খোজা খিজির প্রহেলিকা
নীলবর্ণের খোজা খিজর সমুদ্রের গভীরতা এবং জলের শুদ্ধতার
ইঙ্গিত। তিনি আরবি গল্পকথাতেও খুব জনপ্রিয়। অল খিদরএর(শব্দগতভাবে নীল মানুষ, আর
উচ্চারিত হয় খিদর, খিদার, খিজর, খিজার রূপে) অবস্থান গবেষক-তাত্ত্বিকদের কাছে অবিবাদী
নয়, কারোর কাছে তিনি ঋষি(Abdan Saalih), কারোর কাছে তিনি নবী। কেউ কেউ বলেন তিনি বাস্তবে ছিলেন।
কেউ বলেন তিনি বিশ্বজয়ী উজির, যিনি আব্রাহামের সময় বর্তমান ছিলেন, কেউ আবার তাঁকে
আলেকজান্দারের পরামর্শদাতাও বলে থাকেন। Qur’an sura as-Kahf (18:66)এর উল্লেখে মনে করা হয় তাঁর
সঙ্গে মোজেস দ্যাখা করেন, মোজেসের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে সঙ্গ দিতে অনুরোধ করেন।
আল খিদরের সঙ্গে আলেকজান্ডারের নাম জড়িয়ে আছে। তিনি তাঁর
সঙ্গে ছিলেন। তিনি এবং আলেকজান্দার অন্ধকারের পথ পেরিয়ে জীবনের জলের কাছে পৌঁছান। আলেকজান্ডার
সেই পথ হারিয়ে ফেললেও খিদর সেখানে যান এবং অনন্ত জীবন লাভ করেন। জর্ডনের মাহিতে
খিদরের নামে একটি সমাধি মন্দির আছে। কুয়েতের ফাইলাকা উপকূলে তাঁর নামে উদ্দেশ্য
করে বহু প্রাচীন একটি দরগা আছে, অনেকে বলেন সেটি খোঁড়া হলে মেসোপটেময়ার বিপুল
বন্যার গল্পকথার সূত্র হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে। যদি পরিকল্পিতভাবে ভারত সাগর, পারস্যের
উপসাগর এবং লোহিত সাগর উপকূল অঞ্চলের লোককথা, উৎসব, সামুদ্রিক কৃষ্টির সঙ্গে জুড়ে
প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়, তাহলে খিজরের নামে বিপুল সংখ্যক দরগা নজরে
আসবে। এই ধরণের নেটওয়ার্কএর দিকে নজর রাখলে দ্যাখা যাবে প্রত্যেক সমাজ তাদের
সামাজিক কৃষ্টিগত প্রথা অনুযায়ী খোজা খিজিরকে আপন করে নিয়েছে। ঢাকার কাছে
নারায়ণগঞ্জের মধ্যযুগের খিজিরপুরে ষোড়শ শতে ইশা খাঁর রাজধানী ছিল। এটি মুঘলদের
হাতে আসার পর সুবা ঘোষিত হয় এবং নাম হয় সরকার বাজুহা খিজিরপুর।
আর্থারের Sir Gawain and the Green Knight গল্পতে যে সবুজ নাইটের কথা বলা হয়েছে, তিনিই খিজর। ধর্ম
যুদ্ধের সময় হয়ত সবুজ নাইটের ধারনাটি আরব থেকে ইওরোপে যায় এবং ইওরোপের সবুজ
মানুষের চেহারা নেয়। ১২৩৭ সালে তৈরি বাম্বার্গের গ্রিনম্যানের একটা মূর্তি দেখি বামবার্গের
ক্যাথিড্রালে ২০০৭এর গ্রিষ্মে, কিন্তু তিনি ছিলেন উর্বরতার প্রতীক। আদতে খাজা খিজরের
গল্প গোটা পূর্ব পশ্চিমে ছড়িয়ে গিয়েছে(Cheetham, Tom, 2004, Green Man, Earth Angel: The
Prophetic Tradition and the Battle for the
Soul of the
World)।
বাংলায় বেরা ভাসানের উতসব খিজরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়।
সালিম আল্লা তারিখিবাংলায় বলছেন, মুর্শিদকুলি খাঁ আলো দিয়ে সাজানো কাগজের নৌকোগুলি
নদীতে ভাসিয়ে নবী খিজরের উদ্দেশ্যে নিবেদন করতেন। ১৯৬১ সালের মুর্শিদাবাদ বিষয়ে West Bengal
District Census Handbook, 1961 বলা হচ্ছে, Another old
ceremony still observed at Murshidabad … is the Bera or festival of
Khwaja Khizr। চার্লস স্টুয়ার্টের History of Bengalএ বলছেন The eastern parts of Bengal are
intersected by rivers and creeks, navigable at all
seasons of the year – the mode of travelling is by water – the veneration of the
inhabitants for the tutelary deities, who are
supposed to preside over the rivers and waters, is
carried to an extreme, both by Hindoos and Mohameddans – even the present governors are obliged
to comply with the superstition of
their subjects by making, at Dacca, an annual offering to Khwaja Khizr (supposed to be
the Prophet Elias) to propitiate his good offices in protecting their inland commerce। ব্লকম্যানের ধারণা এটি হিন্দু উৎসব কিন্তু খিজিরের
উদ্দেশ্যে নিবেদিত - the guide of
wanderers who lose their way in the darkness of the night। আশুবাবু ব্লকম্যানের দৃষ্টিভঙ্গীকে সমর্থন করছেন। তিনি
মনে করেন এটি সিদো, নদী আর গঙ্গাপুজা(পরে এ নিয়ে আলোচনা হবে), এবং খিজিরের মুসলমান
উৎসব শুরু করেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
No comments:
Post a Comment