তৃতীয় খণ্ড
তার আমলাদের কাণ্ড
২৮। নুসরত জঙ্গের নাক কাটা গেল
জিনজি দুর্গ দখল করে চার ক্রোশ দূরে পানহালার সম্রাটের শিবিরে যখন জুলফিকার খাঁ বাহাদুর নুসরত জং পৌঁছলেন, কোতোয়াল, সরবরাহ খাঁ সম্রাটকে জানালেন, কেন্দ্রিয়ভাবে নুসরত জংকে নির্দেশ করে একটি আদেশ প্রচারিত হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল, লুঠেরাদের(মারাঠা) থেকে তাদের লুঠের মাল বরামত করে তাঁকে(নুসরত জং) মূল শিবিরের দিকে আসতে হবে, অথচ নুসরত জং চলে এসেছেন সম্রাটের শিবিরে। সম্রাট বললেন, ‘তাকে সেনাবাহিনীর স্তম্ভে প্রবেশের ছাড়পত্র দিও না। নুসরত জংএর সভা মধ্যস্থ য়ার আলিবেগ তাকে এই বিষয়টা লিখুক’। পরের দিন নুসরত জং ছাড়পত্র না নিয়েই সেনা স্তম্ভে ঢুকে দাবি করলেন, তাকে সম্রাটের দেওয়ানি খাসে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হোক। সম্রাটের নির্দেশ ছিল, নুসরত জং আসবেন তার কোমরে তরোয়াল, কাঁধে তীর-ধনুক আর হাতে বন্দুক নিয়ে, তবে এটি তার আগের প্রথা বিরোধী(আদেশ) যখন তার পালকি সম্রাটের দেওয়ানি খাসের বেড়ার(জালজি) প্রান্তে এসে দাঁড়াত, তিনি দুটি রাওয়াতি (দুটি ছোট বাসস্থানের তাঁবু)র কাছে পালকি ছেড়ে দিতেন। য়ার আলি বেগ, নুসরত জংকে লিখলেন যে সম্রাট তাকে এই সব দয়া দেখাচ্ছেন, কেননা তিনি তার ওপর খুব ক্রুদ্ধ হয়েছেন। শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নুসরত জং গুলাল বর (সম্রাটের নিজস্ব বাসশিবিরের বাইরের লাল(গোলাপি) পর্দা চিহ্নিত সীমান্ত)এর সামনে এলে, তার সব অস্ত্র কেড়ে নেওয়া হল, এবং পায়ে হাঁটিয়ে অপেক্ষা কক্ষে দিকে নিয়ে এসে দেওয়ানি খাসের রাওয়াতিতে বসিয়ে সম্রাটের নির্দেশের অপেক্ষা করতে বলা হল। চুপচাপ এবং তাচ্ছিলের দুই ঘড়ি কেটে গেলে তাকে সম্রাটের সামনে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হল। যখন তিনি সম্রাতের পদচুম্বন করতে যাবেন, সম্রাট তখন তার ডান পা বাড়িয়ে দিলেন। বিভ্রান্ত এবং উত্তেজিত অবস্থায় তার হাঁটু মেঝের কালীনে ডুবিয়ে দিতেই হাঁটু সম্রাটের মসনদের নিচে বসানো কালীনে ঠেকে গেল, সম্রাট অখুশি হলেও, তার হাত নুসরত জংএর পিঠে রেখে বললেন, ‘তুমি বহুকাল দূরে রয়েছ, ফলে রাজসভার রীতিরিওয়াজ ভুলে গিয়েছ’। (কবিতা)
একটি বায়স তার লেজ শহরের দিকে আর মাথা গ্রামের দিকে করেছে;/ তাহলে কাকের লেজ মাথার থেকে দামি।
তখন সম্রাট বহরামন্দ খাঁএর দিকে ফিরে ‘যে চাকর রাজভায় বেড়ে উঠেছে, সে বহুকাল দূরে গেলেও, কি করে রাজসভার রীতি ভুলে যায়? আমার ধারণা এই খাঁএর চোখের রোগ হয়েছে।’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি মুহরম খাঁকে একটা চশমা নিয়ে আসতে নির্দেশ দিয়ে, সেই চশমা তার নাকে লাগিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নির্দেশ দিলেন, সম্রাটের দেওয়া এই উপহার পরা অবস্থায় নুসরত নিজের শিবিরে হেঁটে যাবেন, এবং আগামী তিন দিন তিনি এটা পরে দরবারে আসবেন, যেমন করে সম্রাটের দেওয়া সম্মানীয় খেলাত পরে অভিজাতরা দরবারে আসেন।
নুসরত জং এই অপমানের পরে, সম্রাটের ব্যক্তিগত সহকারী(খাওয়াস)দের দারোগা, আমীর খাঁএর মধ্যস্থতায় মধ্য রাত্রে মারাঠাদের শাস্তি দিতে রওনা হয়ে যাওয়ার অনুমতি পেলেন। ইশা নমাজের পর, তিনি চোখে চশমা চড়িয়ে এসে তসবি গোণা সম্রাটের সামনে দাঁড়িয়ে তার কাজে বিদায় নিয়ে গেলেন।
মন্তব্য – জুলফিকার খাঁ, যার উপাধি নুসরত জং বাহাদুর, আওরঙ্গজেবের প্রধানমন্ত্রী আসাদ খাঁয়ের সন্তান(জন্ম ১৬৫৭, হত্যা ১৭১৩)। দক্ষিণ আর্কোট জেলার জিনিজি দুর্গের পতন হয় ৭ জানুয়ারি ১৬৯৮ সালে। পানহালা অবরোধ করে বসেছিলেন আওরঙ্গজেব ৯ মার্চ থেকে ২৮ মে ১৭০১ সাল পর্যন্ত। মূল শিবিরটি ফেলা হয়েছিল ভীম নদীর তীরে ইসলামপুরীতে। বরামন্দ খাঁ ছিলেন প্রধান খাজাঞ্চি(মৃত্যু ৫ নভেম্বর ১৭০২)। আমীর খাঁ হলেন মীর আব্দুল করিম(আমীর খাঁ শাহজাহানীর পুত্র)। ঘড়ি হল ২৪মনিট।
(চলবে)
তার আমলাদের কাণ্ড
২৮। নুসরত জঙ্গের নাক কাটা গেল
জিনজি দুর্গ দখল করে চার ক্রোশ দূরে পানহালার সম্রাটের শিবিরে যখন জুলফিকার খাঁ বাহাদুর নুসরত জং পৌঁছলেন, কোতোয়াল, সরবরাহ খাঁ সম্রাটকে জানালেন, কেন্দ্রিয়ভাবে নুসরত জংকে নির্দেশ করে একটি আদেশ প্রচারিত হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল, লুঠেরাদের(মারাঠা) থেকে তাদের লুঠের মাল বরামত করে তাঁকে(নুসরত জং) মূল শিবিরের দিকে আসতে হবে, অথচ নুসরত জং চলে এসেছেন সম্রাটের শিবিরে। সম্রাট বললেন, ‘তাকে সেনাবাহিনীর স্তম্ভে প্রবেশের ছাড়পত্র দিও না। নুসরত জংএর সভা মধ্যস্থ য়ার আলিবেগ তাকে এই বিষয়টা লিখুক’। পরের দিন নুসরত জং ছাড়পত্র না নিয়েই সেনা স্তম্ভে ঢুকে দাবি করলেন, তাকে সম্রাটের দেওয়ানি খাসে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হোক। সম্রাটের নির্দেশ ছিল, নুসরত জং আসবেন তার কোমরে তরোয়াল, কাঁধে তীর-ধনুক আর হাতে বন্দুক নিয়ে, তবে এটি তার আগের প্রথা বিরোধী(আদেশ) যখন তার পালকি সম্রাটের দেওয়ানি খাসের বেড়ার(জালজি) প্রান্তে এসে দাঁড়াত, তিনি দুটি রাওয়াতি (দুটি ছোট বাসস্থানের তাঁবু)র কাছে পালকি ছেড়ে দিতেন। য়ার আলি বেগ, নুসরত জংকে লিখলেন যে সম্রাট তাকে এই সব দয়া দেখাচ্ছেন, কেননা তিনি তার ওপর খুব ক্রুদ্ধ হয়েছেন। শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নুসরত জং গুলাল বর (সম্রাটের নিজস্ব বাসশিবিরের বাইরের লাল(গোলাপি) পর্দা চিহ্নিত সীমান্ত)এর সামনে এলে, তার সব অস্ত্র কেড়ে নেওয়া হল, এবং পায়ে হাঁটিয়ে অপেক্ষা কক্ষে দিকে নিয়ে এসে দেওয়ানি খাসের রাওয়াতিতে বসিয়ে সম্রাটের নির্দেশের অপেক্ষা করতে বলা হল। চুপচাপ এবং তাচ্ছিলের দুই ঘড়ি কেটে গেলে তাকে সম্রাটের সামনে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হল। যখন তিনি সম্রাতের পদচুম্বন করতে যাবেন, সম্রাট তখন তার ডান পা বাড়িয়ে দিলেন। বিভ্রান্ত এবং উত্তেজিত অবস্থায় তার হাঁটু মেঝের কালীনে ডুবিয়ে দিতেই হাঁটু সম্রাটের মসনদের নিচে বসানো কালীনে ঠেকে গেল, সম্রাট অখুশি হলেও, তার হাত নুসরত জংএর পিঠে রেখে বললেন, ‘তুমি বহুকাল দূরে রয়েছ, ফলে রাজসভার রীতিরিওয়াজ ভুলে গিয়েছ’। (কবিতা)
একটি বায়স তার লেজ শহরের দিকে আর মাথা গ্রামের দিকে করেছে;/ তাহলে কাকের লেজ মাথার থেকে দামি।
তখন সম্রাট বহরামন্দ খাঁএর দিকে ফিরে ‘যে চাকর রাজভায় বেড়ে উঠেছে, সে বহুকাল দূরে গেলেও, কি করে রাজসভার রীতি ভুলে যায়? আমার ধারণা এই খাঁএর চোখের রোগ হয়েছে।’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি মুহরম খাঁকে একটা চশমা নিয়ে আসতে নির্দেশ দিয়ে, সেই চশমা তার নাকে লাগিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নির্দেশ দিলেন, সম্রাটের দেওয়া এই উপহার পরা অবস্থায় নুসরত নিজের শিবিরে হেঁটে যাবেন, এবং আগামী তিন দিন তিনি এটা পরে দরবারে আসবেন, যেমন করে সম্রাটের দেওয়া সম্মানীয় খেলাত পরে অভিজাতরা দরবারে আসেন।
নুসরত জং এই অপমানের পরে, সম্রাটের ব্যক্তিগত সহকারী(খাওয়াস)দের দারোগা, আমীর খাঁএর মধ্যস্থতায় মধ্য রাত্রে মারাঠাদের শাস্তি দিতে রওনা হয়ে যাওয়ার অনুমতি পেলেন। ইশা নমাজের পর, তিনি চোখে চশমা চড়িয়ে এসে তসবি গোণা সম্রাটের সামনে দাঁড়িয়ে তার কাজে বিদায় নিয়ে গেলেন।
মন্তব্য – জুলফিকার খাঁ, যার উপাধি নুসরত জং বাহাদুর, আওরঙ্গজেবের প্রধানমন্ত্রী আসাদ খাঁয়ের সন্তান(জন্ম ১৬৫৭, হত্যা ১৭১৩)। দক্ষিণ আর্কোট জেলার জিনিজি দুর্গের পতন হয় ৭ জানুয়ারি ১৬৯৮ সালে। পানহালা অবরোধ করে বসেছিলেন আওরঙ্গজেব ৯ মার্চ থেকে ২৮ মে ১৭০১ সাল পর্যন্ত। মূল শিবিরটি ফেলা হয়েছিল ভীম নদীর তীরে ইসলামপুরীতে। বরামন্দ খাঁ ছিলেন প্রধান খাজাঞ্চি(মৃত্যু ৫ নভেম্বর ১৭০২)। আমীর খাঁ হলেন মীর আব্দুল করিম(আমীর খাঁ শাহজাহানীর পুত্র)। ঘড়ি হল ২৪মনিট।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment