এনকাউন্টারিং ডেভেলাপমেন্টঃ দ্য মেকিং এন্ড আন্মেকিং অব দ্য থার্ড ওয়ার্লডঃ আর্তুরো এসকোবারএর বই থেকে
নৃতত্ত্ব এবং উন্নয়ন বিতর্ক
উপনিবেশ সম্পর্কিত তার প্রবন্ধগুচ্ছ নিয়ে রচিত বই, Anthropology and the Colonial Encounter (1973), তালাত আসাদ বলছেন আজও পেশাদার নৃতাত্ত্বিকেরা তাঁদের অধীতবিদ্যার মধ্যে যে ক্ষমতার কাঠামোটা রয়েছে, সেটা স্বীকার করতে গড়মসি করেন, বিশেষ করে খুবই ঝামেলার দুটি বিষয় উপনিবেশবাদ এবং নব্যউপনিবেশবাদ, এবং তাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং সঙ্গঠনগুলো বিষয়কে তারা উপেক্ষা করতে থাকেন। উপনিবেশবাদ একসময়ে একটি নৈকট্যমূলক ভূমিকা পালন করেছিল - যার দ্বারা মনে হয় তারা উপনিবেশের মানুষের একটা এক ধরণের মানবিক নৈকট্য তৈরি করছে। আদতে সে নৈকট্যের ভিত্তি নৃতত্ত্বের মাঠকর্ম নির্ভরশীল, এবং সেটা নিশ্চিত করে যে সেই নির্ভরতা এক রৈখিক এবং শর্তাধীন। এরই সঙ্গে বলা যায়, যদি ঔপনিবেশিক আমলে নৃতত্ত্বের লক্ষ্যচ্যুতি উপনিবেশের বৈষম্যমূলক বিশ্ব তৈরিতে হুঁশিয়ারি না হয়ে ওঠা বোঝায়, তাহলে কি একই অবস্থা আজকের উন্নয়নের অবস্থায় ঘটছে বলা যাবে না? মোটামুটি একই প্রাসঙ্গিকতায় আমরা বলতে পারি না নৃতত্ত্বের সঙ্গে উন্নয়নের বিতর্ক হোক।
এটা ঠিক যে উন্নয়ণের বিতর্কে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যে মধ্যে যে প্রতর্কে গরীব ধনী এই বর্গে রাষ্ট্রগুলি বিভাজিত হল, সেই বিতর্কে সে সরাসরি অংশ নেয় নি বা সেটায় বড় ভূমিকা তার ছিল না এটা সত্য। যদিও অধিকাংশ নৃতাত্ত্বিক উন্নয়নের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, বিশেষ করে পরম্পরার মানুষদের পক্ষে দাঁড়িয়ে১২, কিন্তু বিপুল সংখ্যক নৃতাত্ত্বিক উন্নয়নের মূল কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন বিশ্বব্যাঙ্ক, ইউএসএইডএর মত সংস্থার সঙ্গে উন্নয়নের কাজে জুড়ে থেকেছেন। ১৯৭৫-১৯৮৫ পর্যন্ত এই সময়ে তাঁদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন বিষয়ে আমি বিশদে অন্য নানান যায়গায় আলোচনা করেছি। Stacy Leigh Pigg (1992) স্পষ্টভাবে বলছেন প্রায়োগিক নৃতাত্ত্বিক হিসেবে নৃতাত্ত্বিকেরা সরাসরি উন্নয়নকর্মের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন, বা তারা উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বাইরে দাঁড়িয়ে দেশজ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী এবং তাঁদের কৃতি বর্ণনা করে গিয়েছেন। উন্নয়নকর্মের ভিতরে দাঁড়িয়ে অথবা বাইরে থেকে তাকে সমালোচনা করে উন্নয়নের কর্মকে কৃষ্টির রূপ দেওয়ার চেষ্টাকে প্রশ্ন করেছেন। হাতে গোনা কিছু নৃতত্ত্ববিদ((Taussig 1980; Fals Borda 1984; Scott 1985; Ong 1987; see also Comaroff 1985 and Comaroff and Comaroff 1991 for resistance in the colonial context)) সরাসরি উন্নয়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লড়ায়ের প্রচেষ্টার ব্যখ্যাকার হয়েছেন।
উন্নয়ন একটি প্রশাসনিক বিষয়, নৃতত্ত্ববিদদের এই প্রতর্কে না ঢোকাটা একটা দুঃখজনক বিষয়। যদি সত্য হয় যে তৃতীয় বিশ্বের ধারণা তৈরির প্রচেষ্টা থেকে উপনিবেশবাদ অনেকটা সহনশীল, কিন্তু মনে রাখতে হবে সাম্রাজ্যবাদীদের থেকে উন্নয়নবাদীরা কম অনুপ্রবেশকারী(pervasive) এবং কার্যকর ছিলেন না। হয়ত এই দুটি বিষয় অনেক কাছাকাছিরও বটে। সঈদ দুঃখ করে বলছেন, সাম্প্রতিক আমেরিকিয় তাত্ত্বিকেরা আলোচনায় আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী তাত্ত্বিকতা কিভাবে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী দখলদারি চরিত্রকে তৈরি করল, সে বিষয়ে প্রতর্কেযুক্ত থাকেন না বলা চলে। এই সাম্রাজ্যবাদী দখলদারির নানান স্তর রয়েছে অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক, এবং কৃষ্টিগত – যেগুলিকে উন্নয়নের কারবারিরা একসঙ্গে জুড়ে নিয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেন। সঈদ আরও বলছেন, যেভাবে পশ্চিমি তাত্ত্বিকেরা তৃতীয় বিশ্বের জ্ঞানচর্চকদের সমালোচনামূলক উপনিবেশ, ইতিহাস, পরম্পরা এবং কর্তৃত্ব – এবং এখানে আমি জুড়তে পারি উন্নয়ন বিষয়ক – আলোচনা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামান এমন কোন নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় না। তৃতীয় বিশ্ব থেকে উন্নয়নের প্রতর্ককে এক্কেবারে রদ করার গলা চড়ছে নৃতাত্ত্বিকদের এটা সুখবর।
১৯৭০র দিকে নৃতত্ত্বের বিপুল গভীর পরিবর্তন আসে, সে বলার চেষ্টা করে শুধু পশ্চিমী জীবনযাত্রাই একমাত্র পথ নয় বরং সারা বিশ্বজুড়ে নানান ধরণের পথ আছে এবং সেটা তৃতীয় বিশ্বের মানুষের পক্ষে উপযোগী (Strathern (1988, 4))। এই আত্মসমালোচনামূলক মন্থন থেকে একটা বিষয় উঠে আসে, সেটা হল, অন্যদের নিয়ে লেখালিখি, বিতর্ক নিয়ে কোন ঝামেলা নেই, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে প্রান্তিক দাগিয়ে দেওয়ার অধিকার কারোর নেই। এই প্রতর্কে নিগুঢ এবং গঠনমূলক ধারণা ক্রমশ উঠে এল যে, কৃষ্টি আদতে মিথস্ক্রিয় এবং ঐতিহাসিক(Clifford 1986,)। নৃতাত্ত্বিক লেখালিখিতে এই বিষয়ে যে পরিবর্তন ঘটল ‘তারা অভূতপূর্ব রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক চেতনা নিয়ে কৃষ্টিগত বৈচিত্রকে উপস্থাপন করতে লাগলেন।(Marcus and Fischer 1986)’।
No comments:
Post a Comment