আমাদের বন্ধু সংগঠন ওয়াপাগ-এর তরফে Biswendu Nanda কয়েকটি খসড়া প্রস্তাব রেখেছেন। আমরা তাতে কিছু সংযোজন করছি। পুরোটাই অত্যন্ত প্রাথমিক আলোচনা। বন্ধুরা এই আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, আশা রাখছি।
ওয়াপাগ বলছে-
কতগুলো কথা স্পষ্টভাবে বলা দরকার-
ওয়াপাগ বলছে-
কতগুলো কথা স্পষ্টভাবে বলা দরকার-
১) ১৭৫৭র আগের উৎপাদন ব্যবস্থা ছোটলোক নির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা ছিল। প্রযুক্তি, দক্ষতা, জ্ঞান এবং কিছুটা সামাজিক সুরক্ষা ছোটলোক সাপেক্ষ ছিল। তারপরে বাংলা জুড়ে ছোটলোক উৎপাদন ব্যবস্থার বিপক্ষে কর্পোরেট ব্যবস্থার শেকড় গজাবার চেষ্টা করা হয় - রামমোহন দ্বারকানাথেদের তৈরি করে।
২) ব্রিটিশ পূর্ব সময়ে কিছুটা হলেও উৎপাদন ব্যবস্থায় ছোটলোকেদের পকড় ছিল - রাষ্ট্রনীতি এই উৎপাদন ব্যবস্থা উতপাদকেদের পক্ষে ছিল। তাই ছোটলোকেরা ১৭৫৭র আগের উৎপাদন ব্যবস্থায় যেতে চায়।
৩) যে সব ছোটলোক/শুদ্রদের সংগঠন বড় পুঁজির রাষ্ট্র যন্ত্র এবং শিল্পবীয় প্রযুক্তি আর উৎপাদন ব্যবস্থার গুণগান করেন, তারা সামগ্রিক ছোটলোকেদের স্বার্থ বিরোধী।
৪) এই সরকারি শিক্ষা উৎপাদন ব্যবস্থার কোন অংশই ছোটলোকদের তৈরি সমাজ বা অর্থনীতি বা প্রযুক্তির অনুকুল নয়। ফলে দলিতদের জন্য বর্তমান পাঠ্যসূচী অনুযায়ী আরও একটা বিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি আদতে ছোটলোকেদের সামগ্রিক স্বার্থ বিরোধী।
আমাদের সংযোজন -
১। কারিগরি বিদ্যায় ১৭৫৭-র আগে ফিরে যাবো, এই কথাটা বার বার ভুল ব্যাখ্যা করছে অনেকে, এটা আরও স্পষ্ট করে বলা দরকার।
১৭৫৭র আগে কারিগরি বিদ্যা বা জ্ঞান ছিল অঞ্চল সুনির্দিষ্ট তাই সেই অঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী নিখুঁত। কিন্তু ঔপনিবেশিক কাঠামো বিশ্ব ব্যাপী বাজার গড়ে তোলার তাগিদেই, এই অঞ্চল 'অনুযায়ী নিখুঁত' এই ধারণাটাকেই ত্যাগ করে, গড়পড়তা মান কিন্তু সংখ্যায় প্রচুর পণ্য বানানোর প্রযুক্তির বিকাশ ঘটায়। এর ফল শ্রুতিতেই পরিবেশ ধ্বংস ও মানুষের উচ্ছেদ যাত্রা, উন্নয়নের নামে অধঃপাত শুরু হয়। পুরো প্রক্রিয়ার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে বৃহৎপুঁজির লুটে খাবার লক্ষ্যমাত্রা।
আমরা এই লুটে খাওয়ার প্রযুক্তির বিরুদ্ধে, তাই গড়পড়তা মান কিন্তু সংখ্যায় প্রচুর পণ্য বানানোর বিরুদ্ধে। আমরা আবার যত বেশি সম্ভব অঞ্চল ভিত্তিক স্বয়ং সম্পূর্ণ উৎপাদন ব্যবস্থায় ফিরতে চাই। যে প্রযুক্তি আঞ্চলিক উৎপাদকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে, বৃহৎপুঁজি বা রাষ্ট্র তাকে নিয়ন্ত্রণ করবে না। আমরা মনে করি সেটা সম্ভব, প্রযুক্তিগত ভাবে ও বিপণনের দিক দিয়ে উভয়ত। কি ভাবে আজকের সমাজে বিকেন্দ্রীকৃত সমাজকেন্দ্রীক উৎপাদনের ব্যবস্থার উত্তরণ হবে তা আমাদের ইস্তেহারে বিশদে আলোচনা করা হয়েছে - www.omipress.org/manifesto
২। ভারতের মূল উৎপাদন ব্যবস্থা ও অর্থনীতি একে বারেই শূদ্র/ছোটলোক নির্ভর। এই সত্যকে চাপা দেবার লক্ষ্যেই বৃহৎ পুঁজির ধ্বংসাত্মক অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, শিক্ষা, প্রযুক্তি সমস্ত কিছুকেই বিজ্ঞাপনের ঢপলিং দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করা হয়।
৩। আধুনিক শিক্ষার প্রসারের নাম করে, আধুনিক কর্ম সংস্কৃতির নাম করে, সংরক্ষণ ব্যবস্থার নাম করে শূদ্র সমাজের সেরা মেধাদের সমাজ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে। শূদ্রদের স্বয়ংসম্পূর্ণ উৎপাদন ব্যবস্থাকে কানা করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সংরক্ষণের রাঙামুলো নাকের ডগায় ঝুলিয়ে গোটা ভারতীয় সমাজের সেরা শূদ্রদের বৃহৎপুঁজির দালাল রাষ্ট্র কাঠামোর সাথে বলদের মত জুতে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে তারা বলদের মত শুধু বলই দান করবে, তাদের মেধা শক্তিকে কাজে লাগানোর কোন সুযোগই দেওয়া হবে না। এদিকে শূদ্রদের উৎপাদন ব্যবস্থাও কানা হয়ে যাবে, কারণ তাদের সেরা মেধা সম্পদকে ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে বৃহৎপুঁজি। এই ভাবে গোটা ভারতীয় সমাজ ধীরে ধীরে বৃহৎপুঁজির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। যারা শূদ্রদের সংরক্ষণের দাবী নিয়ে সোচ্চার তারা বুঝে বা না বুঝে শূদ্র সমাজের পায়ে কুড়ুল মারছেন।
৪। আমরা এখনি সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেবার পক্ষে নই, কিন্তু শূদ্ররা নিজস্ব সম্পদ ও মেধাশক্তিকে কাজে লাগিয়েই চিরকাল ভারতীয় সমাজ ও অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। শূদ্র অর্থনীতির বাইরের যে অর্থনীতি চলে সেটা লুটেরা অর্থনীতি। শূদ্ররাই পারে লুটেরা অর্থনীতিকে দমন করে, মানবিক ও সমাজ বিকাশোপযোগী অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে, সেই ক্ষমতা শূদ্র সমাজেরই আছে। সংরক্ষণের হরির লুট শূদ্রদের মূল শক্তি থেকে তাদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিচ্ছে, শূদ্রদের ভিতরেই একটা এলিট সমাজ তৈরি করছে, যারা শূদ্র সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, শূদ্র বিরোধী অর্থনীতিকে পুষ্ট করছে। সংরক্ষণ শূদ্রদের খতমের জন্য তৈরি করা একটা ফাঁদ। শূদ্রদের নিজ শক্তিতে নিজেদের উৎপাদন ব্যবস্থাকে বিকশিত করে সংরক্ষণের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সমাজের বাকি অংশ তখন শূদ্রদের অনুসরণ করতে বাধ্য হবে। আমরা সেই বহ্নুৎসবের দিকে এগোতে চাই, যেদিন SC, ST, OBC সার্টিফিকেট আর বামুনের পৈতে একই আগুনে আহুতি দিয়ে ভারতীয় সমাজের অগ্নিশুদ্ধি হবে।
খেয়াল রাখবেন রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন - এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন ধর হাত সবাকার। উনি সঠিক ভাবেই বুঝেছিলেন কার মন শুচি করা দরকার আর কার দরকার নেই।
খেয়াল রাখবেন রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন - এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন ধর হাত সবাকার। উনি সঠিক ভাবেই বুঝেছিলেন কার মন শুচি করা দরকার আর কার দরকার নেই।
৫। ভারতের মধ্যে বাংলার শূদ্র সমাজ সব সেরা সম্পদের অধিকারী। বাংলার শূদ্র সমাজ যদি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে বিকেন্দ্রীকৃত উৎপাদন ব্যবস্থার বিকাশ ঘটাতে পারে, গোটা ভারত তাকে অনুসরণ করবে। গোটা দুনিয়ার পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আজ নিজেদের সমস্যায় নিজেরাই জর্জরিত। বাংলার শূদ্ররাই পারে গোটা দুনিয়ার সামনে উদাহরণ খাড়া করতে। গোটা পুঁজিবাদী দুনিয়া সেদিন মাথা হেঁট করে বাংলার সামনে দাঁড়াবে, বিগত ২৫০ বছরের পাপ কাজের অপরাধে অপরাধী হয়ে।
খুব সচেতন ভাবেই শূদ্র শব্দটা ব্যবহার করছি, কারণ, ব্রাহ্মণ্যবাদীদের মতে - ব্রাহ্মণ পুরুষ ছাড়া আর বাকি সবাই শূদ্র।
No comments:
Post a Comment