমাজ আছে। ফলে দুটির আভ্যন্তরীণ রাজনীতি আলাদা ছিল। শুধু আদিবাসী এলাকা হলে ব্যাপারটা সরল, কিন্তু অনাদিবাসী রাজত্বের হলে বেশ ঝঞ্ঝাটের।
পেশকাশ
বড় জমিদারদের কেন্দ্রিয়স্তরে উপঢৌকন, যার নাম পেশকাশ, সেটি পেশ করতে হত। পেশকাশ দুধরণের
বড় জমিদারদের কেন্দ্রিয়স্তরে উপঢৌকন, যার নাম পেশকাশ, সেটি পেশ করতে হত। পেশকাশ দুধরণের
১) পেশকাশ এবং সামরিক সাহায্য
২) শুধুই পেশপকাশ, কিন্তু কোন সামরিক সহায়তা নয়। এদের বলা হত পেশকাশিজমিদার।
দুধরণের জমিদারই পেশকাশ দিতেন। কিন্তু কোন শর্তে কয়েকজন জমিদার কেন ও কিভাবে সামরিক সাহায্য দিতেন তা আজ আর জানা যায় না। আইনিআকবরি থেকে দ্বিতীয় ধরণের জমিদারদের বিশদ আলোচনা পাচ্ছি।
পেশকাশিজমিদার, অর্থাৎ যারা সামরিক সাহায্য না দিয়ে শুধুই তাদের রাজস্ব নির্ভর করে পেশকাশ দিত তাদের রাজস্বের একটা তালিকা করেছেন আবুলফজল। বড় জমিদারেরা খুব শক্তিশালী ছিল। মুঘল আমল সেটা স্বীকার করত। বাবুরনামায় স্বয়ং বাবুর এ কথা বলে গিয়েছেন। তিনি বলছেন দেশের মোট জমির একষষ্ঠাংশের অধিকার ছিল বড় জমিদারদের। তাদের প্রচুর হাতি, বন্দুক এবং সেনা ছিল, তার সংখ্যাও তিনি দিয়েছেন। তিনি বলছেন মুঘলদের একটা জোরের যায়গা ছিল যে বড় জমিদারেরা যৌথতায়, একতায় বিশ্বাস করত না, তারা প্রত্যেকেই একচ্ছত্র ছিল। ফলে তাদের হারানো সোজা ছিল।
পেশকাশি জমিদারেরা স্বাধীন থাকতে পছন্দ করতেন কিন্তু মুঘল সাম্রাজ্যের উদ্দেশ্য ছিল তাদের রাজস্ব দেওয়া অর্থাৎ মালগুজারি জমিদারে পরিণত করা। ফলে কত তাড়াতাড়ি এই পেশকাশ দেওয়া যাবে সেটা নিয়েও টানাপোড়েন চলত। সাধারণত পাদশাহ যখন জমিদারির আশেপাশে আসতেন তখন রাজা তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে পেশকাশ দিতেন। এখানে সমস্যা ছিল। ১৬১০ সালে যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য, সে সময়ে বাংলার সব থেকে বড় জমিদারকে জোড়তালাও অর্থাৎ বিদ্রোহী জমিদার হিসেবে দেগে দেওয়া হল। কেননা তিনি নিজে থেকে সুবাদারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন নি। জমিদারদের নিয়ে মুঘলদের অস্বস্তি বোঝা যায় জমিদার আর প্রশাসন/পাদশাহীর মধ্যে হাজারো প্রথা নীতি প্রণয়নের ইতিহাসে।
No comments:
Post a Comment