তাদের আগের সময়টা কেন চরিত্রগতভাবে নয়
মালগুজারি জমিদার
অন্যান্য এলাকার জমিদারেরা রাজস্ব দিতেন, মুঘল প্রশাসকেরা এদের নাম দিয়েছিলেন মালগুজারি জমিদার। ১৫৯২-৯৩ সালে আকবর একটি ফরমান জারি করে বলেন, প্রত্যেক জমিদার হয় সশরীরে বা তার সন্তান বা তার প্রতিনিধিদের দরবারে জামিন হিসেবে আসুক/পাঠাক। ১৫৯৫-৯৬ সালে আবুলফজল বলছেন শুধু লাহোরেই এ ধরণের জমিদারের সংখ্যা ছিল ২৭টি। জমিদারদের নিয়ন্ত্রণ করার এটা এক ধরণের তরিকা। ফলে মুঘল আর কিছু জমিদারের মধ্যে সঙ্ঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠল। আকবরের নিমন্ত্রণে চিতোরের রাণা নিজে গেলেন না বা তার সন্তানকেও পাঠালেন না। কিন্তু জাহাঙ্গিরের সময় চিতোরের রাজাকে ছাড় দেওয়া হল এবং সমস্যা দূর হল। পরের দিকে এই নীতি কড়া হাতে প্রয়োগ করা হয়।
জমিদারদের নিয়ন্ত্রণ
আরেকটা পদ্ধতি ছিল পাদশাহের সঙ্গে অমুসলমান রাজার মেয়ের বিবাহ দেওয়া। ১৫৬৩তে এই ধরণের বিবাহে অম্বর, জয়পুরের জমিদার পরিবারের সম্মান বাড়ল। বিহারীমলের কন্যাকে আকবর বিয়ে করলেন। আবুল ফজলের ১৫৯৫-৯৬এর তালিকায় এ ধরণের ৬১জন জমিদারের নাম আছে। এই ৬১র মধ্যে ৪১ জন জয়পুর/আজমেঢ অঞ্চলের। ৪০ জনের মধ্যে ২৭ জনই ছিলেন অম্বরের কাছোয়া পরিবারের। ফলে ঐতিহাসিকেরা অম্বরের রাজপরিবারের উত্থান বিষয়ে এই ধরণের সিদ্ধান্তে এসেছেন।
কিন্তু সাম্প্রতিক ইতিহাসে জানা যাচ্ছে, শুধু অম্বর নয় নানান রাজ পরিবার মুঘল পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল। আবার বহু পরিবার মুঘল বংশে বিয়ে দেয় নি অথচ মুঘল প্রশাসনিক স্তরে উঠেছিল এমন উদাহরণ দিচ্ছেন সাম্প্রতিক কালের বেশ কিছু ঐতিহাসিক।
যোধাবাঈ
১৮৭৩ সালে বেভারেজ এশিয়াটিক সোসাইটি জার্নালে লেখেন বিহারী মলের মেয়ের নাম যোধাবাঈ। তিনি জাহাঙ্গিরের মা বলে ইতিহাসে পরিচিত। পরে এই বিতর্ক বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিককালের গবেষণায় জানা যাচ্ছে যে বিহারী মলের কন্যার নাম জানা যাচ্ছে না, অন্তত যোধাবাঈ নয়। জাহাঙ্গীর তার মায়ের নাম জানান নি। যখন কোন অমুসলমান মহিলা মুঘল বংশে আসতেন, তখন তার একটা উপাধিওয়ালা নাম দেওয়া হত, রাজা বিহারী মলের কন্যারও নাম দেওয়া হয়। এই বাবদে একটা ফরমানও জারি হয়, কিন্তু সেখানে বিহারী মলের কন্যার কোন নাম উল্লিখিত নেই। উপরন্তু জানাযাচ্ছে, জাহাঙ্গীর যোধপুর রাজের যে কন্যাকে বিয়ে করেন তার নাম যোধাবাঈ। রাজা বিহারী মল, আকবর, জাহাঙ্গীরের মধ্যের সম্পর্ক অথবা ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের তৈরি ইতিহাস আমাদের নতুন করে পড়তে হবে।
বড় জমিদারেরা তাদের ক্ষমতা আর জমি বাড়াবার চেষ্টা করতেন। অষ্টাদশ শতে অম্বরের জয় সিং অন্যের জমি দখল করে তার রোজগার বাড়াবার চেষ্টা করেছেন।
No comments:
Post a Comment