ইওরোপিয়
কোম্পানিগুলির বাংলা থেকে গৌণদ্রব্য রপ্তানির মধ্যে ছিল আফিম, সুতো, সোরার মত
কয়েকটি দ্রব্য। সুতি আর রেশমবস্ত্রর তুলনায় এই পণ্যগুলির রপ্তানিযোগ্য মূল্যমান
খুব নগণ্য হলেও বাংলায় কোম্পানির ব্যবসা ব্যবস্থায় এই পণ্যগুলির গুরুত্বপূর্ণ অবদান
ছিল। মোটামুটি প্রধান ইওরোপিয় কোম্পানিগুলি বাংলা থেকে সোরা ইওরোপে রপ্তানি করলেও
আফিম কিন্তু ইন্দোনেশিয় দ্বীপপুঞ্জগুলিতে রপ্তানি করত কেবল ডচেরা। ব্রিটিশ এবং
ফরাসীরা ভারত এবং আশেপাশের দেশে আফিম বেচত। খাদ্যশস্য যদিও রপ্তানির মধ্যে পড়ত,
কিন্তু সেগুলোর মোট মূল্য এতই নগণ্য ছিল যে আপাতত সেগুলি আমরা আলোচনার মধ্যে আনছি
না।
সোরার উৎপাদন আর
উৎপাদক
সোরা রপ্তানির
দুটি গুরুত্ব ছিল, প্রথমটি জাহাজএর খোলে ভরিয়ে জাহাজের ভরকেন্দ্রটি(ব্যালাস্ট)
রক্ষা করা এবং যুদ্ধের অন্যতম উপকরণ হিসেবে উচ্চলাভে বিক্রি। সোরা বারুদ তৈরির গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান বলে ইওরোপে এর চাহিদা অসীম ছিল, অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে ইওরোপজুড়ে
যুদ্ধের পরিবেশের জন্য। সোরা জাহাজের খোলে রেখে জাহাজের ভরকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার
করা হত এবং একই সঙ্গে একে লাভে বিক্রি করতে পারত। বাংলায় যদি সোরা না পাওয়া যেত
তাহলে তাদের দেশে জাহাজ নিয়ে যাওয়ার সময় লোহার মত অলাভজনক পণ্যকে ব্যালাস্ট হিসেবে
ব্যবহার করতে হত। তাই আমরা যে সময়টি আলোচনা করছি, সে সময়ে প্রত্যেকটি ইওরোপিয়
কোম্পানি সোরাকে তাদের রপ্তানি পণ্য হিসেবে গুরুত্ব দিত।
সোরার দেশ ছিল
বিহার, মূলত পাটনাকে ঘিরে বিপুল পরিমানে সোরা উৎপাদন হত। বিহারের সিঙ্গিয়া, ছাপরা আর
মাউ(Mouw) অঞ্চলে মূলত
উচ্চমানের সোরা উৎপাদন হত। এই সোরার বাণিজ্যিক নাম বিহার বা পাটনা সোরা। এছাড়া
ভাগলপুর, পুর্ণিয়া এবং উত্তরবঙ্গেও কিছু সোরা তৈরি হত, কিন্তু সেগুলির গুণমান খুব
ভালছিল বলা যাবে না এবং উৎপাদনের পরিমানও কম ছিল। ১৬৮৮ সালের ডাচ সমীক্ষা বলছে
বিহারের ২৮টি পরগণাজুড়ে ২২৬২০০ মণ সোরা উৎপাদন হত এবং পরিশ্রুত করলে তার পরিমান হত
১২৭২৩৮ মন। এর মধ্যে ১১২০০ মন সুবাতেই ব্যবহৃত হত। বাকি ১০৫২৩৮ মন রপ্তানি হত।
অষ্টাদশ শতকের প্রথমপাদে বাৎসরিক গড় উৎপাদন ক্ষমতা এই পরিমানের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করত।
১৭৫৫ এবং ১৭৬৩ সালে স্মৃতিকথায় লুই টাইলিফার্ট(Louis Taillefert)এর বাৎসরিক
উৎপাদনের পরিমান জানাচ্ছেন ১২০০০০ থেকে ১৪০০০০ মণ, এর মধ্যে ডাচেরাই বছরে ৬০,০০০
মণ রপ্তনি করত।
বাংলায় তিন ধরণের সোরা
উৎপাদন হত পরিশ্রুতটির নাম কলমি বা দোবারা-কাবেসা(kalmi, dobara-cabessa), দুবার ফোটানোর
নাম দোবারা আর অপরিশ্রুতটির নাম ছিল কাঁচা। কোম্পানিগুলি পরিশ্রুতটাই বিহার থেকে
রপ্তানি করত, কারণ অপরিশ্রুতটিকে বারুদ তৈরির কাজে ব্যবহার করা যেত না। এছাড়া
অপরিশ্রুতটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ছিল না কারণ সোরার প্রত্যেক ধরণের সোরার পথকর আর
রপ্তানি শুল্ক একই ছিল। সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ডাচ আর ব্রিটিশ কোম্পানি তাদের
কুঠিতে সোরা পরিশ্রুত করে নিত কিন্তু অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে তারা পরিশ্রুতকরণের
কাজ বন্ধ করে দেয়।
লুনিয়া নামে এক
ধরণের মানুশ সোরা তৈরি করত, ডাচেদের খাতায় এদের নাম দেওয়া হয়েছে ackerbouwers। লুনিয়াদের থেকে পাইকার
বা আসামি(ডাচেদের ভাষায় voorkoopers) সোরা সংগ্রহ করে
পরিশ্রুত করত। লুনিয়ার রাষ্ট্রকে এক ধরণের কর দিত ব্রিটিশদের খাতায় এর নাম দেওয়া
হয়েছে attrophy। আবার অনেক সময়
বিদেশিয়রা কর আরোপ করত। ১৭১৯ সালে ব্রিটিশ আমলা ব্রাউনি এবং বারকার শেখ গোলাম
মহম্মদ মানে একজন আসামীর সঙ্গে মিলে অসমিয়াদের ওপর কর চালু করে, এবং ফোর্ট
উইলিয়মের প্রেসিডেন্টকে এই কাজের সাফাই দিতে গিয়ে বারকার বলে সে এই কাজটি করেছিল
কারণ, protection
of the assamies from any trouble from the government।
No comments:
Post a Comment