হিন্দু-ইসলামি বিশ্ব
বাংলা আর বাঙালির মনে জল যে একটা অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক তৈরি করেছে তা আমরা প্রতিষ্ঠা করলাম। মাছ, সাপ, শুশুক, কচ্ছপ(tortoises, turtles), গোধিকা(lizards) বাংলার মূর্তিবিদ্যায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে(লেখিকার Strange Riches)। ১৫৭৫ সালে বাংলা মুঘল সাম্রাজ্যের অংশ হলে আকবর বাংলায় যে সুবাদার পাঠালেন তার রৌপ্য ফলকে একটি মাছের প্রতীক আঁকা ছিল। সেটি এখনও মুর্শিদাবাদের হাজার দুয়ারি প্রাসাদে রাখা আছে।
কিন্তু ইসলামি কৃষ্টি যেটি মরুভূমির মধ্যে জন্মেছিল, তার সঙ্গে জলের সম্পর্ক কি ছিল? বেরা ভাসানের মত প্রথার উদাহরণ পাচ্ছি প্রথম সময় থেকে পারস্য-বিশ্বজুড়ে এবং ভারতের প্সচিম উপকূলজুড়ে যে সব আরবি ব্যবসায়ী বহুকাল ধরে আসছেন, তাদের সূত্রে(বম্বের উদাহরণ Dr. John Fryer, A New Account of East India and Persia এবং গুজরাটের উদাহরণ Varadarajan, Lotika 1980, ‘Traditions of Indigenous Navigation in Gujarat’, South Asia: Indian Ocean Issue,)। দুটি জায়গাতেই দুটি প্রথা হিন্দু মুসলমান উভয়কেই যুক্ত করেছিল, কারণ সমুদ্র সকলের(সৌরাষ্ট্র আর কচ্ছে দরিয়া লাল উদারিয়ার নাম সাগর দেব আর হিন্দওয়ায়ি পীর জিন্দ – যিনি আদতে লোহানি আর খারওয়াদের বরুণদেবের মতই এবং খিজির পীরকে হিন্দু মসলমান উভয়েই শ্রদ্ধা করেন। বরদারাজন বলছেন খিজিরের নাম দরিয়া পীর বা জিন্দা পীর। আশুতোষ ভট্টাচার্যের বাংলার লোকসংস্কৃতিতে দেখি দরিয়া পীর বাংলাতেও পুজ্য)। ফলে আমাকে এখন দেখাতে হবে বাংলার বেরা ভাসান কিভাবে এবং কেন ভারতীয় সমুদ্র জগতে সমুদ্র দেবতা আর জন্তজানোয়ারদের স্তুতির জায়গা থেকে অন্যান্যদের তুলনায় আলাদা।
কখোনো কখোন এই আচারগুলি কোন পীর বা রক্ষক দেবতা(guardian spirit)কে ঘিরে আবর্তিত হয়। খাজা খিজির, মুসলমান বিশ্বের সমুদ্র যাত্রার রক্ষক দেব, ভারতীয় সমুদ্র বিশ্বের প্রায় সব জায়গায় পূজিত হন। খাজা খিজির ওরফে ইলিয়াস নবিকে বাংলায় নিয়ে আসেন আরব ব্যবসায়ীরা, যখন তারা নিঝঞ্ঝাট সমুদ্র যাত্রা কামনা করত। এই তথ্যগুলি আমাদের ইতিহাস শিখিয়েছে।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment