আমরা বাঙ্গালি অপরম্পরার, মূলত ইওরোপিয় ভাবধারার শিল্পদ্যোগীদের নয়, তাদের তৈরি শিল্প, তাদের প্রযুক্তি, তাদের উৎপাদিত পণ্যের, শিল্প ব্যবস্থাপনার কথা বলছি। পশ্চিমি শিক্ষায় শিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ, শিল্পদ্যোগী নিয়ে নানান গবেষণা, গল্পকথা ছড়িয়ে আছে বাঙ্গালি ভদ্রসমাজে - আজ সে বৃত্তান্তে ঢুকছি না। আমরা বাংলার পরম্পরার খাঁটি গাঁইয়া স্বদেশি উদ্যোগীরা, নিজেদের প্রযুক্তি, কাঁচামাল, শ্রম, জ্ঞান ইত্যাদি নিয়ে ওয়াপাগের নেতৃত্বে যে গবেষনার কাজ করছি, সেই অধিকারে এই প্রশ্নটা তুলছি।
ওয়াপাগ বা বঙ্গীয়পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ বাংলার কারিগরদের সংগঠন, সে সাংগঠনিকভাবে যেহেতু বাংলার প্রযুক্তি আর ব্যবসা নিয়ে কিছুটা অনুসন্ধিৎসু ফলে বহুকাল ধরে সে একটা মৌলিক প্রশ্ন করতে চেষ্টা করছে, স্বদেশি শিল্প আন্দোলন কতটা স্বদেশি।
স্বদেশি আন্দোলনের জোয়ারে একে স্বদেশি শিল্প আন্দোলন বলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কেন স্বদেশি বলব সেটা নিয়ে কোন ভাবনাচিন্তা হয়েছে কি? স্বদেশি শিল্প আন্দোলনকে কেন আদতে স্বদেশি বলা হবে? কোন দিক থেকে এই আন্দোলন স্বদেশি চরিত্রের ছিল? নিচে আমরা তার কতগুলি চরিত্র খুব ছোট করে আলোচনা করছি -
১। প্রযুক্তি
প্রযুক্তি বাংলার নয় - মূলত সাগরপারের - এতে বাংলার কারিগরদের বিকশিত প্রযুক্তির খুব বেশি স্থান ছিল না, যে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়েছে তার অধিকাংশের বিকাশ হয়েছে পশ্চিমে। কটা বাঙ্গালি কারগর তার প্রযুক্তি নিয়ে এসে কারখানাগুলিতে কাজ করেছেন?
২। পণ্য
পণ্য মূলত বিদেশি ভাবধারার। পলাশীর পর স্বদেশি আন্দোলনের কাল দেড়শ বছর পর। সেই সময় ধরে ইওরোপিয় জীবনধারণের ঐতিহ্য বহন করছে মনে-প্রাণে-দর্শনে-ভাবনায়-সাহিত্যে ইওরোপিয় হতে চাওয়া কলকাতা/ঢাকা ভিত্তিক ইংরেজি শিক্ষিত বাঙ্গালি। ইওরোপিয় গুণীদের হাতে ভদ্রমধ্যউচ্চবিত্তের কৃষ্টিগত গণহ্যতা সুসম্পন্ন হয়েছে। তারা মনে প্রাণে ইওরোপিয় - ইওরোপিয়দের তাড়িয়ে ইওরপিয় ভাবধারায় দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে। তার সুভদ্রজীবনযাপন তখন প্রায় ইওরোপিয় - ফলে স্বদেশি আন্দোলন, নেতৃত্ব তাই তার উৎপাদনীয় পণ্য মূলত ভদ্র জীবনযাপন কেন্দ্রিকই হবে, এতে আর আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? সেই সময়ের ভদ্রজীবনযাপন ঘিরে লেখা উপন্যাসগুলি পড়লে বোঝা যায় কিভাবে বৈদেশিক মূলত ইওরোপিয় জীবনযাত্রা বাঙ্গালি ভদ্রমধ্যবিত্তদের জীবনে কঠোর বাস্তব হয়ে উঠেছে। যে জন্য চিত্তরঞ্জন ইত্যাদি নেতাদের ঘটা করে স্বদেশি আন্দোলনের পরের দিকে বয়কট আন্দোলনে কোট টাই পুড়িয়ে খদ্দর ধরতে হয়। ভদ্র বাঙ্গালির মননে তখন আইসিএস হওয়ার স্বপ্ন উড়ছে - রমেশ দত্ত সত্যেন ঠাকুর তার আদর্শ। নিদেনপক্ষে আইসিএস না হতে পারলে ডেপুটি না হলে ঠ্যাঙ্গাড়ে পুলিশে চাকুরি না হয় ছোটখাট সরকারি চাকরির খায়েশ জাঁকিয়ে বসেছে। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রভাবী তাত্ত্বিক, ব্রিটিশ লুঠএর অন্যতম চিত্রী, রামবাগানের রমেশ দত্ত শেষ জীবন কাটান সুসভ্য লন্ডনে এবং জগদীশ্চন্দ্রকে কলকাতা ফিরে আসতে সক্রিয়ভাবে বাধা দিয়েছিলেন, রবিন্দ্রনাথ না থাকলে হয় জগদীশ্চন্দ্র লন্ডনেই বাস করতেন। আদ্যোপান্ত দেশজ ভাবধারায় নিষিক্ত জগদীশচন্দ্রের দৈনন্দিনের জীবনযাত্রা ইওরোপ কেন্দ্রিক ছিল।জাতীয়তাবাদী নেতা উমেশ ব্যনার্জী কিন্তু প্রথম জীবনে বিপ্লবী ছিলেন না। লন্ডন থেকে আইসিএস হয়ে এসে কাজে ভুল করে চাকরি খুইয়ে কংগ্রেসি হয়েছেন এটা মনে রাখা দরকার - চাকরি খোয়ানোর পর তিনি দরবার করতে ইংলন্ডেও গিছলেন কাজের কাজ হয় নি। ফলে ভদ্র বাঙালিদের জন্য যা কিছু উৎপাদন হচ্ছে তার সব কিছুই অন্তত বড় অংশই ইওরোপিয় জীবনযাত্রামূলক - যার সঙ্গে স্বদেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনযাত্রার বিন্দুমাত্র যোগাযোগ নেই। তারা ইংরেজিতে কথা বলেন, ইংরেজিতে স্বপ্ন দেখেন, ইংরেজিতে ভাষণ দেন, ইংরেজি মতে ইংরেজকে দেশ ছাড়াবার কথা ভাবেন, ইংরেজদের মত পণ্য ব্যবহার করেন, ইংরেজি সাহিত্য পড়েন, ইংরেজি সাহিত্যের অনুকরণে দেশিয় সাহিত্যের ভিত্তিস্থাপন করেন। ফলে তাদের জোবনে স্বদেশির ঠাঁই কোথায়?
৩। শিল্প ব্যবস্থাপনা
শিল্প উদ্যমের ব্যবস্থাপনার দর্শন বিদেশি,
৪। শ্রমিক আর পুঁজি
শুধু শ্রমিক পুরোটা আর পুঁজি কিছুটা দেশি।
৫। লুঠেরা দখলদারির চরিত্র
বাংলার পণ্য উদ্যমে কোনদিনই পেটেন্ট ছিল না, কিন্তু লগে লগে বড় পুঁজির হাত ধরে সেই দখলদারি, লুটেরা উদ্যমটাও এল।
ফলে স্বদেশি কতটা স্বদেশি সেটা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিৎ। Dipankarদার নির্দেশে ছাত্রী Tanushree এটা নিয়ে গবেষণা করছেন। ওঁরা প্রতিভাবান শিক্ষক ও ছাত্রী। আশাকরি ওঁদের থেকে আমরা সঠিক দিশা পাব।
আন্দাজ করি Gargaর স্বদেশি বিষয়ে উৎসাহ কম। তবুও তাঁকে জানালাম।
ওয়াপাগ বা বঙ্গীয়পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ বাংলার কারিগরদের সংগঠন, সে সাংগঠনিকভাবে যেহেতু বাংলার প্রযুক্তি আর ব্যবসা নিয়ে কিছুটা অনুসন্ধিৎসু ফলে বহুকাল ধরে সে একটা মৌলিক প্রশ্ন করতে চেষ্টা করছে, স্বদেশি শিল্প আন্দোলন কতটা স্বদেশি।
স্বদেশি আন্দোলনের জোয়ারে একে স্বদেশি শিল্প আন্দোলন বলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কেন স্বদেশি বলব সেটা নিয়ে কোন ভাবনাচিন্তা হয়েছে কি? স্বদেশি শিল্প আন্দোলনকে কেন আদতে স্বদেশি বলা হবে? কোন দিক থেকে এই আন্দোলন স্বদেশি চরিত্রের ছিল? নিচে আমরা তার কতগুলি চরিত্র খুব ছোট করে আলোচনা করছি -
১। প্রযুক্তি
প্রযুক্তি বাংলার নয় - মূলত সাগরপারের - এতে বাংলার কারিগরদের বিকশিত প্রযুক্তির খুব বেশি স্থান ছিল না, যে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়েছে তার অধিকাংশের বিকাশ হয়েছে পশ্চিমে। কটা বাঙ্গালি কারগর তার প্রযুক্তি নিয়ে এসে কারখানাগুলিতে কাজ করেছেন?
২। পণ্য
পণ্য মূলত বিদেশি ভাবধারার। পলাশীর পর স্বদেশি আন্দোলনের কাল দেড়শ বছর পর। সেই সময় ধরে ইওরোপিয় জীবনধারণের ঐতিহ্য বহন করছে মনে-প্রাণে-দর্শনে-ভাবনায়-সাহিত্যে ইওরোপিয় হতে চাওয়া কলকাতা/ঢাকা ভিত্তিক ইংরেজি শিক্ষিত বাঙ্গালি। ইওরোপিয় গুণীদের হাতে ভদ্রমধ্যউচ্চবিত্তের কৃষ্টিগত গণহ্যতা সুসম্পন্ন হয়েছে। তারা মনে প্রাণে ইওরোপিয় - ইওরোপিয়দের তাড়িয়ে ইওরপিয় ভাবধারায় দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে। তার সুভদ্রজীবনযাপন তখন প্রায় ইওরোপিয় - ফলে স্বদেশি আন্দোলন, নেতৃত্ব তাই তার উৎপাদনীয় পণ্য মূলত ভদ্র জীবনযাপন কেন্দ্রিকই হবে, এতে আর আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? সেই সময়ের ভদ্রজীবনযাপন ঘিরে লেখা উপন্যাসগুলি পড়লে বোঝা যায় কিভাবে বৈদেশিক মূলত ইওরোপিয় জীবনযাত্রা বাঙ্গালি ভদ্রমধ্যবিত্তদের জীবনে কঠোর বাস্তব হয়ে উঠেছে। যে জন্য চিত্তরঞ্জন ইত্যাদি নেতাদের ঘটা করে স্বদেশি আন্দোলনের পরের দিকে বয়কট আন্দোলনে কোট টাই পুড়িয়ে খদ্দর ধরতে হয়। ভদ্র বাঙ্গালির মননে তখন আইসিএস হওয়ার স্বপ্ন উড়ছে - রমেশ দত্ত সত্যেন ঠাকুর তার আদর্শ। নিদেনপক্ষে আইসিএস না হতে পারলে ডেপুটি না হলে ঠ্যাঙ্গাড়ে পুলিশে চাকুরি না হয় ছোটখাট সরকারি চাকরির খায়েশ জাঁকিয়ে বসেছে। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রভাবী তাত্ত্বিক, ব্রিটিশ লুঠএর অন্যতম চিত্রী, রামবাগানের রমেশ দত্ত শেষ জীবন কাটান সুসভ্য লন্ডনে এবং জগদীশ্চন্দ্রকে কলকাতা ফিরে আসতে সক্রিয়ভাবে বাধা দিয়েছিলেন, রবিন্দ্রনাথ না থাকলে হয় জগদীশ্চন্দ্র লন্ডনেই বাস করতেন। আদ্যোপান্ত দেশজ ভাবধারায় নিষিক্ত জগদীশচন্দ্রের দৈনন্দিনের জীবনযাত্রা ইওরোপ কেন্দ্রিক ছিল।জাতীয়তাবাদী নেতা উমেশ ব্যনার্জী কিন্তু প্রথম জীবনে বিপ্লবী ছিলেন না। লন্ডন থেকে আইসিএস হয়ে এসে কাজে ভুল করে চাকরি খুইয়ে কংগ্রেসি হয়েছেন এটা মনে রাখা দরকার - চাকরি খোয়ানোর পর তিনি দরবার করতে ইংলন্ডেও গিছলেন কাজের কাজ হয় নি। ফলে ভদ্র বাঙালিদের জন্য যা কিছু উৎপাদন হচ্ছে তার সব কিছুই অন্তত বড় অংশই ইওরোপিয় জীবনযাত্রামূলক - যার সঙ্গে স্বদেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনযাত্রার বিন্দুমাত্র যোগাযোগ নেই। তারা ইংরেজিতে কথা বলেন, ইংরেজিতে স্বপ্ন দেখেন, ইংরেজিতে ভাষণ দেন, ইংরেজি মতে ইংরেজকে দেশ ছাড়াবার কথা ভাবেন, ইংরেজদের মত পণ্য ব্যবহার করেন, ইংরেজি সাহিত্য পড়েন, ইংরেজি সাহিত্যের অনুকরণে দেশিয় সাহিত্যের ভিত্তিস্থাপন করেন। ফলে তাদের জোবনে স্বদেশির ঠাঁই কোথায়?
৩। শিল্প ব্যবস্থাপনা
শিল্প উদ্যমের ব্যবস্থাপনার দর্শন বিদেশি,
৪। শ্রমিক আর পুঁজি
শুধু শ্রমিক পুরোটা আর পুঁজি কিছুটা দেশি।
৫। লুঠেরা দখলদারির চরিত্র
বাংলার পণ্য উদ্যমে কোনদিনই পেটেন্ট ছিল না, কিন্তু লগে লগে বড় পুঁজির হাত ধরে সেই দখলদারি, লুটেরা উদ্যমটাও এল।
ফলে স্বদেশি কতটা স্বদেশি সেটা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিৎ। Dipankarদার নির্দেশে ছাত্রী Tanushree এটা নিয়ে গবেষণা করছেন। ওঁরা প্রতিভাবান শিক্ষক ও ছাত্রী। আশাকরি ওঁদের থেকে আমরা সঠিক দিশা পাব।
আন্দাজ করি Gargaর স্বদেশি বিষয়ে উৎসাহ কম। তবুও তাঁকে জানালাম।
No comments:
Post a Comment