Saturday, December 23, 2017

ব্রিটিশপূর্ব বাংলায় ব্যবসা - বাংলার ব্যবসা সঙ্গঠন - সোরা এবং আফিম ব্যবসা৪

উমিচাঁদের মুর্শিদাবাদের দরবারে প্রভাব ছিল অসীম এবং বিহারের প্রশাসনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল, কারণ ১৭৪১ থেকে টাঁকশালের মিন্ট মাস্টার (দারোগা?) ছিলেন(পাটনায় তিনি তার নাম স্বাক্ষর করেছিলেন উমিচাঁদ আগরওয়াল রূপে, বাড়ি আজিমাবাদ অর্থাৎ পাটনায়) ফলে তিনি আর তার ভাই সোরা ব্যবসা প্রায় দখল করে নেন।
১৭৪৫ সালে আলিবর্দি খানের থেকে দীপচাঁদ সরকার সরনের ফৌজদারি লাভ করেন যেখানে দেশের(এবং বিশ্বেরও) সব থেকে ভাল সোরা উৎপাদন হয়। তিনি সারণ, ছাপড়া আর ফতেপুরে সোরা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা আর গুদাম তৈরি করান, যেখান থেকে আমরা বুঝতে পারি, ১৭৪০এর দশকের শেষের দিকে কতদূর এই পরিবারটি বিহারের সোরা ব্যবসায় পকড় স্থাপিত করতে পেরেছিল। পাটনার ডাচ প্রধান ড্রাবিরের অভিযোগ, ১৭৪৮এ খ্বাজা আহমেদ এবং উমিচাঁদ, দীপচাঁদকে অর্থ সরবরাহ করছে, prompting him not to spare trouble nor cost to be master of all pette in Bihar এবং দীপচাঁদকে নবাব অধিকার দিয়েছে বিহারের সব এলাকায় সোরা উৎপাদন করতে the farm of all the petre। ১৭৪৮ সালের প্রথম দিকে ব্রিটিশেরা লিখছে দীপচাঁদ বিহারের সব সোরা এলাকা দখল করে।
১৭৪৭এর কাছাকাছি সময়ে কলকাতার উমিচাঁদ, হুগলির খ্বাজা ওয়াজিদ আর পাটনার দীপচাঁদের ত্রিভূজ পাটনার সোরা ব্যবসাকে মোটামুটি একচেটিয়া বানিয়ে নিয়ে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির সঙ্গে দরকষাকষি করতে থাকে। ইওরোপিয় কোম্পানিগুলি জাহাজএ সোরা পাঠানোর বাধ্যবাধকতা তারা বুঝত।
কোম্পানিগুলির রপ্তানির খাতায় সোরা খুব গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ছিল। সোরা ব্যবসার প্রভাব ও গুরুত্ব আমরা বুঝতে পারি ডাচ কর্তাদের বিহারের সোরা ব্যবসার বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা থেকে। ১৭৪৪এ Sichtermannএর মেমোয়ার্সে পাচ্ছি যে কর্তাটি বুঝতে পেরেছিল সোরার দাম বেড়েছে ব্রিটিশ-ডাচ প্রতিযোগিতার জন্য। Sichtermann  লিখছে আগে ছোট পরিমান বরাত দেওয়া হত বলে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ত না, কিন্তু বর্তমানে বিপুল বরাতের জন্য অবশ্যই দাদন দিতে হবে। সে এটাও মন্তব্য করেছে অগ্রিম দিয়েও সোরার দামের কোন হেরফের ঘটে নি, তিলমাত্র কমেছে মাত্র। তার পরের নির্দেশক Huijgheps মস্ত দোষ চাপিয়ে দিয়েছে ব্রিটিশদের ওপর, কেননা তারা যৌথতার চুক্তি মানে নি। সে বলছে ছাপড়ার ফৌজদার দীপচাঁদ ব্যবসাটাকে কুক্ষিগত করতে চাইছে যাতে ব্রিটিশদের সমস্ত পণ্য এবং সোরা দেওয়ার জন্য।
