তৃতীয় খণ্ড
৫১। বিদেশি আক্রমণকারীদের প্রতিআক্রমনের শীঘ্রতা
বণিক দলের নেতা মহম্মদ সাদিকএর পাঠানো চিঠিতে সম্রাট জানতে পারলেন, শাহ আব্বাস তার রাজধানী ইসপাহান ত্যাগ করেছেন, শহরের কিছু দূর(দুই লিগ) গিয়ে তার অগ্রগামী সৈন্যদের আঘ্রাবাদের দিকে পাঠিয়েছেন। সম্রাট তার নিজের আরব ঘোড়া তৈরি রেখে সেনা তৈরি করতে বললেন। কেউ কোন কিছুই তাকে প্রশ্ন করতে পারছে না। মীর জুমলার সাহসী সন্তান মহম্মদ আমীর খাঁ শুধু প্রশ্ন করলেন, ‘মহামহিমের অগ্রগামী সৈন্যদল কি কোন বার্তা পাঠায় নি? তাদের বার্তা আসা পর্যন্ত কি আমরা পরের পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করব?’
মহামহিম জানালেন, ‘(পার্সি রাজার আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্য সম্বন্ধ নিশ্চিত না হয়ে) আমি কিছু করতে পারি না। কিন্তু তাদের সমরসজ্জার তথ্য জানার পর অবহেলা আর দেরি করলে আমার ভাগ্য বিপর্যয় হতে পারে। এখন কাজ হল অগ্রগামী সৈন্যদলের খবর আসা পর্যন্ত তৈরি হয়ে বসে থাকা’। (কবিতা)
সর্বশক্তমানের সৃষ্টি মানুষ পূর্ব বা পশ্চিমে অপরিচিত নয়;/সে যেদিকেই যায় দেশ তার সঙ্গেই থাকে।
আগ্রার বাইরের বাগানে প্রবেশ করে দেওয়ানি আম ডাকলেন সম্রাট, সেখানে কয়েকদিন বাদে তার সঙ্গে যেতে বসা কর্মচারী এবং কেরানীদের বললেন, পরেরদিন তিনি কুচ করে এগোতে চান, তারপর থামবেন লাহোরে। গৃহ অধ্যক্ষ সম্রাটের প্রতি এক আবেদনে জানালেন, ‘এই কুচ করার সিদ্ধান্তটি খুব তাড়াতাড়ি করে নেওয়া হয়েছে। ফলে সেনা চলাচলের জন্য যা প্রয়োজন সব আমাদের হাতে নাও আসতে পারে’।
সেই আবেদনের ওপর সম্রাট লিখলেন, ‘এই অনন্ত পথ চলার আহ্বান কোন মানুষই এড়াতে পারে না, এবং সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পূর্বের কোন হুশিয়ারি ছাড়াই, তাতে আমার আর কি করার আছে? আমি এই যাত্রাকে অসীমের দিকে যাত্রা হিসেবেই দেখছি। আমি যেভাবে এখানে এসেছি, ঠিক সেইভাবেই আমি এই যাত্রাটা শুরু করব। না, এমন কি কোন কোন দিন কত কত রাস্তা যাব, তাও আমরা পরিকল্পনা না করতেও পারি। (রোজ)যতটা পারা যায় আমি ততটা যাব।(কবিতা)
মৃত্যুর পথে পথচারীর পথানুগমনের কোন স্তর হয় না
মন্তব্য – ১৬৬৬এর সেপ্টেম্বরে, তখন আওরঙ্গজেব আগ্রায়, গোয়েন্দাদের থেকে খবর পেলেন যে দ্বিতীয় শাহ আব্বাস খুরাসানে প্রবেশ করেছেন ভারত আক্রমনের উদ্দেশ্য নিয়ে। সম্রাট যশোবন্ত সিংএর সঙ্গে মুয়াজ্জমকে ৪ সেপ্টেম্বর পাঠালেন পাঞ্জাবের উদ্দেশ্যে। ৯ অক্টোবর তিনি আগ্রা ছেড়ে দিল্লি রওনা হলেন, কিন্তু উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে পৌছোনোর জন্য কোন তাড়াহুড়ো দেখাচ্ছেন না। ১২ ডিসেম্বর পালামএর শিকার শিবিরে তিনি শুনতে পেলেন ২২ আগস্ট, শাহ মারা গিয়েছেন। আওরঙ্গজেবের উদ্দেশ্যে লেখা একটি উপহাসভরা চিঠি শাহ দিয়েছিলেন পারস্যের মুঘল রাজদূত তারবিয়ত খাঁকে, মৃত্যুর কিছু আগে, সেটি ফৈয়াজউলকাওয়ানিনএ উল্লেখ আছে। সেখানে তিনি ভারত সম্রাটকে ভারত আক্রমনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment