১৮৪৬ সালে বম্বের রেভিনু কমিশনার টমাস উইলিয়ামসন গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার
রেলওয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি লেখেন। সেটির বয়ানটি এইরূপ - The great trunk-line, running by
the Malseje Ghaut in the direction of Nagpur, would be most direct which could
possibly be selected to connect Bombay to Calcutta. Commercially, it would be
best for the cotton of Berar, while for the first 120 miles from Bombay we
would proceed in the immediate direction of the military stations of Ahmednuggur,
Jaulna and Aurangabad। এই চিঠিটির
চার বছর পর এই কোম্পানিটি ভারতের প্রথম রেলপথ, বোম্বে থেকে থানের রেলপথ ১৮৫৩তে
চালু করে। ১৯০০ সালের মধ্যে ২৪০০০ মাইলএরও বেশী রেলপথ পাতা হয়ে যায়। এই বিশাল
পরিমান বিনিয়োগ আসে ব্রিটিশ বিনয়গকারিদের থেকে।
ব্যক্তিগত মালিকানার কোম্পানিগুলি পুরোপুরি সরকারি মদতে
শুধু রেলপথই তৈরি করে নি, সেগুলোর মালিকানাও তাদের ছিল। উনবিংশ শতকের শেষ পর্যন্ত
প্রত্যেক বছর মোটামুটি ১,৪০৫ মাইল রেলপথ তৈরি হতে থাকে। বিনিয়োগ হয় ১৫০ মিলয়ন
পাউন্ড। এই এই বিনিয়োগ শুধু বিশাল অঙ্কই নয়, বিশ্বে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবথেকে
বড়ও বিনিয়োগ বটে।
কোমপানিগুলো ৫ শতাংশ হারে বিনিয়োগের ফেরতের সরকারি
আশ্বাস পায়। ১৮৬৯ থেকে ১৮০০ পর্যন্ত ব্রিটিশ কোম্পানিগুলিই ভারতে রেলপথ তৈরির বরাত
পায়। রেল রাস্তা তৈরি বা চালানোয় কোম্পানিগুলির ক্ষতি হলে সেই ক্ষতিপূরন হিসেবে ভারত
সরকার রাজস্ব খাত থেকে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড সরকারি গ্যারান্টি প্রদান করে। এই
গ্যারান্টি ব্যবস্থার বলে, কোম্পানিগুলি তাদের অংশিদারদের আশ্বাস দিয়ে বলে,
কোম্পানির যদি ক্ষতি হয় তাহলে ভারতের করদাতারা সেই ক্ষতি পূরণ করতে বাধ্য থাকবে।
অর্থাৎ এ এক বিচিত্র ব্যবসাচক্র। লাভ হলে কোম্পানির আর ক্ষতি হলে ভারতের
করদাতাদের। ব্রিটিশ বিনিয়োগ ভারতে এল এই শর্তে, ব্যক্তিগত বিনিয়োগ হবে সরকারি
ঝুঁকি আর দয়িত্বে(রিস্ক)। ১৮৭০এ ভারতে রেলপথে ব্রিটিশ বিনিয়োগ আসার পরিমানকে
ছাড়িয়ে গেল ভারত থেকে ব্রিটেনে যাওয়া সুদের পরিমান। এবং উনবিংশ শতকের শেষে, ভারতের
রেলপথে ব্রিটেনের বিনিয়োগ ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড-স্টার্লিং – ব্রিটেনের বাইরে
সাম্রাজ্যের সব থেকে বড় বিনিয়োগ।
এই গ্যারান্টি সিস্টেমে সবকটি চুক্তি ব্রিটিশ কোম্পানির
সঙ্গে করতে হত। সরকার নিশ্চিন্ত বিনিয়োগ ফেরত দেওয়ার গ্যারান্টি ছাড়াও দিত
বিনামুল্যে জমি, আর সস্তা শ্রমিক। ভারতে বিনিয়োগ হওয়া প্রত্যেকটি অর্থ ব্রিটেনেই
তোলা হয়েছে এবং একমাত্র লন্ডনের শেয়ার বাজারেই সেই শেয়ার বিক্রি করাযেত।
গ্যারান্টি সিস্টেম ব্যবসায়ীদের চাহিদা না থাকলেও আরও বেশী করে রেলপথ তৈরির
প্রণোদনা যোগাত। ১৮৪৯ থেকে ১৯০০ পর্যন্ত ৫৬৮ কোটি টাকা ভারতকে শোধ করতে হয়েছে। ১৮৮২-৮৩
