এনকাউন্টারিং
ডেভেলাপমেন্টঃ দ্য মেকিং এন্ড আন্মেকিং অব দ্য থার্ড ওয়ার্লডঃ আর্তুরো এসকোবারএর
বই থেকে
দ্বিতীয় অধ্যায়
ঐতিহাসিক অবস্থা ১৯৪৫-১৯৫৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৃতীয় বিশ্বের একট
নির্দিষ্ট ছবি তৈরি করা হল তাদের কাঁচামালের ওপর দখল করার লক্ষ্যে, ফলে অর্থনৈতিক
এবং রাজনৈতিক কাঠামো দিয়ে এই দেশগুলির সংযুক্তিকরণের চেষ্টা হল জটিল পদ্ধতির মধ্যে
দিয়ে। শুধু সান ফ্রান্সিসিকোয় ১৯৪৫ সালের সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র তৈরির পভূমিকার
সম্মেলনই নয়, গোটা চল্লিশের দশক জুড়ে শিল্পেঅনুন্নত দেশগুলির ভাগ্য নির্ধারণের
পালা চলল। এর থেকেও বড় কথা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে মূল প্রতর্ক উঠীল বিশ্ব
জুড়ে, তৃতীয় বিশ্ব এবং অনুন্নয়নকে কিভাবে দ্যাখা যাবে সেটা নিয়েও বিতর্ক চলে। এই
ধারণাগুলো ১৯৪৫ সালের আগে ছিলই না। এই আলোচনায় কিভাবে পূর্বের দেশগুলির সঙ্গে
পশ্চিমের দেশগুলি নিজেদের নতুন করে তুলে ধরবে তার কার্যকরী, প্রায়োগিক এবং
তাত্ত্বিক কাঠামো তৈরি হয়ে গেল। ১৯৫০এর প্রথম দিকে তিনস্তরীয় দেশের ধারণা – প্রথম
স্তর শিল্পোন্নত প্রথম বিশ্ব, দ্বিতীয় স্তরে সাম্যবাদী দেশগুলি এবং তৃতীয়স্তরে
গরীব শিল্পেঅনুন্নত দেশ – যেগুলিকে বলা হল যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়
বিশ্বের ধারণা তৈরি হয়ে গেল। কয়েক দশক পরে দ্বিতীয় শ্রেণীর দেশগুলির বিলুপ্তির
পরেও প্রথম আর তৃতীয়, বা আন্দোলনকারীদের ভাষায় উত্তর আর দক্ষিণ এই দুই শব্দে
বিশ্বের দেশগুলির ভূ রাজনৈতিক চিহ্নিতকরণ করা হয়ে চলেছে৭।
আমেরিকার প্রধান উৎসাহ ছিল ইওরোপের পুনর্গঠন। কেননা
তা হলেই উপনিবেশ তৈরি করে ইওরোপিয়রা এতদিন যেভাবে দেশগুলির বিপুল কাঁচামালের ওপর
দখলদারি করে নিজেদের বাঁচিয়ে এসেছে, সেটাকে নতুন করে সাজিয়ে গুজিয়ে নিজেদের
কুক্ষিগত করা যাবে। এশিয়া আর আফ্রিকার স্বাধীনতা আকাঙ্ক্ষার লড়াই বাড়ছিল ক্রমশঃ –
যার ফলে ১৯৫৫এর বামপন্থার দিকে ঝুঁকে থাকা বান্দুং সম্মেলন এবং জোটনিরপেক্ষ
আন্দোলনের শুরু হয়। চারের দশকে কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির কাঁচামালের দিকে নজর
রেখে এবং সেগুলির ওপর পকড় বাড়াতে বাড়াতে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের তেলের জন্যে, আমেরিকা
ইওরোপকে তার উপনিবেশ জোরদার করতে সহায়তা করেছে।
আমার উৎসাহ লাতিন আমেরিকার অবস্থা নির্নয় করা। আমেরিকার
বিরুদ্ধ পক্ষ হিসেবে উঠে আসছিল বাড়তে থাকা জাতীয়তাবাদ। গ্রেট ডিপ্রেসনের পরে বহু
লাতিন আমেরিকার দেশ স্বনির্ভর হয়ে নিজেদের দেশের অর্থনীতি সাজাতে শুরু করল।
সামাজিক আর রাজনৈতিক জীবনে ভদ্রমধ্যবিত্তের প্রভাব বাড়তে শুরু করল, সঙ্গঠিত
শ্রমিকও রাজনীতিতে আস্তে শুরু করে, এমন কি বামপন্থী সাম্যবাদীরাদেরও জোর বাড়তে
শুরু করে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, জাতীয় জীবনে গণতন্ত্র মৌলিক অক্ষদণ্ড হয়ে ওঠায়
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণীর চাহিদা, বিশেষ করে শ্রমিকশ্রেণীর চাহিদা পূরণ করার
একটা দাবি উঠে আসতে শুরু করল এবং দেশিয় অর্থনীতিতে সামাজিক ন্যায় গুরুত্বপূর্ন
ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। ১৯৪৫-১৯৪৭এর সময়ে বহু পূর্বের একনায়কতন্ত্রের হাত থেকে
গণতন্ত্রকে উদ্ধার করে আরও গভীরে শেকড় গাড়ার কাজ গতি পাচ্ছিল। এর আগেই বলেছি,
আমেরিকা এই অবস্থাকে ভুলভাবে দেখতে শুরু করে।
এশিয়া আফ্রিকার উপনিবেশবিরোধী লড়ায়ের পাশাপাশি
লাতিন আমেরিকার বাড়তে থাকা জাতীয়তাবোধের পাশাপাশি গোটা উন্নয়নের প্রতর্কের ওপর
প্রভাব ফেলে আরও কয়েকটা বিষয় – ঠাণ্ডা যুদ্ধ, নতুন বাজার খোঁজার উদগ্র বাসনা,
সাম্যবাদ এবং জনবিষ্ফোরণের আশংকা এবং বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে বড্ডবেশি নির্ভরতা।
No comments:
Post a Comment