দ্বিতীয় খণ্ড
আজম খাঁ
১৮। শাহজাদা এবং সাধারণ মানুষের বিচার
শাহজাদা মুহম্মদ আজম শাহ, ইনায়াতুল্লা খাঁকে একটি চিঠি লিখে তার অনুরোধ এবং চিঠিটির মূলভাব সম্রাটকে বলার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি এইভাবে লিখেছেন, ‘সঈয়দ ল’ল, তিন প্রজন্মের সরকারের অন্যতম মনসবদার, মান্দাসরের জায়গিরে তিনি মদ্য পান করেন, এবং নানানরকম বিশৃঙ্খল বিধর্মীয় (বিদাত) কাজ করে থাকেন। সম্রাটের উচিত সেই ব্যক্তির থেকে জায়গিরটি কেড়ে নিয়ে আমাকে অর্পন করা, যাতে এই শয়তানটিকে সবক শেখানো যায়’। সম্রাট এই আবেদনের উত্তরে লিখলেন, ‘অভিনব এবং মজাদারভাবে নিজের চরিত্রের ভাল দিকগুলি ঢাক পেটানোর কাজ তুমি করেছ, যাতে আমি সেই জায়গির তোমার নামে লিখে দিই, যে কাজ করা দরকার ছিল নীতি দারোগার। তিন প্রজন্মের কথা তো ছেড়েই দাও, এক প্রজন্মের জায়গির হস্তান্তর করা খুব কঠিন। একজন সাধারণ মানুষের মুখের কথায় কারোর জায়গিরের অধিকারের বদল আনা যায় না। আমার ভৃত্যরূপে তুমি এবং সঈয়দ ল’ল দুজনেই আমার চোখে সমান অধিকার ভোগ কর, বরং সঈয়দ ল’ল যেহেতু একজন সঈয়দ, সে তোমার থেকে হাজারগুণে উচ্চাসনে অবস্থান করে। সদর প্রধান সেই এলাকার নীতি দারোগাকে এই বিষয়টা তদন্ত করে দেখার জন্য চিঠি লিখবে এবং তার পরে বিশদে আমাকে তার সমীক্ষা পত্র পাঠাবে। সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা কর, সম্রাট শাহজাহানের মত আমি আমার পুত্রদের আস্কারা দিই নি। যাতে তারা আমায় অপমান করতে না পারে(তার ব্যবস্থা আমি করেছি)’।
মন্তব্য – (যারা যদুনাথ সরকারের দ্য মুঘল এডমিনিস্ট্রেশন পড়েছেন, নিশ্চই মনে আছে নীতি পুলিশের কথা - অনুবাদক) নীতি দারোগা বা মুহতসিব, একজন আধিকারিক, যিনি দেখবেন, ইসলামের নীতিগুলি প্রজাদের ব্যক্তিগত জীবনে যাতে প্রযুক্ত হয়।
১৯। খুব উদ্ধত/সাহসী না হওয়াই উচিত
শাহজাদা মুহম্মদ আজম শাহের সেনা সূত্রে সম্রাট জানলেন, যে তিনি নিরাপত্তার পরোয়া না করেই পানহালা দুর্গের কাছে কাটা খাদের কাছে বার বার চলে যাচ্ছেন, যাতে দুর্গটি ভালভাবে দেখা যায়। যদিও নাজির এবং মহলদার তাকে বারণ করেছেন, তিনি তাদের নিষেধাজ্ঞা শুনছেন না। ঠিক একই ঘটনা সম্রাটকে লেখা নাজির এবং মহলদারের চিঠিতেও উল্লিখিত হয়েছে।
মহামহিম লিখলেন, ‘আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি, আমার পুত্রের ওপর এই সমাজের কোন (শিক্ষার)প্রভাব পড়ে নি। তাকে হাজারোগুণে বারণ করা সত্ত্বেও, তার দূরে দেখার অভ্যেস নেই, সে এই কথাটি জানে না যে, ‘সতর্ক হলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো যায়’ বা সে হয়ত ভুলে গিয়েছে, ‘নিজের হাতে তুমি নিজের ধ্বংস ডেকে এনো না’।(কবিতা)
‘একটি পাখি এই বিশ্ব-বাগানে বিচক্ষণ হয়ে ওড়ে,/ মনে রেখো গোলাপ যেন হয়ে উঠতে পারে বাজপাখির উদ্যত নখর!/ যখন তিতির চারিদিকে নজর না দিয়ে উড়তে থাকে,/ তার হাসিতে যেন রক্ত ঝরে পড়ে/ সমাজের ভাল কখোনোই খারাপ চরিত্রকে ভালয় রূপান্তরিত করতে পারে না/চিনির সিরা থেকে তুলে নেওয়া কাঠ বাদাম, তিতোই হয়।
বীরত্বে কখোনো ধৃষ্টতা আর অদূরদর্শিতা জুড়ে থাকে না, বরং সেই(ধৃষ্টতা আর অদূরদর্শিতা) একজনকে ধ্বংস করে।
মন্তব্য – পানহালা কোলাপুরের ১১ কিমি দূরে অবস্থিত। আওরঙ্গজেব ৯ মার্চ থেকে ২৮ মে ১৭০১ এই দুর্গ অবরোধ করে এটি দখল করেন।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment