তৃতীয় খণ্ড
৪৯। বিদেশি হানাদার বিষয়ে রণনীতি
আফগানিস্তান সুবা থেকে পাঠানো খররের কাগজ থেকে সম্রাট জানয়ে পারলেন যে যুদ্ধের জন্য তৈরি ১১হাজার ঘোড়া, দুটি ঘোড়া পিছু একজন বাহক কাবুলে প্রবেশ করেছে। এবং রীতি অনুযায়ী দিল্লির প্রশাসক এগুলি দেখে সম্রাটের জন্য দিল্লিতে পাঠিয়েছেন। এই সংবাদপত্রের ওপরে সম্রাট লিখলেন, ‘এটি আমীর খাঁর (আফগানিস্তানের সুবাদার) অযাচিত অযত্নের ফল, সে আমার কাছে শিক্ষিত হয়েছে, আমার মন জানে। হঠাতই কি করে ৫৫০০ দুঃসাহসী তুরাণি বিদেশ থেকে রাজধানীতে (বাধাহীনভাবে) ঢুকে গেল। এই মানুষগুলোই আফগানদের থেকে তাদের জমি ছিনিয়ে হিন্দুস্তানে নিয়ে আসে। এই ভুলের শাস্তি দিচ্ছি না, এবং অসাবধানতাকে তাড়না করা যায় না(ইচ্ছেকৃত পাপের মত)।
আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা কিভাবে এড়ানো যায় তা তাকেই দেখতে হবে, এটা তার দায়িত্ব। এবং অতীতের থেকে শিক্ষা নিতে হবে তাকে; ভবিষ্যতে এধরণের যদি কোন ঘটনা ঘটে তাহলে, কুড়িটি ঘোড়া পিছু একজন ঘোড়সওয়ার আসার অনুমতি দিতে হবে, এবং সেই ঘোড়সওয়ার হবে বৃদ্ধ এবং কর্মহীন ব্যক্তি।
মন্তব্য - খালিলুল্লার পুত্র আমীর খাঁ আফগানিস্তানের সুবাদার ছিলেন ১৯ মার্চ ১৬৭৭ থেকে ২৮ এপ্রিল ১৬৯৮ পর্যন্ত। মুহম্মদইবখতিয়ারের বাহিনী ১২০১ সালে নদিয়ায় এ ধরণের হঠাত আক্রমন করে, প্রাথমিকভাবে এদেরকে ঘোড়ার ব্যবসায়ী ভেবে এদের রোখে নি সৈন্যরা।
৫০। বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে সদা নজরদার থাকবে
কাবুলের সুবাদার আমীর খাঁয়ের ডাক প্রেরণ থেকে সম্রাট জানতে পারলেন, ‘পারস্যের গজনীর থানাদারের চিঠি থেকে জানা গেল গজনী থেকে পারসি সীমান্ত ৩৬ মাইল। পারস্যের কান্দাহারের থানাদার জানালেন, আমাদের দিকের চার মাইলের মধ্যে যদি আমরা তাদের একটা থানা করতে দিই, তাহলে প্রত্যেক বছর তারা মহামহিমকে আমাদের একশ দামি পার্সি ঘোড়া উপহার দেবে। আগের থানায় জল শেষ হয়ে যাওয়ায়, তারা জানাল যে আমাদের দিকে চার মাইলের মধ্যে সেই প্রার্থিত জল পাওয়া যাবে, তাই তাদের এই সিদ্ধান্ত’।
উত্তরে সম্রাট জানালেন, ‘কোন জ্ঞানী মানুষের পার্সি থানাদারের বলিষ্ঠতা এবং ঔজ্জ্বল্যতার মোহে পড়ে তার নিজের সুরক্ষার ঘোমটা তুলে নিতে যাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু(কবিতা),
থানা(=লোভ) তিনটি অক্ষর, সবগুলি মূন্য(মানে সেগুলিতে কোন বিন্দু নেই)
তুমি কি আমায় তাদের আমাদের সীমান্তের দিকে(কস) আসার অনুমতি দিচ্ছ, যখন আমি তাঁকে দুপা এগোতে দিই নি? ধর্মতাত্ত্বিকেরা বলেন, নগণ্য পাপ, একটি নৈতিক পাপের সমান। তুমি আমার বংশপরম্পরার কর্মচারী, আমার মানসিকতা তোমার জানা – তুমি সাত বছর বয়স থেকেই আমার রাজসভায় বড় হয়েছ, এবং পার্সিদের সম্বন্ধে কি করে তুমি এরকম উদাসীন থাকতে পারলে! তুমি নিজে ভাব, কেন তারা আমায় প্রতি বছর একশ পার্সি দামি ঘোড়া উপহার দেবে, এই কারণে যে তারা তাদের খানা আমাদের সীমান্তের চার মাইল ভেতরে তৈরি করার অনুমতি পাবে! প্রবাদ অনুসারে –
ভাঙ্গার জন্য সে তোমার আঙ্গুলের অংশ ধরল/ হঠাতই সে তোমার হাত আক্রমন করবে। কিন্তু তোমার শত্রুর পরিকল্পনা সম্বন্ধে উদাসীন হয়ো না,/ সবসময় তার মুখমন্ডলের কালো পর্দা ছিঁড়ে ফেলো।
আরো কিছু কথা(কবিতা)
জ্ঞান আর ঐশ্বর্য/ভবিষ্যৎ পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত/ যার জ্ঞান নেই, সে ঐশ্বর্য পায় না।
সাধারণ মানুষ পশুর মত, তারা মনেকরে ঐশ্বর্যবান মানুষ জ্ঞানী হয়, কিন্তু তা মিথ্য। এই প্রবাদের মানে হল, যে তার ভবিষ্যতের ঐশ্বর্য দেখতে পায় না, বেশিদিন টেকে না, আমরা বলতে পারি সে মিলিয়ে যায়। এই বিষয়ে বেশি বলা মানে জ্বলন্ত লোহা ঠান্ডা দিয়ে পেটানো বা পুরোনো আংরাখা সেলাই করা’।
মন্তব্য – শাহজাহান এবং আওরঙ্গজেবের সময়ে পারস্যের সঙ্গে দিল্লির তীব্র প্রতিযোগিতা ছিল, বহুবার ভারত মনে করেছে পার্সিরা ভারত আক্রমন করতে পারে, সেই হুঁশিয়ারি বহুবারও সীমান্ত থেকে দেওয়া হয়েছিল। পারসি দুর্ভাগ্য বহুদিন ভারতের মাথায় ঝুলেছিল। অন্তত এই দুই সম্রাট যে কোন যুদ্ধখোর পার্সি সম্রাটের মৃত্যুর সংবাদে খুব খুশিই হতেন। ১৬৪৯ সালে পার্সিরা কান্দাহার জয় করে। খালিলুল্লা খাঁয়ের পুত্র মীর খাঁ, আমীর খাঁ উপাধি পান। ৯ মার্চ ১৬৭৭ থেকে ২৮ এপ্রিল ১৬৯৮ পর্যন্ত তিনি কাবুলের সুবাদার ছিলেন।
(চলবে
No comments:
Post a Comment