ওপরের যে স্বতঃসিদ্ধ আলোচনা করা গেল, সেটা আবার
নতুন করে উঠে এসেছে কয়েকজনের মনগড়া জোট তত্ত্ব প্রমানে বাংলায় বিপুল পরিমানে
সোনা-রূপো আমদানি আর ইওরোপিয় ব্যবসা বিষয়ে গবেষণায়। আর, একবার যদি প্রমান করে
দেওয়া যায় যে এই ক্ষমতা দখল আদতে ব্রিটিশ এবং বাংলার শাসন ক্ষমতায় থাকা
অভিজাতদের(যুদ্ধব্যবসায়ী, সওদাগর এবং জমিদার) একটা জোটের উদ্যম মাত্র, তাহলে
ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকা পলাশী চাক্রান্তকারীদের সঙ্গে জোড়ে না। বলার হল,
এই ধরণের পুরনো তত্ত্বের খুব সহজে মৃত্যু ঘটে না। সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু কাজে,
আরও সেজেগুজে তত্ত্বটার আমদানি ঘটছে, দীর্ঘকাল আগের হিল এবং সম্প্রতি ব্রিজেন কে
গুপ্তর হাত ধরে(Brijen K. Gupta, Sirajuddaitllah, p.32. For
rc,cent emphasis on the role of the European companies, and the influx of
bullion, see Marshall, Bengal,
pp.65,67; C.A. Bayly, Indian Society, pp. 49, 50.)।
গুরুত্বপূর্ণ, প্রাপ্তব্য সূত্রগুলি নির্ভর করে আমি
পুরোপুরি অন্য রাস্তায় হাঁটব। আলোচনার সুবিধের জন্য কতগুলি শীর্ষকে এইগুলিকে
ভেঙ্গে নিচ্ছি ক) ব্যক্তিগত ব্যবসা এবং উপসাম্রাজ্যবাদীতা, খ) ব্যবসা, দামি ধাতুর
আমদানি এবং পলাশী, গ) ফরাসী চন্দননগরে ব্রিটিশ আক্রমণ পলাশীর রাস্তা খুলে দেয়।
ক) ব্যক্তিগত ব্যবসা এবং উপসাম্রাজ্যবাদিতা
অস্বীকার করার উপায় নেই যে ১৭৫৬-৫৭র ব্রিটিশ-নবাব
দ্বন্দ্ব বোঝা দরকার সে সময়ের অবস্থা বুঝতে, কিন্তু সঙ্কটকে বুঝতে গেলে ফোর্ট
উইলিয়ম কাউন্সিল আর নবাবী প্রশাসনের নাজুক সম্বন্ধকে বুঝতে হবে। তা নির্ভর করছিল
ব্রিটিশ কোম্পানি আর ব্যক্তিগত বাণিজ্যের বিকাশের স্বার্থের ওপরে দাঁড়িয়ে।
তাত্ত্বিকভাবে কোম্পানির ব্যবসা সম্পাদন যদিও আমলাদের প্রাথমিক কর্তব্য ছিল,
কিন্তু যারা বিপুল সমুদ্র বিশাল সময়, দুর্লঙ্ঘ বাধা পেরিয়ে, অজানা অচেনা দেশ
বাংলায় চাকরি করতে আসত, বাস্তবিককভাবে তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল নিজেদের
ব্যক্তিগত ব্যবসার সমৃদ্ধি সাধন এবং খুব তাড়াতাড়ি বিপুল অর্থ নিয়ে ইওরোপে ফিরে
স্বাচ্ছন্দ্যে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া। অতএব তাদের বাংলায় কাজ করার মৌল উদ্দেশ্য
ছিল ব্যক্তিগত ব্যবসার সমৃদ্ধি। কোম্পানি চাকুরেদের চরিত্র এবং তাদের রণনীতি এবং
হয়ত ব্রিটিশ জাতীয় স্বার্থকে আমি উপসাম্রাজ্যবাদিতা(subimperialism) নাম দেব যা আদতে কোম্পানির কার্যকারিতার মধ্যে একটা সরকারের ভেতরে সরকার(imperum in imperio) তৈরি করে। লন্ডনের থেকে ছয় মাসের জাহাজি
দূরত্বে থেকে কোম্পানির আমলারা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তে তৈরি উপসাম্রাজ্যবাদিতা
প্রয়োগ করার সম্পূর্ণ সুযোগ লাভ করেছিল। ফলে অধিকাংশ সিদ্ধান্তই স্থানিক স্তরে
নেওয়া হত। যখন তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা খাদের কিনারায় এসে দাঁড়াত তখন তারা
কোম্পানির সম্পদ, ব্যবস্থাপনাকে ব্যবহার করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করত না, ১৭৫৬-৫৭য়
তারা ঠিক সেই কাজটাই করেছিল। এ প্রসঙ্গে ভুলে যাওয়া যাবেনা যে তারা লন্ডনের
কর্তাদের চাহিদাকে অস্বীকার করত, তারা জানত যদি কোম্পানির চাহিদা পূরণ করা যায় তা
হলে তাদের সাত খুনের মত কাজকর্মও কোম্পানির কর্তারা মাফ করে দেবে।
তাত্বিকভাবে ভাবা যায় কোম্পানির কর্মচারীদের
ভারতীয় ব্যবসার কারণেই উপসাম্রাজ্যবাদিতার সৃষ্টি। কিন্তু এই তত্ত্ব বাস্তবে
দাঁড়ায় না যদি আমরা ভারতজুড়ে ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক – কর্পোরেট এবং ব্যক্তিগত
কাজকর্মের ছাঁচটা বিশ্লেষণ করি। এটা অস্বীকার করার
কোন উপায় নেই যে কোম্পানির কর্মচারীরা ১৭১৭র ফরমানকে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ভুল
বিশ্লেষণ করেছিল এবং নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে আর স্থানীয় প্রশাসনকে শুল্ক না
দেওয়ার জন্য সেই ফরমানকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত দেশিয় এবং এশিয় বাণিজ্যকে
শুল্কমুক্ত বাণিজ্যে রুপান্তরিত করেছিল। স্বাভাবিকভাবে দেশিয় আইন অনুযায়ী স্থানীয়
প্রশাসন এ ধরণের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে আমলারা দরকারে থোক টাকা দিয়ে
সেই অচলাবস্থা কাটিয়ে নিত।
No comments:
Post a Comment