তৃতীয় খণ্ড
৩৪। কোরণীয় আইন অনুসারে বিচার হবে
গাজিউদ্দিন খাঁ বাহাদুর ফিরুজ জং খাঁএর সেনাবাহিনীর সংবাদপত্র পাঠে সম্রাট জানতে পারলেন, একটি উন্মুক্ত সভায় বিচার চলাকালীন ফিরুজ এক রাজপথ দস্যুকে হত্যা করেছেন। সম্রাট লিখলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (আসাদ খাঁ) মাথামোটা খাঁ, ফিরুজ জংকে লিখুক, তুমি রাজসভায় মানুষ হত্যা করেছ, মানে, সর্বশক্তিমান যা তৈরি করেছিলেন, তুমি তা ধ্বংস করেছ, শরিয়ত আইন না মেনেই। আমি জনি না কবে সেই মৃতের উত্তরাধিকারী এসে তার রক্তের দাম চাইবে! এই সামান্য(আওরঙ্গজেব) মানুষটি ভেবে পাচ্ছে না, মহাশক্তিমানের(ভগবানের) তৈরি আইন(কোরাণ) অনুযায়ী যে ফৌজদারি ব্যবস্থা(হাদুদ) দেশে চালু আছে, সেই আইন না মেনে যে কাজটি তুমি করেছ, তার বিরুদ্ধে আমি কি পাল্টা ব্যবস্থা নেব। পরোপকারের এমন ভাবনা তোমায় যেন পেয়ে না বসে, যা সর্বশক্তিমানের ধর্ম বিরুদ্ধে যায়।
মন্তব্য – গাজিউদ্দিন খাঁ ফিরুজ জং বাহাদুর, হায়দারাবাদের প্রথম নিজামের পিতা, আওরঙ্গজেবের সময়ে যে দুজন প্রধান সেনাপতি ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম – অন্যজনের নাম নুসরত জং। রক্তের দাম (এ নিয়ে আমরা দ্য মুঘল এডমিনিস্ট্রেশনএ বিশদে আলোচনা করেছি), যাকে হত্যা করা হয়েছে, তার উত্তরাধিকারীরা যে হত্যা করেছে, তার মৃত্যু দণ্ড না চেয়ে কোরানি আইন আনুযায়ী অর্থ-ক্ষতিপূরণও চাইতে পারে। আর হাদুদ নিয়েও দ্য মুঘল এডমিনিস্ট্রেশনএ বিশদে আলোচনা করেছি।
৩৫। ফিরুজ জংকে নম্রতা শেখালেন
গাজিউদ্দিন খাঁ বাহাদুর ফিরুজ জং খাঁএর সেনাবাহিনীর সংবাদপত্র পাঠে সম্রাট জানতে পারলেন, গাজিউদ্দিন তার অধীনের সমস্ত এলাকাজুড়ে নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি যে লিখিত নির্দেশ পাঠান বিভিন্ন স্থানে, সেই নির্দেশনামাগুলিতে (খাঁএর)কারামত-বুনিয়াদ দ্বারা নির্দেশিত শব্দবন্ধটি লিখতে হবে।
সম্রাট লিখলেন, ‘কোন ক্ষতি নেই’। তার পূর্বপুরুষ সন্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন ধর্মস্থানের বাসিন্দা ছিলেন। আমি শুধু, ‘নির্দেশক্রমে’ লেখার অনুমতি দিতে পারি। কিন্তু মাত্র সাতহাজারি মনসবদারের কোন ক্ষমতা থাকেনা ঐশ্বরিক ক্ষমতার(কারামাত)। আমার নির্দেশ হল, ভবিষ্যতে সম্রাটের সিংহাসনে বসার বার্ষিক উতসবে, সে এই বান্দাকে যে উপহার পাঠাবে, তা যেন গ্রহণ করা না হয়’।
গাজি যখন এই সংবাদটি পেল, সে লিখল, ‘যে তার পাপের অনুশোচনা করে, সে পাপ ধুয়ে ফেলে, যখন একজন মানুষ নিজের ভুল স্বীকার করে, তখন সামগ্রিকভাবে সর্বশক্তিমান, সেই ভুল কম, বেশি যাই হোক, বাস্তবিকই ক্ষমা করে দেন। সেই আবেদনের উত্তরে সম্রাট লিখলেন, ‘নিজেকে সংশোধনের মাধ্যমে যেই তার ক্ষমা ভিক্ষা করে, সর্বশক্তিমান তাকে মাফ করে দেন। কিন্তু যদি আবার তার পাপের ঘড়া ভরে ওঠে, তাহলে তিনি তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহন করেন’।
মন্তব্য – নিজামউলমুলকের পিতা গাজিউদ্দিন খাঁ, সমরখন্দের সন্ত এবং জ্ঞানী, আলম শেখএর নাতি। পরিবারের দাবি তারা মধ্য এশিয়ার শেখ শিহাবউদ্দিন শারাওয়ার্দির উত্তরাধিকার বহন করছেন। কারামাত-বুনিয়াদ শব্দবন্ধটি দুটি মানে ১) দয়াময় বা অনুগ্রহশীল, এবং ২) অঘটনঘটনবিদ। আওরঙ্গজেব দ্বিতীয় ভাবটি ধরেছেন। তাই তিনি ব্যঙ্গ করে লিখছেন, তিনি ফিরুজ জংএর দাস মাত্র।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment