"কোদালে কুড়ালে মেঘের গা।
উল্টাপাল্টা বহে বা।।
খনা বলে বাঁধ আল।
আজ না হয় বৃষ্টি হবেই কাল।।"
খনা বলে বাঁধ আল।
আজ না হয় বৃষ্টি হবেই কাল।।"
হাজার হাজার বছর ধরে বাংলা এবং ভারতীয় উপমহাদেশের বহু সমাজ চর্চিত পরম্পরার জ্ঞান প্রয়োগ করে সম্পদ সংগ্রহ করেছিল। বিভিন্ন ধারার জ্ঞানচর্চার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল কৃষি বিষয়ক ব্যবহারিক জ্ঞান. চাষী, উতপাদকেদের এই প্রায়োগিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটেছিল নিয়মিত। এই জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে বিগত ২০০০ বছর আর্যভটের হাত ধরে ত্রিকোণমিতির বিকাশ ঘটে এবং তার ফলে কলনবিদ্যার স্ফূরণ হয়।
কলনবিদ্যা, সাধারণ মানুষের বর্ষা আসার জ্ঞান(একই সঙ্গে নৌবিদ্যা এবং তন্তুবায়বিদ্যা)কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে কলনবিদ্যায় রূপান্তর করেন।
বঙ্গভঙ্গের পরে আনখরশির পশ্চিমি নেহেরু-ভাবার উদ্যমে 'বৈজ্ঞানিক' পঞ্জিকা কমিটি তৈরি করা হল। উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে পশ্চিমের জ্ঞানের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া। অথচ পশ্চিম এই পঞ্জিকা জ্ঞান ৫০০ বছর আগে দক্ষিণ ভারতের কেরল থেকে নিয়ে নিজেকে ঋদ্ধ করেছিল। পশ্চিমের সেই পূর্ব-লব্ধ জ্ঞান পূর্বের জ্ঞানকে ছাড়িয়ে গিয়েছে এমন কোন নিদর্শন পাওয়া যায় নি। তবুও বিনা প্রশ্নে তাকে আত্তীকরণ করা হল। তাতে সরকারিভাবে বর্ষা আসার সময় আর বলা যায় না - যদিও আজও কৃষক সরকারি ঘোষণার ধার ধারেন না।
আদতে সরকারিভাবে এই আড়াইশ পশ্চিমী উত্তরাধিকার হিসেবে যা পাওয়া গিয়েছে তা হল ভদ্র-মধ্যবিত্ত মননের পশ্চিমীকরণ - ভদ্র-মধ্যবিত্তের মনে 'পশ্চিমই শ্রেষ্ঠ' এই ধারনা তৈরি এবং ভারত উপমহাদেশে পশ্চিমিজ্ঞানের ক্ষমতা এবং তার সঙ্গে আধুনিকতা, বৈজ্ঞানিক নামক কিছু লেজুড় বৃদ্ধি, যার প্রায়োগিক মূল্য শুন্য।
এই ভূমিকাটা দরকার হল, পথবন্ধু Samikএর এই লেখায় "গত পরশু বিকেলে মেঘের এই ছবিতে আমরা সবাই মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমার মনে পড়ে ছিল ছোট বেলায় 'পাঠক জেঠুর' কাছে শুনেছিলাম - এরকম কোদালে কোপান মেঘ হলে দু দিনের মধ্যে বৃষ্টি হয়, এ ক্ষণার বচন। ছড়াটাও বলে ছিলেন, আমি ভুলে গেছি। সে দিনই প্রথম জেনে ছিলাম ক্ষণা জ্যোতিষী ছিলেন না, ছিলেন কৃষি বিজ্ঞানী, তার প্রায় সব বচনই কৃষি সংক্রান্ত। আর সে কালে এই কাজের জন্য কৃত্রিম স্যাটেলাইট লাগেনি, প্রকৃতির সাথে অকৃত্রিম একাত্মতাই যথেষ্ট ছিল।
আজকের বৃষ্টি ধোয়া হেমন্তের সকালে পাঠক জেঠু(রামকৃষ্ণ পাঠক) তোমাকে প্রণাম। আর কি কোন সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রাক্তনী কৃষক সংগঠন গড়ার আশায় সুন্দর বনের প্রত্যন্ত গ্রামের মাঠের আল ধরে হেঁটে যাবে মাইলের পর মাইল! ভূমিপুত্র অন্নদাতার সামনে নতজানু হয়ে পাঠ নেবে পরম্পরাগত কৃষি বিজ্ঞানের। হে ভারতের সকল অন্নদাতা, হে ভারতের আলে হেঁটে চলা কালের পথিক তোমাদের চরণে প্রণাম।"
আজকের বৃষ্টি ধোয়া হেমন্তের সকালে পাঠক জেঠু(রামকৃষ্ণ পাঠক) তোমাকে প্রণাম। আর কি কোন সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রাক্তনী কৃষক সংগঠন গড়ার আশায় সুন্দর বনের প্রত্যন্ত গ্রামের মাঠের আল ধরে হেঁটে যাবে মাইলের পর মাইল! ভূমিপুত্র অন্নদাতার সামনে নতজানু হয়ে পাঠ নেবে পরম্পরাগত কৃষি বিজ্ঞানের। হে ভারতের সকল অন্নদাতা, হে ভারতের আলে হেঁটে চলা কালের পথিক তোমাদের চরণে প্রণাম।"
তার উত্তরে আমরা শুরুর খনার বচনটি উদ্ধৃত করে বললাম-
"প্রকৃতির সাথে অকৃত্রিম একাত্মতা"র সঙ্গে ছিল কলনবিদ্যার বিকাশ - যা কাজে লেগেছিল ঋতুভেদে বর্ষা আসার সময়ের সঠিক সময় নির্ধারণ করা। সারা ভারত জোড়া অন্তত ৪০টার কাছাকাছি পঞ্জিকা ছিল, সব ক'টাতেই চাষের জন্য বর্ষার সময় জানান জরুরি ছিল, এবং সেটা সফলভাবে করতে পেরেছিল বিভিন্ন সমাজ। অথচ মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে যে সরকারি পঞ্জিকা তৈরি হল তাতে কিন্তু কোনভাবেই বর্ষা আসারে দিন নির্দিষ্ট করা যাচ্ছে না। এটা নিয়ে অসাধারণ লিখেছেন ভারতের অঙ্ক ইতিহাসের ইতিহাসকার চন্দ্র কান্ত রাজু মশাই - এই প্রবন্ধটা পড়তে পারেন - http://ckraju.net/new/A-Tale-of-Two-Calendars.pdf
দুবাংলাতেই ভদ্রদের পশ্চিমী হনুকরণ থেকে মুক্ত হওয়ার আন্দোলন জরুরি। এটাই সময়ের দাবি।
জয় বাংলা!
জয় বাংলার কারিগর!
জয় বাংলার কারিগর জ্ঞান!
জয় বাংলার কারিগর!
জয় বাংলার কারিগর জ্ঞান!
No comments:
Post a Comment