বিহারের নায়েব সুবাদার জানকিরামের উদাহরণ দিয়ে জাঁ কার্সেবুম(তার মেমোয়ারকে ভুল পড়েছেন কীর্তি নারায়ণ চৌধুরী। কীর্তির মতে জাঁ, খ্বাজাকে কীর্তিচাঁদের গোমস্তা বলেছে। মেমোয়ারে জাঁ gemagtigden শব্দটা ব্যবহার করেছেন যার আভিধানিক অর্থ empowered one। খ্বাজা তখন এত বড় ব্যবসায়ি, যে তার পক্ষে দীপচাঁদের গোমস্তা হওয়া অস্বাভাবিক। এটা বাস্তব যে উমিচাঁদের সঙ্গে খ্বাজার চুক্তি ছিল যে, সে পাটনা থেকে যে পরিমান সোরা হুগলিতে পাঠাবে, সেই সোরা খ্বাজাকে অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে হবে ত্রিমূর্তির লাভের জন্য) লিখছে ডাচেরা দীপচাঁদের থেকে ৫০০০০ মন ৩.৫টাকা প্রতিমনে কেনার জন্য প্রস্তুত ছিল, কিন্তু ১৭৪৭ সালে ৪২০০০ মন দীপচাঁদ হুগলিতে খ্বাজা ওয়াজিদের কাছে পাঠিয়ে দেয়, তাদের  সেই পরিমান সোরা বর্ধিতমূল্য ৬টাকা দিয়ে কিনতে হয় বাধ্য হয়ে। তার অভিযোগ দীপচাঁদ যেহেতু পরগণাগুলোতে ধার দিয়ে রেখেছে, ফলে ডাচেদের পক্ষে খোলা বাজার থেকে সোরা কেনা সম্ভব হচ্ছে না। দীপচাঁদকে সোরা বাজার থেকে বার করতে ডাচেরা হাজি আহমদকে ৪৫০০০ টাকা দিলেও বিশেষ কাজের কাজ হয় নি।
ব্যবসার চরিত্র বদল ঘটে ১৭৫৩ সালে খ্বাজা ওয়াজিদ একচেটিয়া ব্যবসার পরওয়ানা নিয়ে ব্যবসায় প্রবেশ করলে। ১৭৫৩ সালে সে মুর্শিদাবাদের দরবার থেকে এই অধিকারটি পেয়েছিল। খ্বাজার প্রবেশে জাঁ অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ করে লিখছে, trade in saltpetre 'had fallen entirely in his [Wazid's] hands and under his control' এবং ডাচেদের did not have courage to oppose it। ওয়াজিদ এই ব্যবসা সামলাত তার পাটনাট থাকা দালাল মীর আস্রফ এবং ভাই খ্বাজা আস্রফ। আরেক ডাচ নির্দেশক বিসডম লিখছেন ওয়াজিদ মাত্র ২৫০০০ টাকা নবাবকে দিয়ে এই সুবিধেটি হস্তপগত করে। এই তথ্যটা খুব গুরুত্বপূর্ন যে খ্বাজার একচেটিয়া অধিকার সত্ত্বেও ডাচেরা অসমিয়া দালালদের থেকে ৩.৫ টাকা দরেই এমন কি ১৭৫৬ সালেই সোরা পেয়েছে। উমিচাঁদ আর খ্বাজার জোট সোরা ব্যবসায় জুটে পরেন। তাই ওয়াজিদের দখলে থাকা সোরা উমিচাঁদ ১৭৫৮ অর্যন্ত ব্রিটিশদের দিয়েছে, তারপর হাতের পুতুল মীর জাফরের থেকে কোম্পানি সেই অধিকার নিজেদের তাঁবে নেয়।
(চলবে)

No comments: