Sunday, November 5, 2017

বাংলার কুমোর বাড়ির শ্রী - দরজায় দেওয়া আলপনা

'আমরা বিশ্বকর্মার পুত্র। আমাদের হাতে সম্পদ থাকবেক লাই। আমাদের কাজই হইল বাংলা মাকে মাথা লামিয়ে সেবা করা' - সগর্বে(শহুরেরা বলবেন সখেদে) বলেছিলেন সূত্রধর শ্রেষ্ঠ, অসাধারণ ঝুমুর গায়ক, ছো মুখা শিল্পী নেপাল সূত্রধর(সূত্রধরদের বিষয়ে কিছু টিকা এই লেখাটির শেষে করা গেল)।
কিন্তু তাঁদের কারোর ভদ্রাসনে শ্রীর অভাব নেই। মাটির কলসি তৈরি করা কুম্ভকর দাদাটির রোজগার শহুরে ভাষায় এবং মানে নগন্য বললেও অত্যুক্তি হয় না। 
তিনি দরজার পাশে ছোট্ট চারপাইতে বসে কাজ করছেন। তাঁর পাশেই নিকোনো দরজার সামনেই, ঘরে ঢোকার মুখেই কুম্ভকর বাড়ির আলপনা। কি যত্ন, কি অনুচ্চ ভালবাসা, অনুচ্চ মাটির টান। 

শ্রীর(সম্পদের নয়, সম্পদের দেবতা কুবের, তার বাহন মনুষ্য) দেবী লক্ষ্মীর আহ্বান। কি যত্নে, কি মমতায়, কি গর্বে, প্যাঁচালো নয় কিন্তু অসাধারন সুকুমারবৃত্তিতে আলপনা দেন কুমোরী।
আমার গর্ব! 
আমার বাংলা!
আমার কারিগর!
আমার প্রযুক্তি!


---
সার্থক এই সমাজের মানুষের কৃতি যতটা পারা যায় বর্ণনা করি-
হাতে কোন গজকাঠি না নিয়েও বিপুল বিশাল থেকে সূক্ষ্মতম মাপ আর তল নির্নয় করেন ওলন দড়ি দিয়ে সূত্রধর এবং রাজমিস্ত্রিরা - কি অসাধারণ প্রাযুক্তিক উপাধি বাংলার ছুতোরেরা বয়ে বেড়াচ্ছেন ভেবেই অবাক মানি! চন্দ্রকান্ত রাজু বলছেন কার্তেসিয় সরলরৈখিক জ্যামিতি বাক্সের স্কেল বা অন্যান্য হাতিয়ার দিয়ে পশ্চিমি মাপনের তুলনায় সুতো মাপন আনেক বেশি সোজা, কাজের এবং প্রয়োগবাদী, কারণ সুতো দিয়ে যে কোন বক্রতল তৈরি করা যায়, যা কার্তেসিয় জ্যামিতিবাক্সে এক্কেবারে অসম্ভব - এবং আমাদের পশ্চিমিমুখীনতা দেশিয় মাপন পদ্ধতিতে ছাত্রদের পরিচয়ই করাল না। অভিযোগ সেই পদ্ধতিটা নাকি প্রাচীন!

No comments: