তৃতীয় খণ্ড
৪৬। সম্রাট বিশ্রাম নেন না
৪৬। সম্রাট বিশ্রাম নেন না
বিজাপুর এবং হায়দারাবাদ বিজয়ের পরে, প্রধানমন্ত্রী সম্রাটকে আবেদন জানিয়ে
লিখলেন, ‘সর্বশক্তিমানের গুণকীর্তন করে নিবেদন করছি, তার আশীর্বাদে এবং
অনুগ্রহে আপনার ভাগ্য অস্তমিত হওয়ার নয়, আপনি দুটি বড় রাজ্য দখল করেছেন।
স্বর্গরাজ্য হিন্দুস্তানে(অর্থাৎ উত্তরভারতে) সম্রাট ফিরে যান, বিশ্ব জানুক
সম্রাটের আর নতুন কিছু জয় করার নেই’।
তার আবেদনপত্রজুড়ে সম্রাট লিখলেন, ‘আমি অবাক হয়েযাচ্ছি, তোমার মত বড় বংশের পরম্পরার উত্তরাধিকারী কি করে এ ধরণের অনুরোধ করতে পারল। তোমার অনুরোধ যদি সত্য বলে ধরতে হয়, তাহলে এখন আর আমার হাতে কোন কাজ নেই বলে মনে করতে হচ্ছে, তা সত্যের অপলাপমাত্র। এই মরণশীল শেষ প্রশ্বাস পর্যন্ত জেনে যাবে, শ্রমের এবং কর্মের কোন বিকল্প নেই। (কবিতা)
এই দীর্ঘ আশা-পথের যাত্রীকে পথ দেখাতে হয়/ শেষ প্রশ্বাস থাকা পর্যন্ত, জীবনের পথ বন্ধুর।/ এটি কঠিন সত্য যে আমার হৃদয় বাড়িতে ফেরার জন্য আকুলি বিকুলি করছে,/ শবনম মুছে গেলেও, তা কিন্তু বারবার বাগানকে মনে রাখে।
যদি শাহজাহান দিল্লি আর আগ্রায় না থেকে সারাজীবন ঘুরে বেড়াতে পারতেন, তার অবস্থা এতটা করুন হত না। ভাল রীতি অনুসারী হলেও জন্য তুমি আর এই ধরণের অনুরোধ করবে না, এবং দুর্গ জয়ের আকাঙ্ক্ষাকে হৃদয়ে নিয়ে এগোতে পার, তাহলে আমি নতুন নতুন দুর্গ অবরোধ করতে পারি (কবিতা)
যে ভালবাসায় ডুবে রয়েছে, তার আর বিপদের ভয় কি/ যার মাথাই নেই তার আবার মাথাব্যথা কি।
সর্বশক্তিমানের গুনকীর্তন করে, যে স্থানে বা যে বাড়িতেই আমি থাকি না কেন, আমি সেটা পাশ কাটিয়ে আমার হৃদয় তুলে নিয়ে আমি এগিয়ে যাব সহজ মৃত্যুর দিকে।(কবিতা)
তোমার ছোট ছোট গিঁট বাঁধা হৃদয়কে (বিশ্বের চাহিদা থেকে) মুক্ত কর/ নাহলে, তোমায় না জানিয়ে মৃত্য সেই সুতোয় টান দেবে।
৪৭। অসুখের মধ্যেও দীর্ঘ কুচ
ব্রহ্মপুরীকে ইসলামপুরী নাম দিয়ে যখন তিনি সেই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন মারাঠা দুর্গ দখল করতে, তিনি নির্দেশ দিলেন, যতই অসুস্থ হোন না কেন, শুক্রবার ছাড়া কুচ করে এগিয়ে যাওয়ার যেন বিরাম না হয়। খাওয়াসপুরে পৌছনোর আগে পর্যন্ত, হাঁটুতে আঘাত পেয়েছেন, তার দুটি বড় বড় রোগ হয়ে গিয়েছে, তিনি জ্বরে ভুগেছেন এবং তার রক্ত আমাশা হয়েছে, তবুও শুক্রবার ছাড়া তিনি একদিনও দাঁড়ান নি। অসুস্থ আবস্থায় একটি মাথা খোলা পালকি (তক্তইরাওয়াঁ)তে করে তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আর যখন তিনি সুস্থ ছিলেন, তখন তা কাঁচে ঢাকা থাকত। হঠাতই, মঙ্গলবার রাতে খাওয়াসপুরে তার হাঁটুতে আঘাত লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নির্দেশ দেন, ‘কুচের জন্য ভেরি বাদন কর’। সম্রাটের সঙ্গে সাহসী এবং সরাসরি কথা বলা হামিদুদ্দিন খাঁ তাঁকে বললেন, ‘ইসলামপুর থেকে বেরোনোর আগে পর্যন্ত আপনি যা ভাবছিলেন, ঘটনাতা তার বিপরীত হয়ে দাঁড়াল’। মহামহিম একটু হেসে বললেন, ‘যুক্তিবিজ্ঞানের জ্ঞান যদি তোমার একটুও থাকে, তাহলে এতা আমায় তুমি বলতে না। আমি তোমায় বলছি, শুক্রবার ছাড়া একদিনও না দাঁড়ানোর নীতির কথা। এমন কি প্রত্যেক শুক্রবার নাও দাঁড়াতে হতে পারে’।
মন্তব্য – আওরঙ্গজেব ইসলামপুরী থেকে বার হন ১৯ অক্টোবর ১৬৯৯, খাওয়াসপুরে আসেন ৩০ আগস্ট ১৭০০। শুক্রবার ছাড়া অন্য দিনগুলোতে কুচ হবে এই কথা বলার অর্থ এই নয় যে, শুক্রবারও কোন কুচ হবে না। তার পায়ে আঘাত লাগে ১ অক্টোবর ১৭০০ সালে, এই ঘটনাটা আমি হিস্ট্রি অব আওরঙ্গজেবে বিশদে লিখেছি।
(চলবে)
তার আবেদনপত্রজুড়ে সম্রাট লিখলেন, ‘আমি অবাক হয়েযাচ্ছি, তোমার মত বড় বংশের পরম্পরার উত্তরাধিকারী কি করে এ ধরণের অনুরোধ করতে পারল। তোমার অনুরোধ যদি সত্য বলে ধরতে হয়, তাহলে এখন আর আমার হাতে কোন কাজ নেই বলে মনে করতে হচ্ছে, তা সত্যের অপলাপমাত্র। এই মরণশীল শেষ প্রশ্বাস পর্যন্ত জেনে যাবে, শ্রমের এবং কর্মের কোন বিকল্প নেই। (কবিতা)
এই দীর্ঘ আশা-পথের যাত্রীকে পথ দেখাতে হয়/ শেষ প্রশ্বাস থাকা পর্যন্ত, জীবনের পথ বন্ধুর।/ এটি কঠিন সত্য যে আমার হৃদয় বাড়িতে ফেরার জন্য আকুলি বিকুলি করছে,/ শবনম মুছে গেলেও, তা কিন্তু বারবার বাগানকে মনে রাখে।
যদি শাহজাহান দিল্লি আর আগ্রায় না থেকে সারাজীবন ঘুরে বেড়াতে পারতেন, তার অবস্থা এতটা করুন হত না। ভাল রীতি অনুসারী হলেও জন্য তুমি আর এই ধরণের অনুরোধ করবে না, এবং দুর্গ জয়ের আকাঙ্ক্ষাকে হৃদয়ে নিয়ে এগোতে পার, তাহলে আমি নতুন নতুন দুর্গ অবরোধ করতে পারি (কবিতা)
যে ভালবাসায় ডুবে রয়েছে, তার আর বিপদের ভয় কি/ যার মাথাই নেই তার আবার মাথাব্যথা কি।
সর্বশক্তিমানের গুনকীর্তন করে, যে স্থানে বা যে বাড়িতেই আমি থাকি না কেন, আমি সেটা পাশ কাটিয়ে আমার হৃদয় তুলে নিয়ে আমি এগিয়ে যাব সহজ মৃত্যুর দিকে।(কবিতা)
তোমার ছোট ছোট গিঁট বাঁধা হৃদয়কে (বিশ্বের চাহিদা থেকে) মুক্ত কর/ নাহলে, তোমায় না জানিয়ে মৃত্য সেই সুতোয় টান দেবে।
৪৭। অসুখের মধ্যেও দীর্ঘ কুচ
ব্রহ্মপুরীকে ইসলামপুরী নাম দিয়ে যখন তিনি সেই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন মারাঠা দুর্গ দখল করতে, তিনি নির্দেশ দিলেন, যতই অসুস্থ হোন না কেন, শুক্রবার ছাড়া কুচ করে এগিয়ে যাওয়ার যেন বিরাম না হয়। খাওয়াসপুরে পৌছনোর আগে পর্যন্ত, হাঁটুতে আঘাত পেয়েছেন, তার দুটি বড় বড় রোগ হয়ে গিয়েছে, তিনি জ্বরে ভুগেছেন এবং তার রক্ত আমাশা হয়েছে, তবুও শুক্রবার ছাড়া তিনি একদিনও দাঁড়ান নি। অসুস্থ আবস্থায় একটি মাথা খোলা পালকি (তক্তইরাওয়াঁ)তে করে তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আর যখন তিনি সুস্থ ছিলেন, তখন তা কাঁচে ঢাকা থাকত। হঠাতই, মঙ্গলবার রাতে খাওয়াসপুরে তার হাঁটুতে আঘাত লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নির্দেশ দেন, ‘কুচের জন্য ভেরি বাদন কর’। সম্রাটের সঙ্গে সাহসী এবং সরাসরি কথা বলা হামিদুদ্দিন খাঁ তাঁকে বললেন, ‘ইসলামপুর থেকে বেরোনোর আগে পর্যন্ত আপনি যা ভাবছিলেন, ঘটনাতা তার বিপরীত হয়ে দাঁড়াল’। মহামহিম একটু হেসে বললেন, ‘যুক্তিবিজ্ঞানের জ্ঞান যদি তোমার একটুও থাকে, তাহলে এতা আমায় তুমি বলতে না। আমি তোমায় বলছি, শুক্রবার ছাড়া একদিনও না দাঁড়ানোর নীতির কথা। এমন কি প্রত্যেক শুক্রবার নাও দাঁড়াতে হতে পারে’।
মন্তব্য – আওরঙ্গজেব ইসলামপুরী থেকে বার হন ১৯ অক্টোবর ১৬৯৯, খাওয়াসপুরে আসেন ৩০ আগস্ট ১৭০০। শুক্রবার ছাড়া অন্য দিনগুলোতে কুচ হবে এই কথা বলার অর্থ এই নয় যে, শুক্রবারও কোন কুচ হবে না। তার পায়ে আঘাত লাগে ১ অক্টোবর ১৭০০ সালে, এই ঘটনাটা আমি হিস্ট্রি অব আওরঙ্গজেবে বিশদে লিখেছি।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment