তাদের আগের সময়টা কেন চরিত্রগতভাবে নয়
কয়েকদিন আগে আমরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম – মূলত বাম ঐতিহাসিকেরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে কোন দৃষ্টিতে দেখেছেন সেটা বোঝা এবং আমাদের পথ/তত্ত্ব নির্ণয়। বাম ঐতিহাসিক বর্ণিত সামন্ততন্ত্রতত্ত্ব আমাদের পক্ষে চরিত্রায়ন করা মুশকিল। উপমহাদেশের অর্থনীতি সামন্ততান্ত্রিক নিগড়ে বাঁধা ছিল কি না তাও জানি না। প্রথমে সুলতানি সময়, তারপরে মুঘল আমল তারপরে বাংলার মুঘল-নবাবি আমলের বিভিন্ন দিক আলোচনা করতে গিয়ে দেখেছি, রাষ্ট্রের নীতি ছিল চাষী এবং কারিগরদের লালন-পালন। সে তত্ত্ব আমরা সরাসরি পেয়েছি চরমতম মুঘল রাষ্ট্র বিরোধী আচার্য যদুনাথ সরকারের দ্য মুঘল এডমিনিস্ট্রেশন এবং মুঘল আমল সংক্রান্ত নানান পুঁথি/পাণ্ডুলিপি অনুবাদে এবং ব্রিটিশ পলাশীলুঠ পূর্ব বাংলা আলোচনায়। তো আরেকবার আমরা নতুন করে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের নানান দিক নিয়ে একটু আলোচনা করব। সেখানেও দেখব যে আমাদের এই তত্ত্বের সমর্থন, এবং কেন আমরা ব্রিটিশ আমলকে লুঠের আমল বলতে চাইছি।
জমিদার
জমি পার্সি শব্দ মানে ভূমি, দার উপসর্গ অর্থে ধারক, দুয়ে মিলিয়ে জমিরধারক। কিন্তু সরাসরি বলা হল না জমির মালিক। মুঘল আমল ধারক এবং মালিক, এই দুটি ধারনা নিয়ে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে নি। জমির মালিক আদতে কে, তা নিয়ে সে সময়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে, তর্ক বিতর্ক হয়েছে।
জমিদারি ব্যবস্থা মোটামুটি মুঘল আমলের সৃষ্টি – যদিও তার বহু আগে থেকেই জমিদারি নামে হয়ত নয়, কিন্তু নানান রূপে এই ব্যবস্থাপনাকে লালনপালন করা হয়েছে। বলা হয়, মুঘল আমলে এমন কোন পরগণা ছিল না যেখানে জমিদারের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু বহু গ্রামের অস্তিত্ব ছিল উপমহাদেশে, যেখানে জমিদার ছিল না, কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েতে মোড়োলের/মণ্ডল/মুকদ্দমএর অধীনে গোটা গ্রামের স্বায়ত্ত্বশাসন বর্তমান ছিল। জমিদারদের মধ্যে তারতম্যই শুধু নয় জমিদারি ব্যবস্থার মধ্যে বহুধা পার্থক্য আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে জমিদারি ব্যবস্থা মুঘল আমলে উদ্ভুত হয় নি, দীর্ঘকালের নানান পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে তার বিবর্তন এসেছে।
No comments:
Post a Comment