মুঘল দরবারে পোষাক প্রথা
প্রত্যেক সভ্যতায় সাধারনতঃ প্রথা নির্ভর করে রাষ্ট্রব্যবস্থা, সামাজিক স্তরভেদ
এবং সমাজের রীতিনীতি ঠিক হয়। প্রথা অর্থনৈতিক অবস্থা, কিছুটা কৃষ্টিগত ও ধর্মের
গতিপ্রকৃতিও নির্ধারণ করত। কিছুটা আবহাওয়া, জলবায়ুও জামাকাপড় পরার প্রথাকে প্রভাবিত
করত। একটি ঐতিহাসিক সময়কে কিছুটা চিহ্নিত করে সেই সময়ে সেই দেশের বিভিন্ন সমাজের
পরিধেয়। অনেক সময় পরিধেয় সভ্যতার দর্পণও বটে। মুঘল রাজত্বে সেই তত্ত্বের প্রয়োগ
দেখতে পাই।
মুঘল পরিচ্ছেদের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
মুঘল পাদশাহ এবং অভিজাতদের পরিধেয় আলোচনায় একটা বিষয় শুরুতে বলা দরকার ভারতের
একদা শাসক মুঘলেরা সরাসরি চেঙ্গিজ খাঁ আর তৈমুরের বংশধর। তারা ভারতে এসেছিল মধ্য এশিয়া
থেকে। তাদের শেকড় প্রোথিত ছিল মঙ্গোলিয়া আর সমরখন্দে। উত্তরের কাছাকাছি থাকায় মধ্য
এশিয়ার জলবায়ু বেশ ঠাণ্ডা। ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকেই পশমের পরিধেয় পরার উল্লেখ
পাচ্ছি। ৫০০ খ্রিপূ সময় থেকে মঙ্গোলের Scythian মানুষেরা চামড়া বা গাছগাছালির সুতোয়(হেম্প)
দেহাবরণী আর পাঢাকনি(প্যান্ট) পরত, প্যান্টটা পায়ে পরা চামড়ার বুটের মধ্যে ঢোকানো
থাকত। তারাই প্যান্টের আবিষ্কর্তা - বহু সময় ধরে তাদের ঘোড়ায় চড়তে হত। ১০০০ সালেও
তারা প্রাচীন পরিধেয়ই পরত। আস্তে আস্তে টিউনিক বাদ দিয়ে মোঙ্গলেরা লম্বা জ্যাকেট,
অনেকটা বাথরোবের মত পরিধেয় পরত। ১২০০ সালে মোঙ্গলেরা ভারতে এসে সুতি আর রেশমের
কাপড়ের সান্নিধ্যে আসে। তারপরে ক্রমশঃ মোগল পরিধেয়তে পরিবর্তন আসতে থাকে, একদল
পুরনো ধরণের কাপড় পরত আর একাংশ ভারতের নকলে কাপড় পরা শুরু করে। শীতের সময় তারা
ফারের তৈরি নানান ধরণের পরিধেয় দিয়ে শরীর ঢাকত।
মোগলরা শিল্প আর স্থাপত্যের চূড়ায় পৌঁছায়
ত্রয়োদশ শতে। সে সময়েই পরিধেয় পরিকল্পনা করা হয়, যা পরের দিকে মোগল রাজদরবারের
আঙ্গিকে প্রবাহিত হতে থাকে। মোগলেরা যেহেতু প্রায় সারা বিশ্ব টহল দিয়েছে, তাই
তাদের শিল্প-সাহিত্যে বিশ্বের নানা কৃষ্টির প্রভাব পড়েছে এবং ভারতে এসেও সেই
প্রবণতা যায় নি। ভারতীয় রাজত্বে রাজপরিবারের সদস্যদের পরার জন্য আলাদা জামাখানা বা
তোষাখানা(সম্পদখানা) তৈরি করেছিলেন। মুঘল পরিধেয়র মধ্যে প্রধানতম অংশগুলো ছিল
পাজামা বা শালোয়ার, জামা, পাটকা এবং পাগড়ি(M.
Dye Joseph: “Fabrics, Carpets and Costumes” in “Romance of Taj Mahal “by
Pratapaditya Pal,)।
পরিধেয়র চরিত্র
বাবরের সময় তাঁর মাতৃভূমির প্রতি টান স্পষ্ট
ছিল। এই সময়ে পারসিক আঙ্গিকের পরিধেয়র চল ছিল (Goswamy B.N.; Indian Costumes, in the
collection of the Calico Museum of Textiles Ahmadabad,1993,)। বাবরের সময়ের পরিধেয়র পরিচয় পাই নাতি আকবরের
সময়ের আঁকা মিনিয়েচার ছবিগুলি থেকে। ফলে আকবরের সময়েও বাবরের সময়ের আঙ্গিকের
পরিধেয়র প্রভাব ছিল। বাবরের সময় পরা হত ফতুয়া (bathing coat), qara-quzi-burq
(black lamb-skin
cap), duwulghaburq(hemp-cap), char-qab, taq-band (girdle), jiba (surtout), chapan (long-coat),
nimcha (short tunic) kiping(rain-coat)(সূত্র এনি বেভারিজের
অনুবাদে বাবর নামা)। হুমায়ুন কাবুলে
বিদেশে থাকার সময় পারসি শিল্পীদের দিয়ে রাজপরিবারের পরিধেয় তৈরি করাতেন। বাবর
হুমায়ুন উভয়ের ক্ষেত্রেই পারস্যের আঙ্গিকের প্রভাব খুব চোখে পড়ার মত ছিল।
বাবর ভারত আক্রমণ করেন ১৫২৬এ। বাবুরনামায়
স্পষ্ট তিনি ভারতীয় পরিচ্ছেদ পছন্দ করেন নি। বাবরনামায় বলছে, Their peasants
and lower classes go about naked. They tie on a thing which
they called langoti, which
is a piece of cloth that hangs down two spans from the navel
as a cover to their nakedness. Below this pendent modesty-clout is another slip of
cloth, one end of which they fasten before to a string that ties on the langoti
and then passing the
slip of cloth between the two legs bring it up and fix it to the string of the
langoti behind. The women too have a lang, one end of which they
tie about their waist and the
other is thrown over the head। এরপরে তিনি
তুর্কি মোঙ্গল পরিধেয়র উদাহরণ দিচ্ছেন। বাবর আর হুমায়ুনের সময় একই ধরণের পরিধেয়
অনুসরণ করা হত - qaba,
jama, pirahan, jilucha, jiba and kasaba, jama (garment with lining); yaktahi
jama (garment without
lining); charqab (gold-embroidered garment); postin (a coat lined with
sheep-skin), a jiba or surtoutসূত্রঃ গোস্বামী)।
No comments:
Post a Comment