আমাদের ভূমিকা
Ahmadul Haqueএর কাছে অতীব কৃতজ্ঞ, তিনি এস্কোবারের এনকাউন্টারিং ডেভেলাপমেন্টঃ দ্য মেকিং এন্ড আনমেকিং অব দ্য থার্ড ওয়ার্লড - বইটির কথা নতুন করে মনে করিয়ে দিলেন। মনমোহনী জামানায় তখন বামীয় ইওরোপবিদ্য গরিবিয়ানার তত্ত্বের বাইরে বেরোতে চাইছি। কোনও এক সমাজ-দাদা এই বইটা পড়ার কথা বলেন। সদ্য বাজারে এসেছে। ইংরেজিতে দঢ় না হওয়ায় ওপরওপর বুঝেছিলাম। বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে আলোচনাও শুরু হয়েছিল। মনমোহনী যুগ শেষে পাঁচ বছরের অটলযুগ শুরু। বইটার ভাষা (ইংরেজি) এবং বলা ভাল তত্ত্বের গভীরে না যেতে পারায়, এস্কোবারের তাত্ত্বিক অবস্থানের অক্ষহৃদয়ে পৌঁছতে পারিনি। আরও হয়ত একটা কারন ছিল, বাচ্চা বেলা থেকে ইওরোপমন্যতার মধ্যে বেড়ে ওঠার রেশটা না কাটাতে পারা।
আজ প্রায় বিশ বছর পর যখন সব কিছু নতুন করে দেখছি, নতুন করে বুঝছি, নতুন করে অনুধাবন করার চেষ্টা করছি, তখন আহমদুল দাদা নতুন করে আমাদের প্রবেশ করিয়ে দিলেন এস্কোবারের অক্ষহৃদয়ে। আজ যখন ছোটলোকেদের কৃতি, ব্রিটিশপূর্ব বাংলার কৃতি বিষয়ে কিছুটা হলেও জানার, জানানোর চেষ্টা করছি, সে সময় এস্কোবার নতুন করে উদ্ভাসিত হলেন আমাদের মধ্যে।
---
ভূমিকাঃ উন্নয়ন এবং আধুনিকতার নৃতত্ত্ব
আমাদের মনে হয় বেদনাদায়ক কিছু সিদ্ধান্ত(পেইনফুল এডজাস্টমেন্ট) না নেওয়া হলে উন্নয়নের সুফল মেলা ভার হবে। পুরোনো দর্শন ত্যাগ/রদ করতে হবে, পুরনো সামাজিক সঙ্গঠনগুলিকে ভেঙ্গে ফেলতে হবে, জাতি, ধর্মবিশ্বাস, বর্ণকে উড়িয়ে দিতে হবে। বিপুল সংখ্যক মানুষ, যারা সুখী জীবন পাওয়ার জন্য প্রগতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না, তাদের বেদনা বাড়ছে। অর্থনৈতিক প্রগতির দাম দেওয়ার জন্য (এই মুহূর্তে) হাতে গোনা সমাজ তৈরি – জাতি সংঘ, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দপ্তর, অনুন্নত দেশগুলির উন্নত হওয়ার নিদান, ১৯৫১
--
১৯৪৯ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদে শপথের ভাষণে হ্যারি ট্রুম্যান সারা বিশ্বের জন্য ‘ফেয়ার ডিল’ তত্ত্ব আমদানি করেন। তত্ত্বের মূল প্রতিপাদ্য হল প্রাথমিকভাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং সারা বিশ্বকে অনুন্নত অঞ্চলগুলোর উন্নয়নের সমস্যার সমাধানে আর্জি জানানো -
...বিশ্বের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যার জীবন দুর্দশায় কাটছে। তাদের খাদ্য অপ্রতুল, অসুখে ভুগছে। জীবনযাত্রা প্রাচীন এবং স্থবির। গরীব এলাকা সব সমস্যার মূল এবং উন্নত এলাকার কাছে হুঁশিয়ারিও বটে। এই প্রথম সভ্যতার ইতিহাসে মানুষের দুর্দশাময় জীবনকে বদলে দেওয়ার জ্ঞান, দক্ষতা আহরিত হয়েছে। ...আমি বিশ্বাস করি, সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের জীবনে উন্নত জীবনযাত্রা পাওয়ার জন্যে, আমাদের বিপুল প্রযুক্তির মহাফেজখানার সহায়তার দরজা খুলে দেওয়া জরুরি। ...আমরা গণতান্ত্রিক সুস্থ ব্যবস্থার(ফেয়ার ডিল) প্রণয়নের মাধ্যমে প্রত্যেককে উন্নয়নে সামিল করতে চাই। ...আরও বেশি উৎপাদন বিশ্বজোড়া বিকাশ আর শান্তি নিশ্চিত করবে। অতি উৎপাদনের ফলে আরও বেশি বেশি করে আধুনিক বৈজ্ঞানিক ও প্রাযুক্তিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটবে।
ট্রুম্যান নিউ ডিলএর তত্ত্ব আদতে বিশ্বের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার নতুন দিশা। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে কম উন্নত দেশগুলোর সামনে নতুন স্পর্ধা উপস্থিত করল 'নিউ ডিল'। অভিপ্রায় বেশ উচ্চাশাময়ঃ সে সময় বিশ্বের যে সব দেশ ‘অগ্রগণ্য’ নামে পরিচিত, তাদের সামাজিক চরিত্রগুলো সারা বিশ্বে চারিয়ে দেওয়া – বিপুল বিশালকায় শিল্পস্থাপন, শহরীকরণ, কৃষিতে বড় পুঁজির অনুপ্রবেশ, পণ্য উৎপাদনে বিপুল বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন, বিনা প্রশ্নে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা আর বড়পুঁজির তৈরি করা কৃষ্টিগত চরিত্রগুলিকে আত্মীকরণ। ট্রুম্যানের বিশ্বদৃষ্টি সফল করতে প্রয়োজন হল, বড় পুঁজি, তার বিজ্ঞান আর উপজাত প্রযুক্তিকে বিপুলভাবে কাজে লাগান যাতে এই বিপুল পরিবর্তনের উল্লম্ফন সম্ভব হয়। বোঝা গেল একমাত্র এই তাত্ত্বিক অবস্থান রূপায়ন করার মাধ্যমেই, সারা বিশ্ব জুড়ে আমেরিকার দৃষ্টিতে শান্তি আর প্রাচুর্য তত্ত্ব ফেরি করা সম্ভব।
(এনকাউন্টারিং ডেভেলাপমেন্টঃ দ্য মেকিং এন্ড আনমেকিং অব দ্য থার্ড ওয়ার্লডঃ আর্তুরো এসকোবারএর বই থেকে)
No comments:
Post a Comment