অষ্টাদশ শতকের
প্রথম দু দশকে এমন কি ১৭৩০এর প্রথমের দিকেও আফিম রপ্তানি ব্যবসার রাশ ছিল কিন্তু
ডাচেদের হাতে। কিন্তু ১৭৪০এর প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে ডাচ কোম্পানি পিছনে পড়তে
থাকে, বাংলায় তাদের অন্যতম প্রপ্তিদ্বন্দ্বী ব্রিটিশেরা বেশ কয়েক কদম এগিয়ে যায় সোরা
রপ্তানির ক্ষেত্রে। ১৭৫০এর প্রথম পাদে আবার দুটি কোম্পানির গড় বাৎসরিক সোরা
রপ্তানির পরিমান সমান সমান পরিমানে এসে দাঁড়ায়, বরং ডাচেরা একটু বেশি ছিল। ৯.১
তালিকায় ১৭৩০ থেকে ১৭৫৫ পর্যন্ত সময়ে পঞ্চবার্ষিকী সময় ধরে এই হিসেবেটি বিশদে বলা
হয়েছে।
১৭৪০এর প্রথম পাঁচ
বছরে দুটি কোম্পানির সোরা রপ্তানির মাত্রা চরমে পৌঁছেছিল। ১৭৫০পরে তা দ্রুত কমতে
থাকে। ডাচেদের রপ্তানি কমে ৩৫ শতাংশ, ব্রিটিশদের কমে ৪৫ শতাংশ। বাংলা থেকে বেশি
ডাচ রপ্তানির বছরটি হল ১৭৫০ সাল, যদিও এই বছর থেকে রপ্তানির মাত্রা কমতে থাকে। ১৭৪০এর
দশকের প্রথম পাঁচ বছরে ব্রিটিশেরা সব থেকে বেশি রপ্তানি করে আর ১৭৫০এ সব থেকে কমে।
এই তথ্য বিশ্লেষণ করলে বুঝতে পারি, বাংলা থেকে মোট রপ্তানিযোগ্য পণের রপ্তানি
মূল্যের সঙ্গে বাংলার সোরা রপ্তানির মোট মূল্যের কোন সাযুজ্য টানা যায় না। যদিও
সোরা রপ্তানির প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল জাহাজের খোল ভরিয়ে তার ভরকেন্দ্রকে স্থির
করা, কিন্তু ইওরোপ জুড়ে সোরার চাহিদার হ্রাস বৃদ্ধি সোরা রপ্তানিতে প্রাথমিক
প্রভাব ফেলেছে।
আফিমের উৎপাদন,
ক্রেতা এবং প্রতিযোগিতা
বাংলায় উৎপন্ন সোরা
গোটা অংশটাই ইওরোপে রপ্তানি করা হলেও আফিম আন্তঃএশিয় ব্যবসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ
পণ্য ছিল। মূলতঃ ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিপুল পরিমান আফিম বাটাভিয়ায় রপ্তানি
করত। এর তুলনায় প্রথম দশকগুলিতে ফরাসি বা ব্রিটিশদের অংশিদারি খুবই নগণ্য ছিল। বস্ত্র,
রেশম বা সোরা শিল্পে যে ধরণের ইওরোপিয় বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল ডাচেরা, আফিম
ব্যবসায় তা হয় নি। সুরাটে উতপন্ন মালব(মালওয়া) আফিম মালাবারে পাঠয়ে আফিম ব্যবসায় হাত
পাকিয়েছিল ডাচেরা। কিন্তু মালওয়া আফিমের দাম বিপুল পরিমানে বেড়ে চলায় তারা বাংলায়
উৎপন্ন আফিমের দিকে দৃষ্টি দিল। ১৬৬০, ১৬৭০এর দিকে ডাচেরা বাংলা থেকে বিপুল
পরিমানে আফিম মালাবারে পাঠিয়েছে, ক্রমশঃ তার দৃষ্টি গেল ইন্দোনেশিয় দ্বীপপুঞ্জের বাজারের
দিকে। এই অঞ্চল ক্রমশঃ হয়ে উঠল বাংলার আফিমের বড় বাজার। ১৬৮৩র ডাচ আফিম সমীক্ষা
বলছে, গোটা দ্বীপপুঞ্জের মোট আফিম চাহিদা হল ১১৬০০০ ডাচ পাউন্ড।
বাংলায় মূলত আফিম
উৎপাদন হত বিহারে, আর কিছু পরিমান উত্তরবঙ্গের রংপুরে। ১৬৮৮র হিসেবে দেখছি বিহারের
৪৮টা পরগণায় সাধারণ বছরে ৮৭০০ মন আফিম উৎপাদন হত, যার মধ্যে ৫৪০০ মন ছিল উতকৃষ্ট
মানের। মোট উৎপাদনের ১০ থেকে ১২.৫ শতাংশ বাংলা-বিহারে বিক্রি হত। ৩৪ থেকে ৪৬ শতাংশ
যেত এলাহাবাদ আর আগ্রা অঞ্চলে, বাকি ৪১.৫ থেকে ৫৫.৫ শতাংশ যেত অন্যান্য আঞ্চলিক ও
আন্তর্জাতিক বাজারে। এই সময়ে ডাচেরা ১০০০ মণ রপ্তানি করত। মোট উৎপাদন এর কাছাকাছি
ছিল অষ্টাদশ শতকের প্রথমের দিকে এবং এর পরে ডাচেদের রপ্তানির পরিমান বাড়তে থাকে
ক্রমশঃ। তার মেমরিতে ডাচ ডায়রেক্টর Sichtermann লিখছে চাষ ভাল
হলে মোট উৎপাদন হত ৪০০০ চেস্ট বা ৮০০০ মন। এরমধ্যে ২-৩০০০ মন কিনত ভারতীয়
ব্যবসায়ীরা বাকি ৫-৬০০০ মন কিনত ইওরোপিয় কোম্পানিরা। তবে ডাচ বরাত কখোনোই ১৮০০
চেস্ট বা ৩৬০০ মনের বেশি হয় নি, এর মধ্যে ভাগলপুর আর পুর্ণিয়ার উৎপাদন ধরা হয় নি।
No comments:
Post a Comment