Friday, November 17, 2017

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - পরম্পরা, জ্ঞান আর সম্পদ আহরণ - বিগত আড়াইশ বছরে পরম্পরা থেকে বিচ্যুতি - পশ্চিমি জ্ঞান অর্থে সর্বশ্রেষ্ঠ এটা শাসকদের মনে প্রোথিত হওয়া

"কোদালে কুড়ালে মেঘের গা।
উল্টাপাল্টা বহে বা।।
খনা বলে বাঁধ আল।
আজ না হয় বৃষ্টি হবেই কাল।।"
হাজার হাজার বছর ধরে বাংলা এবং ভারতীয় উপমহাদেশের বহু সমাজ চর্চিত পরম্পরার জ্ঞান প্রয়োগ করে সম্পদ সংগ্রহ করেছিল। বিভিন্ন ধারার জ্ঞানচর্চার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল কৃষি বিষয়ক ব্যবহারিক জ্ঞান. চাষী, উতপাদকেদের এই প্রায়োগিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটেছিল নিয়মিত। এই জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে বিগত ২০০০ বছর আর্যভটের হাত ধরে ত্রিকোণমিতির বিকাশ ঘটে এবং তার ফলে কলনবিদ্যার স্ফূরণ হয়।
কলনবিদ্যা, সাধারণ মানুষের বর্ষা আসার জ্ঞান(একই সঙ্গে নৌবিদ্যা এবং তন্তুবায়বিদ্যা)কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে কলনবিদ্যায় রূপান্তর করেন।
বঙ্গভঙ্গের পরে আনখরশির পশ্চিমি নেহেরু-ভাবার উদ্যমে 'বৈজ্ঞানিক' পঞ্জিকা কমিটি তৈরি করা হল। উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে পশ্চিমের জ্ঞানের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া। অথচ পশ্চিম এই পঞ্জিকা জ্ঞান ৫০০ বছর আগে দক্ষিণ ভারতের কেরল থেকে নিয়ে নিজেকে ঋদ্ধ করেছিল। পশ্চিমের সেই পূর্ব-লব্ধ জ্ঞান পূর্বের জ্ঞানকে ছাড়িয়ে গিয়েছে এমন কোন নিদর্শন পাওয়া যায় নি। তবুও বিনা প্রশ্নে তাকে আত্তীকরণ করা হল। তাতে সরকারিভাবে বর্ষা আসার সময় আর বলা যায় না - যদিও আজও কৃষক সরকারি ঘোষণার ধার ধারেন না।
আদতে সরকারিভাবে এই আড়াইশ পশ্চিমী উত্তরাধিকার হিসেবে যা পাওয়া গিয়েছে তা হল ভদ্র-মধ্যবিত্ত মননের পশ্চিমীকরণ - ভদ্র-মধ্যবিত্তের মনে 'পশ্চিমই শ্রেষ্ঠ' এই ধারনা তৈরি এবং ভারত উপমহাদেশে পশ্চিমিজ্ঞানের ক্ষমতা এবং তার সঙ্গে আধুনিকতা, বৈজ্ঞানিক নামক কিছু লেজুড় বৃদ্ধি, যার প্রায়োগিক মূল্য শুন্য।
এই ভূমিকাটা দরকার হল, পথবন্ধু Samikএর এই লেখায় "গত পরশু বিকেলে মেঘের এই ছবিতে আমরা সবাই মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমার মনে পড়ে ছিল ছোট বেলায় 'পাঠক জেঠুর' কাছে শুনেছিলাম - এরকম কোদালে কোপান মেঘ হলে দু দিনের মধ্যে বৃষ্টি হয়, এ ক্ষণার বচন। ছড়াটাও বলে ছিলেন, আমি ভুলে গেছি। সে দিনই প্রথম জেনে ছিলাম ক্ষণা জ্যোতিষী ছিলেন না, ছিলেন কৃষি বিজ্ঞানী, তার প্রায় সব বচনই কৃষি সংক্রান্ত। আর সে কালে এই কাজের জন্য কৃত্রিম স্যাটেলাইট লাগেনি, প্রকৃতির সাথে অকৃত্রিম একাত্মতাই যথেষ্ট ছিল।
