Monday, December 4, 2017

গরীব কাহারে কয়২৬ - উন্নয়নের বিশ্ব রাজনীতি তত্ত্ব

এনকাউন্টারিং ডেভেলাপমেন্টঃ দ্য মেকিং এন্ড আন্মেকিং অব দ্য থার্ড ওয়ার্লডঃ আর্তুরো এসকোবারএর বই থেকে

দ্বিতীয় অধ্যায়

কলম্বিয়ার প্যাসিফিক উপকূলে যে সব গ্রামে গ্রামোন্নয়নের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেখানে প্রযুক্তির জ্ঞান বহু সময় আধুনিকতা আর উন্নয়নের সমার্থক পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘণবর্ষণের বনাঞ্চলে আফ্রো-কলম্বিয়ান চাষীদের মাঠ কর্মী হিসেবে হিসেব রাখা, চাষের ক্ষেত্র পরিকল্পনার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, সমবায়ের ব্যবসায়িকরণ, কৃষিতে আধুনিক উপকরণ যেমন কীটনাশক ইত্যাদি সব কটিই কনসিমেন্টো টেকনিকো (প্রাযুক্তিক জ্ঞান) নামে চিহ্নিত হয়েছে এবং এই জ্ঞানগুলি তাদের কাছে জীবনের গুণমান রূপান্তরের সামিল। প্রাযুক্তিক জ্ঞান প্রত্যেক চাষীকে দেওয়া হয়েছে সেই অঞ্চলেই। তবুও তাদের কয়েকজনকে শহরে নিয়ে গিয়ে নতুন চাষ এবং পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে ক্যাপাসিটাডো(প্রশিক্ষণ) দেওয়া হচ্ছে। এই হাতে গোনা চাষীরা উন্নয়নের অন্যতম বড় বাহক হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
তাদের জীবনকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই চাষীরা বলছেন যে আগে অজ্ঞ এবং উদাসীন ছিলেন। এই প্রকল্পে শিক্ষা পোয়ার আগে তারা জানতেন না কেন তাদের শস্য মরে যায়, আজ তারা জানেন যে নারকেল গাছ যে পোকা খেয়ে মেরে ফেলে সেগুলিকে একটি বিশেষ রাসায়নিক দিয়ে খতম করে দেওয়া যায়। তারা শিখেছেন পারিবারিক শ্রমকে মাত্র একটা কৃষিজমিতে নিয়োগ করে, বহুদূরে থাকা জমি একের পর এক করে চাষ করাই মঙ্গলের, কারন সেগুলিতে যেতে বেশ কয়েকঘন্টা সময় লাগে। এই দীর্ঘসময় ধরে হাঁটাটা মোটেই সদর্থক কাজ ছিল না। তাদের শব্দভাণ্ডারে efficiency নামক একটা শব্দ যোগ হয়েছে। তবুও তারা তাদের পুরনো প্রথা ছাড়তে পারে নি এখনও। একজন বললেন আজও জমিকে আদর করতে হয়, কথা বলতে হয়, এবং আজও তারা দূরের জমিতে পুরনোভাবে চাষ করে থাকেন। তারা আদতে মিলিয়েমিশিয়ে চাষের প্রথা তৈরি করে নিয়েছেন। শুধু যুক্তি দিয়ে আধুনিক কৃষিই করেন না, পুরনো পদ্ধতিতেও চাষ করেন। এই মিলিত মডেলের আলোচনায় ফিরব শেষের অধ্যায়ে।
উন্নয়নের ফল স্থানীয় স্তরে অনুভব করা যায়। এই স্তরেই উন্নয়ন আর আধুনিকতার ধারনাকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়, স্থানীয় প্রথা যা তোমার আছে, তার সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে পরিবর্তিত করে। স্থানীয় স্তরে উন্নয়নের ভাষার ওপর আরও কাজ করা দরকার তাহলে এই প্রতর্ককে আরও গভীর ভাবে বুঝতে পারব। This project requires in-depth ethnographies of development situations such as those exemplified earlier. For the anthropologists, Pigg concludes, the task is to trace the contours and cultural effects of development without endorsing or replicating its terms. I will come back to this principle in my discussion of Third World cultures as hybrid products of modem and traditional cultural practices and the many forms in between.

পরিশিষ্ট
এই অধ্যায়ে আমরা দেখলাম দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যে পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে তা জ্ঞানচর্চাগত এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটিয়েছে কিন্তু এর সঙ্গে আরও একটা কথা বলা দরকার  যে সব চলক তৃতীয় বিশ্বের দৃশ্যত পরিবর্তন এনেছে, তা নতুন এক ভাষার ও বাস্তবিকতার জন্ম দিয়েছে। বিপুল ঘণ তৃতীয় বিশ্বের ক্ষেত্র থেকে তুলে ক্ষমতার নতুন এক সমীকরণ গড়ে উঠছে। অনুন্নয়নকে বিশ্ব থেকে মুছে ফেলতে গিয়ে এটিই আজ রাজনৈতিক প্রযুক্তির অংশ হয়ে হাজার হাজার গুণিতকে বেড়ে উঠেছে।
উন্নয়ন বলতে চায় সামাজিক জীবন একটি প্রাযুক্তিক সমস্যা, উন্নয়নের পেশাদার - যাদের কাজই হল এই জ্ঞানচর্চা প্রয়োগের দক্ষতা, তাদের যুক্তিবুদ্ধির ওপরে এবং ব্যবস্থপনায় উন্নয়ন আনার সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিতে হবে। পরিবর্তন প্রত্যেক সমাজের শেকড়ে লুকিয়ে নেই - যদিও এটা বুঝেছিলেন ১৯২০, ১৯৩০এর দশকে তৃতীয় বিশ্বের বিশ্বের বহু বৌদ্ধিক মস্তিষ্ক (তাদের মধ্যে গান্ধীই শ্রেষ্ঠতম) – এই পেশাদারেরা ব্যবস্থাপনাগত প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি প্রয়োগ করে উন্নয়ন আর আধুনিকতার তৈরি করে দেওয়া মডেলে সমাজগুলোকে খাপে খাপে বসিয়ে দিতে চায়। যাদুগরের শিক্ষানবিশির মত মাঝে মাঝে যুক্তির স্বপ্নে জেগে উঠে উন্নয়নের পেশাদারেরা মনে করে সব সমাধানই তাদের হাতে রয়েছে, কিন্তু ভুলভাল বাস্তবতা তৈরি করেন।
এক সময় তৃতীয়বিশ্বের শাসকদের কাছে সর্বব্যপ্ত ক্ষমতা আর ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের মনোভাবে উন্নয়ন এমন এক সর্বরোগহর বড়ির কাজ করেছিল, যা নিয়ে তারা তাদের জনসংখ্যার ওপর যা ইচ্ছে তাই হস্তক্ষেপ করতে দিতে রাজি ছিলেন; ফলে প্রথম এবং তৃতীয় বিশ্বের অভিজাতরা জানতেন যে জনগন বিপুল অপুষ্টির শিকার হবে, যাকে ক্ষমতার পছন্দ হবে তাকেই তৃতীয় বিশ্ব তার প্রাকৃতিক সম্পদ বিক্রি করে দেবে, মানুষ আর পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রের বিনাশ ঘটবে, হত্যা আর অত্যাচার তার দেশের পরম্পরার সমাজকে বিনাশের পর্যায়ে নিয়ে আসবে; এটা এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে তৃতীয় বিশ্ব নিজেকে হীন অনুন্নত এবং অশিক্ষিত বলে মনে করত; নিজেদের কৃষ্টির ওপর নিজেরাই কুদৃষ্টি ছুঁড়ে দেবে, যুক্তি বুদ্ধিকে যারা পণ্য করছে কোন প্রশ্ন না করে তাদের পায়ে নিজেদের সঁপে দেবে; এটা এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই কারণে যে, সকলেই জানতেন উন্নয়ন যেটা হতে চলেছে, সেটি আদতে অসম্ভবকে অসম্ভব করার প্রতিশ্রুতি অর্জনের কালো মেঘ।

এই প্রতর্কের চার দশক পরেও তৃতীয় বিশ্বকে একই দৃষ্টিতে দেখার কাজে আজও প্রশ্ন ওঠে নি। ক্ষমতার যে আঙ্গিক তৈরি হয়েছে তা আজ আর অত্যাচার করে না বরং জুড়ে নেয়; অজ্ঞানতা নয় নিয়ন্ত্রিত জ্ঞানের দ্বারা; মানবিক উদ্বেগ নয় সমাজ কর্মের আমলাতান্ত্রিকতার মাধ্যমে। যে বাস্তবতারগুলির ওপর নির্ভর করে উন্নয়নের বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল, সেগুলি আজও জটিল আকার ধারন করছে, আরও নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে, তার পদ্ধতিগুলোকে আরও শাণিত করছে, আরও গভীরে পৌঁছনোর চেষ্টা করছে। 

No comments: