তৃতীয় খণ্ড
৪৪। পাপের দঙ্গলকে ঢেকে দেয় দানের পুণ্য
জুনাপুরের হাবিবুল্লা, বড় দেওয়ানের খবর কাগজের দপ্তর(কাছারি) থেকে সম্রাট জানতে পারলেন, জাজিয়া করের আমিন, কেন্দ্রিয় খাজাঞ্চিখানা, বাইতুলমালের চল্লিশ হাজার টাকা নয়ছয় করেছে এবং সে সেই তছরূপ স্বীকারও করেছে। এনায়েতুল্লা খাঁ তাকে দপ্তরে বন্দী করে রেখে একজন কঠোর সাসারভাল(কর আদায়কারী) নিয়োগ করে তার থেকে সেই অর্থ উদ্ধারের কাজ করছে। সেই সৈয়দ শুধু বলছে, ‘আমার একটিই জীবন, কিন্তু অন্য কোন সম্পত্তি নেই’।
সেই সংবাদপত্র জুড়ে সম্রাট লিখলেন, ‘যে অর্থ আমি আগেই উদ্ধার করেছি, সেটা নতুন করে তার থেকে কেড়ে নেওয়ার প্রয়োজন কি? বুরহানপুরের সংবাদ থেকে আমি জানতে পারছি, যে এই কাণ্ডের আগে সৈয়দ তার রোজগারের প্রায় সব অর্থ ভিক্ষাজীবি ফকির এবং অন্যান্য মানুষদের জন্য দানধ্যানে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছিল। এই পাপীর (আওরঙ্গজেবের) অর্থ আরও পাপে ডুবিয়ে দিচ্ছে, সেই অর্থ যদি আমার কর্মচারী ভাল কাজে ব্যয় করে, তার প্রতিদানের কোন ক্ষতিপূরণ হয় না। সর্বশক্তিমান আমাদের পাপাচারের নষ্টামি থেকে রক্ষা করুণ’।
৪৫। বারো সংখ্যার অতীন্দ্রিয়তা
সম্রাট যখন তার রাজত্বের ৪২ তম বছরে জামাদিউসসানি মাসে ইসলামপুরী (অন্যরা একে ব্রহ্মপুরী বলে) থেকে কুচ করে চলে যাচ্ছেন দাক্ষিনাত্যের দুর্গগুলি দখল করতে, তখন তিনি তার দ্বিতীয় খাজাঞ্চিকে নির্দেশ দিচ্ছেন প্রত্যেকদিন তার সামনে দাক্ষিণাত্যের বংশপরম্পরার পরিবারগুলি বাদ দিয়ে(অন্য পরিবারগুলি) থেকে দশজন করে মনসবদার উপস্থিত করতে। খাঁ জানালেন, ‘মহামহিম যে কবিতার স্তবক, ‘এরা সেরা দশজন’ অনুসরণ করে, দশজন মনসব এবং তাদের অনুচরবর্গ(মিসল)কে উপস্থিত থাকতে আদেশ দিয়েছেন, এটা বেশ উদ্যমের কথা। যদি এই সংখ্যাটা বারো হত তাহলে বোধহয় ভাল হত’। সম্রাট লিখলেন, ‘তোমার অনুরোধটাও (দৈব)আদেশানুক্রমে। (কবিতা)
দিনের ঘণ্টায় রাশিচিহ্নের দিকে তাকিয়ে দেখ/ দিনরাত এবং কি বেহস্তও বারো সংখ্যাকে অনুসরণ করে'।
মুহম্মদ আমিন খাঁ লিখলেন, ‘(আজ বুঝলাম)আপনাকে অনুসরণ করে আমি ধন্য। কিন্তু (আমার প্রশ্ন)বারোর যায়গায় কেন চার নয়?’ শাহেনশাহ মৃদু হেসে উত্তর দিলেন, ‘চার কিন্তু বারোর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে’। আরো হেসে তিনি আবারও উত্তর দিলেন, ‘(তুমি প্রশ্ন করতে পার)কেন তিন নয়? তিনকে দুবার দ্বিগুণ করলে বারো পাওয়া যায়। তোমাকে স্বাধীনভাবে বেছে নিতে হবে। সর্বশক্তিমানের সৃষ্টি করা(মানুষের) ভালর জন্য যা ভাল প্রয়োজন তাই কর’।
মন্তব্য – ইসলামপুরী থেকে তিনি ১৯ অক্টোবর ১৬৯৯তে মারাঠা দুর্গগুলি দখল করতে কুচ করে বেরিয়ে আসেন। জুলাই ১৬৯২তে মুখলিস খাঁ দ্বিতীয় খাজাঞ্চি হিসেবে বৃত হন। মারা যান ৩ জানুয়ারি ১৭০১। সে সময়ের সদর ছিলেন, মুহম্মদ আমিন খাঁ চিন বাহাদুর। শিয়া মতাবলম্বীরা ১২ সংখ্যার ইমাম অনুসরণ করেন।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment