দ্বিতীয় খণ্ড
বিদার বক্স(আজম শাহের পুত্র)
২৬। বিদার বক্সকে তার দায়িত্ব পালিন না করার জন্য শাস্তি দেওয়া হল
বিদার বখত বাহাদুরের সঙ্গে আসা নাজিরের পত্র থেকে সম্রাট জানতে পারলেন, রাজারাম জাটের সিনসানি দুর্গ তিনি নিজে অধিকার করার চেষ্টা করেছেন, পরে জানাগেল যে বিদার বখত, রাজারামকে মৌখিক হুঁশিয়ারি পাঠিয়েছে যে, সে যাতে তার ভাইয়ের মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দেয় এবং নিজে দুর্গের বাইরে বেরিয়ে আসে।
চিঠির প্রান্তে শাহেনশাহ লিখলেন, ‘কোন অসুবিধে নেই। মেয়েকে বিয়ে দেওয়া বশ্যতা স্বীকার করা। সে দুর্গের বাইরে যেতেই পারে, কিন্তু সে কি সাম্রাজ্যের বাইরের কেন স্থানে যাবে? কিন্তু(কবিতা)
সে কেমন মানুষ, যে একটি মহিলার থেকেও নিম্নস্তরের/যে মানুষটি একটি মেয়ের কাছে আত্মসমর্পন করে সে মহিলার থেকেও অধম।
শিশুদের বড় করা পিতার কাজ, ঠাকুর্দার কাজ নয়। শাহজাদা আলিজা(মুহম্মদ আজানি) তার অসাবধান চরিত্রের দরুণ বিার বখতের প্রয়াত মায়ের অনুরক্ত ছিল, ফলে তার সেই অনুরাগ এই অবস্থা সৃষ্টি করেছে। জ্ঞানী মানুষের আর্থিক দুস্থ অবস্থা তার জীবনে অভিশাপের সামিল। তাকে এক বছরের জন্য তার জাগিরের মনসব অর্ধেক করে দাও।
মন্তব্য – মুহম্মদ বিদার বখত, মুহম্মদ আজম আর দারার কন্যা জাহানজেব বানু বেগমের পুত্র। জন্ম ৪ আগস্ট ১৬৭০। এই তিনজনকে আওরঙ্গজেব খুব ভালবাসতেন। বিদার বখত, বৃদ্ধ সম্রাটের খুব প্রিয় নাতি ছিলেন। খানইজাহানের সঙ্গে বিদার, সিনসানি প্রধান রাজারাম জাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যায়। রাজারামের মৃত্যু হয় ৪ জুলাই ১৬৮৮। জানুয়ারি ১৬৯০তে বিদার বক্স সনসানি দখল করে। মৃত মা, তথ্যগতভাবে ভুল, মহিলা অনেক পরে ১৭০৫ সালে মারা যান।
২৭। বিদার বখত আর তার স্ত্রীর ঝগড়া
শাহজাদার সঙ্গে আসা নাজিরের পত্রে সম্রাট জানতে পারলেন, ‘শাহজাদা, মুখতার খাঁএর কন্যা শামসউন্নিসার প্রতি অনুরক্তি দেখিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে তার চরিত্র বিপক্ষে গিয়ে তাকে দেখলেই শাহজাদা তার বিরূপ মনোভাব লুকিয়ে রাখতে পারছেন না। একদিন তিনি বললেন, ‘একজন শয়তানের(পাজি) কন্যার রাজ্ঞীদের প্রতি গর্ব দেখানো উচিত নয়’। শামসউন্নিসা উত্তর দিলেন, ‘আপনি আমাকে হত্যা করতে পারেন, কিন্তু আমি আপনার সঙ্গে আর কথা বলব না’। সেদিন থেকে শাহজাদার সঙ্গে শামসউন্নিসা কথা বলা বন্ধ করে দিলেন।
চিঠির পাশে সম্রাট লিখলেন,(কবিতা)
‘ভোর বেলা বাগানের শুকপাখি নতুন কুঁড়ির গোলাপকে বলে,/এতি চালিয়াত হয়ো না, কেননা এর আগেও তোমার মত কুঁড়ি ফুটেছে,/গোলাপ হেসে বলল, আমি সত্য শুনে দুঃখিত নই,/কোন প্রেমিকই তার প্রেমিকাকে এত তিক্ত কথা বলে নি।(হাফিজ)
নাতি আমার চোখের আলো, তার যৌবন, বদসঙ্গে পড়ে ‘প্রমত্ত যৌবন’এর মত বদ শব্দও আমারও যৌবনে ছিল, আমারও এক মহিলার(স্ত্রী) সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, সে ছিল খুব উদ্ধত, কিন্তু শেষ দিন পর্যন্ত আমি তাকে ভালবেসে গিয়েছি, আমি কখোনো তার অনুভূতিতে আঘাত করিনি। এবং কোন সৈয়দকে পাজি বলে আঘাত করা, পাজির মতই কাজ। যদি কোন সৈয়দাকে পাজি বলা হয়, সে নিশ্চই পাজি হয়ে যায় না। আমি মহলদার আর নাজিরের চিঠি জানলাম, তুমি সৈয়দার সঙ্গে কি ব্যবহার করেছ, তার প্রতিদানে তোমায় তীব্র তিরষ্কার এবং শাস্তি পেতে হবে।
মন্তব্য – আজমের পুত্র, বিদার বখত, আওরঙ্গজেবের সব থেকে প্রিয় নাতি, মুখতার খাঁএর কন্যা, পুতি বেগমের সঙ্গে বিবাহ হয় ২১ নভেম্বর ১৬৮৬তে। ২৩ আগস্ট ১৬৯৫তে তাদের একটি সন্তান ফিরুজ বখত জন্মায়। বিদার বখতের শ্বশুর ছিলেন সৈয়দ মহম্মদের পুত্র শামসুদ্দিনের পুত্র, কামারউদ্দিন, এই তিনজনেরই (পারবারিক)উপাধি ছিল মুখতার খাঁ। তাঁদের বেনইমুখতার পরিবারের মুসলমান সমাজে প্রভূত সম্মান ছিল। এরা মনে করেন, এদের পরিবারের উতপত্তি হয়েছে নবির পরিবার থেকে আলি মাসাদ এবং আমীরউলহকের সূত্রে আবুল মুখতারের প্রজন্ম সূত্রে। এদের পরিবারের একজন নাজাফ থেকে খুরসানের সাবজাওয়ারে অভিবাসিত হয়ে চলে আসেন বলে তার পর থেকে এদের পারিবারিক উপাধি হয় সাবজাওয়ারি।
আওরঙ্গজেব নিজের বিবাহিত জীবনের কথা উল্লেখ করছেন। তার স্ত্রী, শাজ নয়াজ খাঁ সাফাওয়ির কন্যা দিলারাস বানু(বিবাহ ৮ মে ১৬৩৭, মৃত্যু ৮ অক্টোবর ১৬৫৭) খুব গর্বী মহিলা ছিলেন, তার চরিত্র ইঙ্গিত আমরা পুত্র মুহম্মদ আজমের হামবড়া এবং উদ্ধত চরিত্র থেকে পাই।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment