এনকাউন্টারিং
ডেভেলাপমেন্টঃ দ্য মেকিং এন্ড আন্মেকিং অব দ্য থার্ড ওয়ার্লডঃ আর্তুরো এসকোবারএর
বই থেকে
দ্বিতীয় অধ্যায়
ঠাণ্ডাযুদ্ধের পরিবেশ
উন্নয়নের তত্ত্ব বিকাশের আলোচনায় বড় ভূমিকা পালন করেছে। পূর্ব-পশ্চিমের বিকাশের
ঐতিহাসিক শেকড় লুকিয়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার
ঘটনাগুলির মধ্যে। পূর্ব পশ্চিমের বিবাদ ১৯৪০এর দশকে এসে পড়েছিল তৃতীয় বিশ্বের
আঙ্গিনায়, এবং এই বিবাদের প্রতর্ক আর শিল্পোন্নত সভ্যতার ব্যবস্থাপনার রণনীতি
বিকাশে উন্নয়নের ধারনাটি মূল অনুঘটকের কাজ করল। আমেরিকা এবং সোভিয়েত রাশিয়ার
বিশ্ব-বিবাদের ছুতোয় আধুনিক প্রযুক্তি বিকাশ এবং উন্নয়ন প্রধানতম কর্ম হয়ে দাঁড়াল;
এবং এই বিবাদের ছুতোয় বিশ্ব রাজনীতি এবং কৃষ্টি প্রভাব ফেলা শুরু করল বিভিন্ন দেশে।
উন্নয়ণ তত্ত্বের
বিকাশের সঙ্গে সামরিকতার বিকাশের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৪৭এর রিও সম্মেলনে
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লাতিন আমেরিকার দেশগুলির মধ্যে সামরিক চুক্তি
স্বাক্ষরিত হয়। উন্নয়নের রণনীতির সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার ধারনাটি জুড়ে দিল তারা।
বিগত ১৫০ বছরে তৃতীয় বিশ্বে ১৫০টার কাছাকাছি যুদ্ধ লেগেছিল, তার অধিকাংশই তৃতীয়
বিশ্বের বাইরের শক্তির অংশগ্রহনের জন্য ঘটেছিল। তৃতীয় বিশ্ব আর প্রান্তিক রইল না,
ঠাণ্ডা যুদ্ধ আর শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে আনবিক অস্ত্রের বিবাদে তারা বিশ্ব
রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এল। যুদ্ধ আর অস্থিরতার সঙ্গে উন্নয়নের সরাসরি যোগ
আছে এমন একটা ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলল। ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসান এবং নতুন বিশ্ব
তৈরি হওয়ায় বিবাদের চরিত্র হয়ত বদলেছে কিন্তু তৃতীয় বিশ্ব থেকে গিয়েছে বিবাদ-ভূমি
হিসেবে(যেমন উপসাগরীয় যুদ্ধ, লিবিয়ায় বোমাবর্ষণ বা গ্রানাদা বা পানামায় আক্রমণ
ইত্যাদি)। স্থানিক জাতিগত যুদ্ধগুলি বাদ দিলে, দক্ষিণ(বা তৃতীয় বিশ্ব) আগের থেকে
আজ একীভূত উত্তরের দেশগুলির বিপরীতে পক্ষ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা
যুদ্ধের পর কমিউনিস্ট বিরোধিতায় পরিণত হল। উন্নয়নের অন্যতম ‘শাণিত’ যুক্তি কমিউনিজমের
ভয়। ১৯৫০এর কাছাকাছি সময়ের যুক্তি, যদি গরীব দেশগুলিকে উন্নত না করা যায় তাহলে তারা
কমিউনিজমের হাতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করবে। উন্নয়ন বিষয়ে প্রথমের দিকে যে কোন লেখায় এই
ধারনাটির প্রতিফলন থাকত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। কমিউনিজমকে প্রতিহত করার
পুঁজিবাদের এই যে উদ্যম, এটা শুধু শিক্ষা বা সামরিক চক্রে আটকে রইল না, আমেরিকা
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে, ছোটখাট সংগঠনে এবং আমেরিকিয় জনগণের মধ্যে এই ধারনাটি
ছড়িয়ে পড়ে। কমিউনিজমকে প্রতিহত করা, পুরোনো ইওরোপিয় উপনিবেশগুলিকে সোভিয়েত
যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পড়তে না দেওয়ার জন্য নানান ধরণের সাহায্যের হাত বাড়ানো শুরু
হল। বহুজাতিকদের শিল্পগুলি এবং তাদের লাভের গুড় এবং সর্বোপরি আমেরিকার অর্থনীতি
বাঁচাতে তৃতীয় বিশ্বের কাঁচামালের ওপরে নিয়ন্ত্রণের জন্য কোরিয় যুদ্ধের পর তৃতীয়
বিশ্বের দেশগুলির চরিত্রকে পুনর্মূল্যায়ন করল নতুন করে।
গরীব আর অশিক্ষিত
জনগণ
দারিদ্রের বিরুদ্ধের
যুদ্ধে যাওয়ার আরেকটি ‘শক্তিশালী’ যুক্তি ছিল খুব তাড়াতাড়ি জনসংখ্যার বাড়ার সমস্যা
নিয়ে কিছু একটা করা। জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে মন্তব্য এবং পক্ষ নেওয়ার কাজ হয়ে চলল দ্রুতগতিতে।
মোটাদাগের প্রয়োগবাদিতার কাজ শুরু হল। নতুন করে জনসংখ্যা বিষয়ে ম্যালথাসিয়
দৃষ্টিভঙ্গী এবং তার নিদানগুলি ঝেড়ে পুঁছে বের করে এনে তার ফলগুলি যে অবশ্য ফলবে সে
বিষয়ে ফতোয়া দেওয়ায় শুরু হল, যদিও অর্থনীতিবিদ আর জনসঙ্খ্যাবিদেরা এই বিতর্কে
সরাসরি উন্নয়নবাদীদের হাত দেখতে পাচ্ছিলেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিষয়ে নানান তত্ত্ব
এবং মডেল তৈরি এবং বিভিন্ন চলক আবিষ্কার করে, সেগুলির সঙ্গে রাষ্ট্রনীতি এবং
প্রকল্পের নানান দিক জুড়ে দেওয়া হল। পশ্চিমের অভিজ্ঞতা বলছে উন্নয়নের বাড়বৃদ্ধি ঘটলে
জনসংখ্যা কমতে থাকে। কিন্তু উন্নয়নের সেই দীর্ঘ সময় কেউ দিতে চাইলেন না। বিশ্ব
ক্ষমতাধরেরা উর্বরতা শক্তি কমাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার উদ্যম নিলেন।১৪
জনসংখ্যা বিষয়ে বিতর্ক বহুকাল ধরেই ছিল বিশেষ করে এশিয়ায়।
জাতি এবং জাতিবাদ বিষয়ের এটা প্রায় অক্ষদণ্ড, এমন মন্তব্য করাই যেতে পারে। কিন্তু চরিত্রে
আর আঙ্গিকে আলোচনাটা নতুন রূপ ধরে। জনৈক লেখক বলছেন, ‘It is probable that in the last five years
more copies have been
published of discussions related to population than in all the previous centuries” (Pendell 1951’। শিক্ষা ক্ষেত্রে বা সবে গড়ে ওঠা আন্তর্জাতিক সঙ্গঠগুলোয়
নতুন ভাবে নতুন স্বরে আলোচনা শুরু হল – তারা অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে জনসংখ্যার
বৃদ্ধির তত্ত্বকে জুড়ে দিলেন, কৃষ্টির সঙ্গে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের তত্ত্ব জুড়ে
দিলেন। ধনী দেশগুলির মাপদণ্ডে গরীবে দেশের তুলনা টানলেন – কখোনো উর্বরতার সঙ্গে
মৃত্যুর সম্পর্ক নিয়ে, ভবিষ্যতের বিকাশের সঙ্গে জনসংখ্যার বৃদ্ধির সম্পর্ক নয়ে,
জনসংখ্যা বৃদ্ধি কার্যকরভাবে রুখতে গেলে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে সে সব নিয়ে ইত্যাদি।
জাত এবং জাতি নিয়ে কয়েক দশক আগে যে ধরণের আলোচনা চলত, ঠিক সেই রকম করে বিজ্ঞানের
দোহাই দিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, জনস্বাস্থ্য এবং population biology নিয়ে নগ্ন জাতিবাদী
ঢঙে আলোচনা শুরু হল। জনসংখ্যার নতুন দৃষ্টিভঙ্গীতে কিভাবে সেটিকে বৈজ্ঞানিক এবং
প্রাযুক্তিগতভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়, সে সব নিয়েও আলোচনা শুরু হল।১৭
No comments:
Post a Comment