তাদের আগের সময়টা কেন চরিত্রগতভাবে লুঠেরা নয়।
ব্রিটিশদের জমিদারদের জমির সত্ত্ব দেওয়ার নিজস্ব যুক্তি ছিল।
১) স্থানীয় ক্ষমতাশালী মানুষদের প্রশাসনের লুঠের চরিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া
২) এবং আমাদের দ্বিতীয় যুক্তি হল পলাশীর পর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আগের তিন দশকে বিপুল বাংলা লুঠ আর ধ্বংসকার্যে বাঙ্গালার আমলা, দালাল আর ব্যবসায়ীরা যুক্ত ছিলেন। সাম্রাজ্যের ছোটতরফ হিসেবে সেই কাজ করতে গিয়ে তারা লুঠের এক ক্ষুদ্র অংশ যা বাংলার ভদ্রসমাজের নজিরে বিপুল সম্পদ, পেয়েছিলেন উপহার হিসেবে, সেটকে নতুন করে হস্তগত করা।
মুঘল সময়ে রাষ্ট্র নিত জমির উৎপাদনের একাংশ। কিন্তু কোম্পানি ১৭৯৩এর পরে দীর্ঘ পরম্পরার বাইরে বেরিয়ে গিয়ে স্থির করল তারা উৎপন্ন নয় জমির পরিমান ভিত্তিতে তারা রাজস্ব আদায় করবে। মুঘল আমলে ফসল না উৎপন্ন হলে চাষী/রায়তকে রাজস্ব দিতে হত না – ফসলের চরিত্রের ওপরে নির্ভর করত রাজস্বএর পরিমান – বিক্রির জন্য হলে তার রাজস্ব বেশি আর খাদ্যের জন্যে হলে রাজস্ব কম। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে রাজস্বের সঙ্গে ফসল উৎপাদনের বিন্দুমাত্র কোন যোগ রইল না। ব্যবস্থাটাই আলাদা হয়ে গেল। ব্রিতিশরা ঠিক করল জমির মালক হল জমিদারেরা ফলে জমির উৎপন্ন ফসলের সঙ্গে জমির রাজস্বের কোন যোগ রইল না। ফসল উৎপাদন হোক আর নাই হোক, জমিদারের দায় হল জমির রাজস্ব দেওয়া।
মুঘল আমলের প্রথম এবং শেষার্ধে ভুমি রাজস্ব বিষয়ে কিছু তথ্য পাচ্ছি। প্রথমটা সপ্তদশ সতের মধ্যখান সময়ের আলি মহম্মদ খান লিখেছিলেন মীরাটিআহমদি। তার বক্তব্য ছিল মুঘল রাজস্বের দুটি ভাগ ছিল একটির নাম ছিল বন্থ, যা জমিদারদের প্রাপ্য, অন্যটি তালপাড়, কেন্দ্রের প্রাপ্য।
ষোড়শ শতের শেষের দিকের পাণ্ডুলিপি গুজরাটের সুবাদার খানইআজম একই মন্তব্য করছেন তার নির্দেশনামায় বা ফরমানে। সেগুলি তুলে দেওয়া গেল
১) সে দেশের মানুষের জন্য একচতুর্থাংশ জমি বরাদ্দ থাকবে। সেই সপব জমি থেকে কোন রাজস্ব আদায় হবে না।
২) জমিদার কন সময়েই মোট উৎপাদনের অর্ধাংশের বেশি রাজস্ব হিসেবে নিতে পারবে না।
৩) খরদকৃত জমি বিক্রি করতে পারবে জমিদার।
অর্থাৎ জমিদার রাজস্ব দেওয়ার পর জমিদারের অধিকার অসীম ছিল। আমাদের ধারনা, যদিও এটা প্রমানের জন্য হাতে কোন প্রামান্য নেই, কিন্তু সারা মুঘল ভারতেই কিন্তু একই ধরণের তত্ত্ব চালু ছিল।
No comments:
Post a Comment