বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড দ্য ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলিউশন(১৭৬৭-১৮৫৭)
থেকে
তবে বাংলার নৌশিল্পে ব্রিটিশ উদ্যমীদের সাহায্য এসেছিল অষ্টাদশ শতে। ১৭৬৯তে
১৩৮ টনের আমাজন এবং ১৭৭০এ ১৮০ টনের মিনার্ভা তৈরি হল। তারপরে শূন্য। কিন্তু আবার
১৭৮০তে হায়দার আলিসূত্রে কর্ণাটকে যে মন্বন্তর হয়, সে কাণ্ডে খাদ্যশস্যের চাহিদা
বাড়ায় সিলেটের কালেক্টর লিণ্ডসের উদ্যোগে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম আর সুন্দরবনে ৪০০
টন বহন ক্ষমতা বিশিষ্ট ২০টি জাহাজ তৈরি হয়। সেই বহরে বিপুল পরিমানে চাল পাঠানো হয়
মাদ্রাজে। কিন্তু তাড়াতাড়ি বানাতে গিয়ে নিম্ন মানের কাঁচামাল ব্যবহার করায় সেই
প্রকল্পটি পরের দিকে আর এগোলোই না।
এর পরের জাহাজ তৈরির ঘটনা কলকাতা কেন্দ্রিক। এক্কেবারে
নিজের ১ লক্ষ পাউন্ড অর্থ বিনিয়োগ করে কর্নেল হেনরি কলকাতায় জাহাজ তৈরির জন্য একটি
ড্রাই ডক আর মেরিন ইয়ার্ড তৈরি করলেন। নিজে প্রযুক্তিবিদ, সেনায় কাজ করার অভিজ্ঞতা
সম্পন্ন এবং জাহাজ মালিক ছিলেন। তিনি কলকাতায় সুরমন খালের মুখে এই কাজের জন্য
সরকারি অনুমতি চাইলেন। ১৭৭২ সালে অনুমতি মিললেও সঠিক জমি না পাওয়ায় বহু দেরি হয়ে
যায়। জমির মালিকানা নিয়ে গণ্ডগোল শুরু হলে আদালতের হস্তক্ষেপে ওয়াটগঞ্জে কাজ শুরু
হয়। কর্ণেল ওয়াটসন ১৭৮১তে ৪৮৩ টনের ননসাচ এবং ১৭৮৮তে ৩৭০টনের সারপ্রাইজ তৈরি করেন
যুদ্ধ আর ব্যবসা উভয়ের জন্য জাহাজকে তৈরি করে। ইওরোপিয় নির্দেশনায় স্থানীয় কারিগর
দিয়ে সেই জাহাজগুলির বেশ প্রশংসাই হল, The ship [Nonsuch] is a proof not
only of good workmanship, but of the durability
of her materials; as she is still [1800] reckoned in the first class of the
country ships; and was last year employed by the Government as cruizer, for
the protection of trade, forming one of the Bengal squadron.।
পরের দিকে এটি নিয়মিত চিনে আফিম বহন করে নিয়ে
গিয়েছে। ননসাচ ১৮০২ সালে ডুবে যায়, আর ১৭৯৮ সালে সারপ্রাইজ মুসলিপত্তনমে ফরাসিরা
দখল নিলে ওয়াটসনের লাভের প্রকল্প ডুবে গিয়ে তাকে কপর্দকহীন বানিয়ে দেয়। ব্যাঙ্কশালে
১৭৯০ সালে সরকারিভাবে পাইলট জাহাজের জন্য একটি ড্রাইডক বানানো হয়।
ওয়াটসেনের সফল উদ্যমে বহু ব্রিটিশ বিনিয়োগকারী
বিনিয়োগ করতে আসে। সেসময় জি জিলেট এন্ড কোং অন্যতম প্রথম দিককার উদ্যমী। ১৭৮৮তে
৭০০ টনের হিন্দুস্তান, ১৭৮৯তে ১৯৭ টনের এন এলিজা এবং ৪৫০ টনের স্পিকি, ১৭৯০তে ৪৬৯
টনের রিলায়েন্স, ১৭৯৩তে ৭৬ টনের ইল নেটুনো, ১৭৯২ সালে ২০৬ টনের ব্যাঙ্গালোর এবং
৩০৪ টনের হেয়ারেস, ১৭৯৩তে ৫১৭ টনের পেগি, ১৭৯৪তে ৪০২ টনের লছমি, ৮১৫টনের
গ্যাব্রিয়েল তৈরি হয়। সে সময়ে আরেকটি সংস্থা জি ফোরম্যান এন্ড কোং(১৮০০ সালে নাম
হয় জি গিলমোর এন্ড কোং) ১৭৮৯ সনে ৫৭১ টনের অরোরা এবং ঐ বছরেই ৭৭০ টনের আর্ল অব
মোরিংটন, ১৮০০ সালে ৩৫০ টনের আরান এবং ৭৭০টনের মোরিংটন তৈরি করেন। অষ্টাদশ শতকের
শেষ পাদের দু দশকে কলকাতায় ৩৮টা জাহাজ তৈরি হয়। শিল্প বিকাশ বিষয়ে ১৮০০ সালে
ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি লিখলেন, The port of Calcutta contains about
10,000 tons of shipping, built in India, of
a description calculated for the conveyance of cargoes. From the quantity of
tonnage now at command in the port of Calcutta, from the state of perfection which
the art of shipbuilding has already attained in Bengal (promising a
still more rapid progress and supported by an' abundant and increasing supply
of timber), it is certain that this port will always be able to furnish
tonnage to whatever extent may be
required for conveying to the Port of London
the trade of the private British merchants of Bengal.।
১৭৮১ থেকে ১৮০৩এর মধ্যে বাংলায় অন্তত মোট ৩৯০৮০
টন বহন ক্ষমতাসম্পন্ন ৫৬টা জাহাজ এবং ৯৩টা স্নো(দুটি মাস্তুলওয়ালা জাহাজ) তৈরি হয়।
এদের মোট মূল্য হল ৫.১০ মিলিয়ন স্টার্লিং রুপি।
এর পরের সময় নৌশিল্পের বাড়বৃদ্ধি ঘটে। কোম্পানির
নৌপ্রযুক্তিবিদ ডবলিউ ওয়াডেনএর তত্ত্বাবধানে খিদিরপুর ডক গড়ে ওঠে। ১৮৩০এর মধ্যে
কোম্পানির বাণিজ্যের প্রয়োজনে জাহাজ বানানো ছাড়াও, ব্যক্তিগত উদ্যমীদের জন্য ২৪টা
জাহাজ তৈরি করে। ১৮০০-১৮৪০এর মধ্যে ২৯টা জাহাজ তৈরি কোম্পানি তৈরি হয় কলকাতার
আশেপাশে।
এই উদ্যমের সফলতায় জাহাজ তৈরির পরিমান বাড়তে
থাকে, ১৮০১ থেকে ১৮৪৪এর মধ্যে ৩৩৩টা জাহাজ যেগুলোর মোট বহন ক্ষমতা ১,৩০,০০০ টন
তৈরি হয়। ১৮০০-০৪এর মধ্যে ৬৩টা তৈরি হয়, ১৮১০-১৪র মধ্যে ৫০টা, ১৮১৫-১৯এর মধ্যে ৫৫টা
জাহাজ তৈরি হয়। জাহাজগুলির সর্বোচ্চ গড় পণ্যবহন ক্ষমতা (ডেডওয়েট) ছিল ৪০০টন। ১৭৮৮-১৮৪৫এর মধ্যে বাৎসরিক টনেজের হিসেব
দেওয়া হয়েছে জোড়পাতা ৬.১এ।
বিপুল কর্মশোধক তহবিল(sinking fund) এবং পুঁজি বিনিয়োগ হতে থাকে জাহাজ শিল্পে। কর্মশোধক
তহবিল বিনিয়োজিত হয় কলকাতার আশেপাশে প্রচুর পরিমান ডক ইয়ার্ড তৈরির জন্যে। এগুলির
মধ্যে প্রধানগুলি হল সালকিয়ার বেকনের ডক(১৭৯৬-৯৭), গিলমোর্স ডক(১৮০১) এবং ওয়াডেলের
ডক(১৮৩৮), হাওড়ায় ব্রান্ডির ডক(১৮০১) এবং স্মিথের ডক(১৮০৮), খিদিরপুরে ওয়াডেলের
ডক(১৮০৩) কিডস ডক (১৮৩৬)। প্রথমদিকে কাজের সূত্রে স্মিথের ডক প্রথমস্থান অধিকার
করলেও কলকাতা ডকিং কোম্পানি বেকনের ডক ২ লক্ষ টাকায়, এবং খিদিরপুরের দুটি ৩৬৩৭৩৩ টাকায় আর সালকিয়ায় আরও দুটি ডক ২১৬০০০
তাকায় কিনে এক নম্বর স্থান অধিকার করে। ওয়াটসনের ডকে ৮,০০,০০০ টাকা (১পাউন্ড = ৮
স্টার্লিং টাকা) বিপুল বিনিয়োগ ধরে একটি ডক তৈরির গড় বিনিয়োগ ছিল ১,৬৩,২৯০টাকা। এই
অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ডকগুলির মোট বিনিয়োগ ছিল ২.৩৭ মিলিয়ন টাকা।
No comments:
Post a Comment