সালেই রেলকে ধরে ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট ছিল ভারতের জাতীয় আয়ের ৪।১৪ শতাংশ(The
great trunk-line, running by the Malseje Ghaut in the direction of Nagpur,
would be most direct which could possibly be selected to connect Bombay to
Calcutta. Commercially, it would be best for the cotton of Berar, while for the
first 120 miles from Bombay we would proceed in the immediate direction of the
military stations of Ahmednuggur, Jaulna and Aurangabad - Irfan
Habib, Essays in Indian History: Towards a Marxist Perception,
Madras, 1995, pp 279 and 360)।
উনবিংশ শতকের শেষ অব্দি ভারত ব্রিটিশ তৈরি দ্রব্যের
সবথেকে বড়ও বাজার ছিল। ভারত তার বদলে ব্রিটেনকে দিত কাঁচামাল, অপ্রক্রিয়াজাত কৃষি
উতপন্ন। এই সমস্ত কাঁচামাল পোতাশ্রয়
পর্যন্ত পৌঁছত ভারতীয়দের করের সাবসিডিতে তৈরি রেলপথে। রেলপথ তৈরির উদ্যমে অন্য
কোনও দিকেই নজর ঘোরায় নি ভারত সরকার। ১৮৮০ সাল নাগাদ সেচ ব্যাবস্থায় বিনিয়োগের
তুলনায় রেলপথে বিনিয়োগ হয় ১৩গুণ। ১৮৭৭-৭৮এ স্যর আরথার কটন আর ফ্লোরেন্স নাইটিংগল
সেচ ব্যবস্থায় বিনিয়োগের দিকে সকলের নজর ঘোরাতে চেয়েছিলেন। তারা বলেছেন গরীব
ভারতীয়দের ওপর ১৬০ মিলিয়ন টাকার বোঝা চাপানো হচ্ছে। গান্ধীও পরে একই কথা বলেছেন।
রেল ভারতজুড়ে
বছরের পর বছর একচেটিয়া ব্যাবসা করেছে। সরকারি বা বেসরকারিস্তরেও জলপথ, সড়ক অথবা
অন্যান্য পরিবহনে বিনিয়োগে উতসাহ দেখা যায় নি। রেল কোম্পানিগুলির ওপর সরকারের কোনও
নিয়ন্ত্রন ছিলনা, করতেও চায়নি। ভারতের মোট রেল ব্যাবসা নিয়ন্ত্রন করত মাত্র পাঁচটি
ব্রিটিশ কোম্পানি। প্রত্যেকটির উদ্দেশ্য সর্বোচ্চ
লাভ। কোম্পানিগুলির মূল ব্যাবসা যেহেতু ছিল সরকার আর সরকারের অন্যতম অংশ
সেনাবাহিনীর সঙ্গে, তাই কোম্পানিগুলো পরিবহন শুল্ক কমাতে চাইত না। মনেরাখতে হবে ভারত সরকার এই ব্যবসার অন্যতম বড়
অংশিদার। ফলে সরকারের কাছে ছাড় চাওয়ার কোন সুযোগও ছিলনা।
তবে ব্রিটিশ ব্যাবসার মুনাফার জন্য রেল
কম্পানিগুলি নানাধরনের শুল্ক বরাদ্দ করত। বন্দর থেকে ভারতের যে কোনও স্থানে পন্য আনতে
গেলে কম শুল্ক দিতে হত। ভারত থেকে
কাঁচামাল বন্দর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার খরচও কম ছিল।
কিন্তু ভারতের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মাল পরিবহন করতে অনেক বেশী পরবহন
শুল্ক দিতে হত। অর্থাৎ ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি মদতে অতিরিক্ত ছাড় আর
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক। সবথেকে বেশি ছাড় পেয়েছে লন্ডনের লোহা আর
রং কোম্পানিগুলি। কেননা রেলপথ তৈরিতে এই দুটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হত।
সুত্রঃ British Imperial Railways in Nineteenth Century South Asia
Laxman D Satya (lsatya_99@yahoo.com) is at the Department of History, Lock Haven University of Pennsylvania, US.
November 22, 2008, Economic & Political Weekly
No comments:
Post a Comment