আজকের বৃষ্টি ধোয়া হেমন্তের সকালে পাঠক জেঠু(রামকৃষ্ণ পাঠক) তোমাকে প্রণাম। আর কি কোন সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রাক্তনী কৃষক সংগঠন গড়ার আশায় সুন্দর বনের প্রত্যন্ত গ্রামের মাঠের আল ধরে হেঁটে যাবে মাইলের পর মাইল! ভূমিপুত্র অন্নদাতার সামনে নতজানু হয়ে পাঠ নেবে পরম্পরাগত কৃষি বিজ্ঞানের। হে ভারতের সকল অন্নদাতা, হে ভারতের আলে হেঁটে চলা কালের পথিক তোমাদের চরণে প্রণাম।"
তার উত্তরে আমরা শুরুর খনার বচনটি উদ্ধৃত করে বললাম-
"প্রকৃতির সাথে অকৃত্রিম একাত্মতা"র সঙ্গে ছিল কলনবিদ্যার বিকাশ - যা কাজে লেগেছিল ঋতুভেদে বর্ষা আসার সময়ের সঠিক সময় নির্ধারণ করা। সারা ভারত জোড়া অন্তত ৪০টার কাছাকাছি পঞ্জিকা ছিল, সব ক'টাতেই চাষের জন্য বর্ষার সময় জানান জরুরি ছিল, এবং সেটা সফলভাবে করতে পেরেছিল বিভিন্ন সমাজ। অথচ মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে যে সরকারি পঞ্জিকা তৈরি হল তাতে কিন্তু কোনভাবেই বর্ষা আসারে দিন নির্দিষ্ট করা যাচ্ছে না। এটা নিয়ে অসাধারণ লিখেছেন ভারতের অঙ্ক ইতিহাসের ইতিহাসকার চন্দ্র কান্ত রাজু মশাই - এই প্রবন্ধটা পড়তে পারেন - http://ckraju.net/new/A-Tale-of-Two-Calendars.pdf
দুবাংলাতেই ভদ্রদের পশ্চিমী হনুকরণ থেকে মুক্ত হওয়ার আন্দোলন জরুরি। এটাই সময়ের দাবি।
জয় বাংলা!
জয় বাংলার কারিগর!
জয় বাংলার কারিগর জ্ঞান!
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্যগুলি
Samik Saha একটা খুব খারাপ বিষয় আছে। চাষীরা সরকারী ক্যালেন্ডারের ধার ধারে না বটে, কিন্তু সরকারী দান খয়রাত যে টুকু বা মেলে, তা দেওয়া হয় সরকারী ক্যালেন্ডার মেনেই, আর এই কারণেই সময় মত তা পাওয়া যায় না, বেশির ভাগ সময়েই তা কাজে লাগে না।
দুঃখআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
2
15 নভেম্বর, 10:12 AM-এ
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda Samik "ক্ষণা জ্যোতিষী ছিলেন না" - খনাকে কে কি বলল সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কি? কোন জ্যোতিষী নামধারী যদি কোনদিন এই ধরণের আপ্তবাক্য বলতে পারেন, তাকে কেউ জ্যোতিষী না বিজ্ঞানী না কবি - কি বলল তাতে কি যায় আসে।
জ্যোতিষীদের মত পূর্বের পেশাদারেরা সব নষ্টের মূল - 
এদের জ্ঞান, (অ)দক্ষতা আর প্রযুক্তির জন্য অর্থনীতির উন্নতি ঘটছে না - উপনিবেশের পেশাগুলি ধরে ধরে, সেগুলিকে অবৈজ্ঞানিক ছাপ দিয়ে - যেমন সূত্রধর - তাঁদের হাতের সুতোর বক্রমাপ আজও কোন কার্তেসিয় জ্যামিতি বাক্স করতে পারে না - যে ভাবে পূর্বের জ্ঞানচর্চাকে হেয় প্রমান করে নিজের চুরি করে সোনার জোব্বা পরিয়ে লুঠের কাজে লাগানো পূর্বের জ্ঞানকে বৈজ্ঞানিক, অগ্রগতির, আধুনিক ইত্যাদি বিশেষণ দিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত করেছে - তা আমাদের ভদ্রসের দাস মনোভাবের পরিচায়ক। আমরা সেগুলিকে আহ্লাদি মুখে আর কৃতজ্ঞ অন্তঃকরণে আত্তীকরণ করেছি এবং আগামি দিনে আরও করব - তা ভয়ঙ্কর।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
3
15 নভেম্বর, 10:22 AM-এসম্পাদনা করা হয়েছে
পরিচালনা করুন
Samik Saha সাক্ষরতার নাম করে গ্রামের পরম্পরাগত বিদ্যাকে যে ভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছে, আর কদিন টিকিয়ে রাখা যাবে আমাদের এই সম্পদকে। কী ভয়ঙ্কর দিন সামনে আসছে ভাবতেই পারছি না।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
5
15 নভেম্বর, 10:25 AM-এ
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda তবুও বাণগড়ে গিয়ে যে দৃশ্য দেখেছি সেটার বর্ণনা নীচে দিলাম
.https://www.facebook.com/biswendu.nanda/posts/10214502023055219
Biswendu Nanda Dipankar Shibu এবং অন্যান্য 3 জন এর সঙ্গে আছেন।
বাংলা সভ্যতার প্রাণ প্রবাহ
বাণরাজার ঢিপি
এর মধ্যে চলেগিয়েছে অন্তত ৮ হাজার বছর। শশাঙ্ক-পাল-কৈবর্তরাজ-সুলতানিআমল-মুঘলআমল-নবাবিআমল-লুঠেরা কোম্পানি উঠেগিয়ে রাণীরনব্যলুঠেরাআমল শেষ হয়ে বঙ্গভঙ্গ।
কিন্তু বাণগড়ের ধ্বংসাবশেঢে পিঠ দিয়ে গরুকে জাবনা দেওয়ার বিরাম নেই চাষী-কারিগর-তাঁতি-অভিকরশিল্পীর।
এইভাবেই গ্রাম বাংলার মৌলিক কৃষ্টি আর শান্ত জীবন-প্রবাহকে বুকে ধরে নিয়ে চলেন গাঁইয়া বাঙ্গালি।
সভ্যতা লুঠের চূড়ায় উঠে হেজেমরে যায়, লুঠেরা লক্ষ লক্ষ সেনা নিয়ে লূঠে নিয়ে যায় সম্পদ জ্ঞান, রাজা আসে রাজা যায়, কিন্তু রোদের দিকে মুখ করে আর মরে যাওয়া সভ্যতার দিকে পিঠ করে হয়ত আরও হাজার বছর(বড় পুঁজির কল্যাণে বিশ্ব/মানব সভ্যতা ধ্বংস না হলে) এই মানুষটর মত গাঁইয়ারা নির্বিবাদে গরুকে জাবনা খাইয়ে যাবেন।
এঁরাই সভ্যতা।
এঁরাই বিশ্ব!
জয় গুরু!
জয় বাংলা!
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তরপূর্বরূপ মুছে ফেলুন
1
15 নভেম্বর, 10:29 AM-এ
পরিচালনা করুন
Samik Saha রাজ ছত্র ভেঙে পড়ে
রণডঙ্কা শব্দ নাহি তোলে
জয় স্তম্ভ মূঢ় সম অর্থ তার ভোলে

রক্ত মাখা অস্ত্র হাতে যত রক্ত আঁখি
শিশুপাঠ্য কাহিনীতে থাকে মুখ ঢাকি
ওরা কাজ করে...
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
2
15 নভেম্বর, 10:53 AM-এ

No comments: