ঔপনিবেশিক সীমান্ত প্রদেশে ফারকুহরের প্রকল্প কোম্পানির ঔপনিবেশিক পরিকল্পনার পৃষ্ঠপোষকতায় পুরো দমে এগিয়ে চলল। তবুও কোম্পানির বিনাশর্ত সমর্থনেও ফারকুহরের প্রকল্পর ইন্দ্রনারায়ণের প্রকল্পের দশা হওয়া আটকানো যায় নি। ১৮৩২ সালে রাজমহল খালের সার্ভেয়ার কর্নেল ফোর্বস ফারকুহরের বাতিল প্রকল্পের ভূমিতে দাঁড়ানঃ ‘Broken up for its materials, and consequently neglected, it is believed that at present no part of the dam [...] remains’. The dam bringing the water to the rolling mill at the project site, which was ‘the best specimen of masonry at the time [...] to be met with in India’, was completely erased from the landscape. Farquhar himself talks of ‘cutting down a Jungle [...] erecting dwellings and several necessary building...preparing materials for forming a dam and ...cutting a part of a canal for supplying the bellows wheel with water’।১৮৩০ নাগাদ এই বিপুল কাঠামো জঙ্গল গিলে নেয়।
উল্লেখ্য রাজার বিরুদ্ধতা নয়, বরং চুয়াড়দের আক্রমনে ফারকুহরের প্রকল্পটি ধ্বংস হয়। চুয়াড়দের আঘাতে আঘাতে তার নিরাপত্তার খরচ বাড়তে থাকে। তিনি কোম্পানিকে জানান মাঝেমধ্যের চুয়াড় আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কারখানার যন্ত্রপাতি সারাতে তার প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। একটা ইঙ্গিত থেকে জানা যাচ্ছে ধ্বংস হওয়ার আগে তার কারখানাটা হয়ত শুরু হয়েছিল, কিন্তু তার চুল্লি আর ঢালাই বিভাগ তখনও পুরদমে কাজ শুরু করেনি। ১৭৮৭তে তার ক্ষতির পরিমান এমন দাঁড়ায় যে সাধারণ ভাড়া না দিতে পারার অপরাধে তার স্থানীয় প্রতিনিধিকে গ্রেফতার করে সরকার। সে সরকারকে সহায়তার আর্জি জানায়। এই ঘটনাতেই প্রকল্প নিয়ে ফারকুহরের উতসাহে ইতি পড়ে।
ঔপনিবেশিক বীরভূমে দুটি লোহা প্রকল্প পুরোপুরি বিপরীত চরিত্রের – দেশিয় ইন্দ্রনারায়ণ ইতস্ততভাবে চুয়াড়দের মোকাবিলা করার কথা ভেবেছিলেন, অন্যদিকে উপনিবেশের ক্ষমতায় শক্তিশালী স্কট ফারকুহর শুধু যে সরকারি মদতে লোহা উৎপাদনের অধিকার অর্জন করেছিলেন তাই নয়, তিনি পুরদস্তুর সেনাবাহিনীর সহযোগিতাও পেয়েছিলেন চুয়ার সমস্যা সমাধানে। অথচ দুটি প্রকল্পকেই চুয়াড়েরা মাটি ধরিয়ে দিল।
চুয়াড়দের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা
এর আগের অংশে চুয়াড়দের কর্মকাণ্ড নিয়ে যে সব কথা চুম্বকে বলেছি, সেটি এবং রাজার আমলা, কন্ট্রাক্টার এবং লোহা ব্যাপারীদের মধ্যে ঝামেলায় তাদের ভূমিকার বিশদ আলোচনা করা দরকার। এই অংশে আমি দেখানোর চেষ্টা করব সে সময়ের ঔপনিবেশিক বাংলা সরকারের কর্মচারীরা সমতলের বাজারগুলিতে চুয়াড়দের আন্দোলনকে দেখেছিল এবং মূল্যায়ণ করেছিল। তার সঙ্গে সম্পত্তি সম্পর্কে ঔপনিবেশিক আমলাদের কী দৃষ্টিভঙ্গী ছিল, সেটাও দেখব। আমার যুক্তি হল প্রকৃতিক সম্পদের সঙ্গে চুয়াড়দের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তার বাইরের ব্যবহারিক সম্পত্তির মালিকানার যে সাধারণ ধারণার তত্ত্ব এতদিন ধরে চলে আসছে তাকে আজ গভীরভাবে দেখতে হবে বীরভূমে লোহা শিল্পে চুয়াড়দের হ্যাঙ্গাম বিষয়ে আলোচনায়।
সেই সময়ে নানান সূত্রে চুয়াড় হাঙ্গাম বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে। রাজার স্বাধীনতা এবং নতুন ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রেক্ষিতে বীরভূম এবং আর তার আশেপাশে দীর্ঘ লড়াই অসাধারণ বললেও ভুল হবে না। ১৭৮১ সালে ৫ নভেম্বর তার অঞ্চলের আশেপাশের জঙ্গলে ঢুকে বসে থাকা মানুষের দল থেকে সুরক্ষার জন্য রাজা কোম্পানির সেনার নিরাপত্তা দাবি করেন। চুয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিদ্রোহী ঘাটোয়াল(Now Bishundeo Gaatwall of Pergunnah Sohimnu, Juswunt Sing Gawtwall of Pergunnah Sigoor, Khoosh Narrain Sing & Bridjoo Sing Gaatwalls of Pergunna Sirain, & Juddoloo Nundan Gautwall of Pergunna Bindra, with other Gautwalls of Pergunnah Deoghur, have entered into a combination not {to} appear before [the amlah sent by Zemindar] and have assembled a large Body of Burkondasses at a fort, which they have constructed in the Pergunnah Roohinnee, from whence they issue and carry away the Ryots and say they will not pay a Cowry of their rents....) এবং তাদের রায়ত অনুগামীরা রাজাকে কোন রকম কর দিতে অস্বীকার করে। যখন চার কোম্পানি গ্রামে আসে, কয়েকশ মানুষ জড়ো হয়ে তাদের থেকে অস্ত্রশস্ত্র ছিনতাই করে নেয়।
এই ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে সেই অঞ্চল জুড়ে। বগড়ি জমিদার সরাসরি চুয়াড়দের লড়াইকে সমর্থন করে তাদের সরাসরি যোগ দেন। তিনি চুয়াড়দের সঙ্গে ছত্তরগঞ্জে বৈঠক করেন। লড়ায়ে প্রস্তুত দলকে পশ্চিম বীরভূমের লোহা উৎপাদকেরা পিস্তল, তরোয়াল এবং দেশি বন্দুক উপহার দেয়। জমিদার এবং যারা এই হ্যাঙ্গামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এবং চুয়াড়দের সঙ্গে যোগ দিয়েছে, তাদের সমঝে দিতে দুকোম্পানি সেনা পাঠানো হয়। কিন্তু সরকারের সেই অভিযান ব্যর্থ হয়। সরকার লড়ায়ে যোগ দেওয়া বিদ্রোহীদের জমি, বাড়ি এবং অন্যান্য সম্পত্তি দখল নেয় এবং চুয়াড় হ্যাঙ্গামের মাথা কুশল পাত্র(Koosel Patter)কে যে ধরে দিতে পারবে তাকে ৩০০০ টাকা সাম্মানিক দেওয়া হবে ঘোষণা করল সরকার।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment