উপমহাদেশে কড়ির নানা ধরণের ব্যবহার ছিল। কড়ি আজও গয়নার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হয়, সেদিনও হত। আর এটির ব্যবহার ছিল শিক্ষা ব্যবস্থায় যাতে ছেলেরা সওদাগর হয়ে উঠতে পারে। ১৬৮৭ সালে ডাচ ভিওসির বাংলা কুঠিয়ালকে হিন্দু বানিয়া সম্বন্ধে ডাচ কমিশনার Hendrik Adriaan van Reede tot Drakenstein, heer van Mijdrecht নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘The merchants…are exceptionally quick and experienced. When they are still very young and in the laps of their parents and hardly able to walk, they already begin to be trained as merchants. They are made to pretend to engage in trade while playing, first buying cauris, followed by silver and gold. In this training as moneychangers, they acquire the capability of engaging in large-scale trade. They are always sober, modest, thrifty, and cunning in identifying the source of their profit, which they are always at pains to maximize. They have an exceptional capacity of discovering the humour of those who are in a position to help or hurt them. They flatter those they need to be in the good books of. In case of loss, they console themselves easily and can hide their sorrow wonderfully…In general they are a people with whom one could get along well so long as one is on one’s guard।’
ওপরের বর্ণনাটা আমাদের জানায় যে, বাংলার আর্থ ব্যবস্থায় কড়ি একটি বিপুল ভূমিকা পালন করত। তামার দামে মুঘল ভারতে তুচ্ছ পণ্য বিনিময় হত, কিন্তু বাংলায় কড়ির মাধ্যমে তুচ্ছ এবং বড় লেনদেনের বাণিজ্য হত। এর কোন ব্যখ্যা নেই, শুধু অভ্যেস হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া ছাড়া। বাংলা এবং ওডিসায় বিপুল পণ্য বিনিময় কড়িতেই হত।
সপ্তদশ শতকের শুরুতে মালদ্বীপে এক কুইন্টাল কড়ির দাম ছিল দুই শিলিং এবং দস পেন্স, কিন্তু বাংলাতে এই পরিমানের দাম উঠে যেত ৩০০-৪০০ গুণ। ফলে কড়ি ব্যবসা এশিয়া জোড়া বিশাল লাভের ব্যবসা ছিল। টমাস বাউরে বলছেন একগণ্ডা = চার কড়ি, ২০ গণদা, ১ পণ, ১৬ পণ এক কাহন, আড়াই কাহনে (৩২০০ কড়ি) এক টাকা। তবে মুঘল টাকা, দাম আর পয়সার সঙ্গে কড়ির কোন স্থায়ী বিনিময়মূল্য ছিল না। বাজারে সেই মুহূর্তে চাহিদা সরবরাহের তারতম্যের ওপর নির্ভর করত দুটি মুদ্রার তুল্যতা।
আগে বলেছি বাংলা ওডিসার বাজারে ছোট ছোট লেনাদেনার জন্য কড়ি ব্যবহার হত। আসলে তামার পয়সা যে জন্য ব্যবহার হত, ঠিক সেই জন্য বাজারে ব্যবহার হত কড়ি। কিন্তু কড়ি মানের খুব ছোট লেনদেন ছাড়া কড়ি দিয়ে বড় বিনিময় হত। মুঘল বাংলার সব থেকে বড় রাজস্ব, ভূমি রাজস্ব, কড়িতে সংগ্রহ করা হত, এবং সিক্কা টাকায় রুপান্তরিত করে দিল্লির খাজাঞ্চিতে পাঠানো হত। সিলেটে একমাত্র কড়িই মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হত। ১৭৭৮ এবং ১৭৮৯ সালে ২৫০০০০ টাকা রাজস্ব দেওয়া হত কড়িতে। তখন বিনিময় ছিল ১ সিক্কা টাকা সমান ৫১২০টি কড়ি। কড়ি রাখার জন্য বিশাল বিশাল গুদাম তৈরি করা হয়েছিল এবং সেগুলিকে ঢাকায় নৌকো করে পাঠানো হত। কড়ি ব্যবস্থাপনার জন্য সে সময়ে রাজস্বের ১০% মূল্য খরচ হত। ঢাকায় সিক্কা টাকার বনিময়ে কড়ি নিলাম হত। ১৮২০ সালে কড়ি নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়। এরপর থেকে রাজস্ব তামার পয়সায় নেওয়া হত।
আমরা বলতে পারি মুঘলদের মুদ্রা ব্যস্থায় যেমন প্রমিত মুদ্রাও ছিল তেমনি কড়ির মত অপ্রমিত বাজারি মুদ্রারও অস্তিত্ব ছিল। মুদ্রা ব্যবস্থা খুবই জটিলতম ব্যবস্থা কেননা ধাতু মুদ্রার সঙ্গে নিয়মিত এই অপ্রমিত মুদ্রার বিনিময়ের ধারা তৈরি করে করে যেতে হত রাষ্ট্রকে।
No comments:
Post a Comment