ভারতবর্ষে ১৯০বছরের রাজত্ব চালাতে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য একটি পেনিও খরচ করে নি। সাম্রাজ্যের নীতি ছিল, শুধু ভারতের প্রশাসনএর খরচ তোলাই নয়,
ব্রিটেনে হোয়াইটহল চালানো, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগএর খরচ, বিশাল সেনাবাহিনী পুষে
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ চালানো, লুঠের সম্পদে ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লব এবং সেই দৈত্যসম
কারখানাগুলোতে অপরিসীম পরিমানে কাঁচামাল সরবরাহ করা এবং সেই কাঁচামাল ব্যাবহার করে
যে উতপন্ন দ্রব্য তৈরি হবে, তাকে আবার উপনিবেশের বাজারে এনে বিক্রি করার পরিকাঠামো
তৈরির খরচ বহন করবে ভারতেরমত প্রধান উপনিবেশগুলি। এবং সেই জন্য ভারতে লুঠের ফলে অর্জিত বিপুল বিনিয়োগে বিস্তৃত রেলপথ তৈরির
পরিকল্পনা, ব্রিটিশের ধ্রুপদী উপনিবেশিক অর্থনীতির অন্যতম অঙ্গ এবং ব্রিটিশ
সাম্রাজ্যের সবথেকে বড়ও বিদেশী বিনিয়োগের প্রকল্প।
১৯১৪ পর্যন্ত ভারতে রেল রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই বিনিয়োগের অর্থ ১৭৫৭ থেকে ভারত লুঠের অর্থে সঞ্চিত হয়েছে। ১৮৬৯ পর্যন্ত ভারতেড় রেল প্রকল্পগুলোতে ব্রিটিশ গ্যারান্টি প্রথার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ফেরত দেওয়ার ব্যাবস্থা হয়েছে। ফলে ভারতে রেল তৈরির খরচ কমে যায়। ১৮৭০এ দ্বিতীয় আফগান যুদ্ধ আর ভারতে একেরপর এক মন্বন্তর ঘটার ফলে সরকারি খরচ আকাশ ছোঁয়। ভারত সরকার রেলপথ তৈরিতে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয় দুটো কারনে ১) সেনাচলাচল ২) কাঁচামাল ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া আর তৈরি দ্রব্য ভারতের বাজারে এনে সস্তায় বিক্রি করা।
১৯১৪ পর্যন্ত ভারতে রেল রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই বিনিয়োগের অর্থ ১৭৫৭ থেকে ভারত লুঠের অর্থে সঞ্চিত হয়েছে। ১৮৬৯ পর্যন্ত ভারতেড় রেল প্রকল্পগুলোতে ব্রিটিশ গ্যারান্টি প্রথার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ফেরত দেওয়ার ব্যাবস্থা হয়েছে। ফলে ভারতে রেল তৈরির খরচ কমে যায়। ১৮৭০এ দ্বিতীয় আফগান যুদ্ধ আর ভারতে একেরপর এক মন্বন্তর ঘটার ফলে সরকারি খরচ আকাশ ছোঁয়। ভারত সরকার রেলপথ তৈরিতে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয় দুটো কারনে ১) সেনাচলাচল ২) কাঁচামাল ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া আর তৈরি দ্রব্য ভারতের বাজারে এনে সস্তায় বিক্রি করা।
কিন্তু আজও ভারতে ব্রিটিশ রেলপথ কুখ্যাত হয়ে থাকবে
মন্বন্তর তৈরির কারন হিসেবে। তীর্থঙ্কর রায় বলছেন ১৮৭৬-৭৮, ১৮৯৬-৯৭ এবং ১৮৯৯-১৯০০
এই তিন সময়েড় মন্বন্তরে ভারতে খুব কম করে ১ কোটি ৩০ লক্ষ থেকে ১ কোটি ৬০ লক্ষ
হতভাগ্য মানুষ মারাগিয়েছিল। আমরা বলছি তাদের খুন করা হয়েছিল। এইগুলিকে আজ গণহত্যা
বলতে হবে। পার্লামেন্টের মন্বন্তর কমিশনের সামনে নানান সাক্ষ্য এবং তথ্য প্রদানের
পরে, রেলপথ তৈরি হয়েছে ভারতের উন্নতির জন্য, সেই মিথ্যে-মিথটি প্রথম ভাঙল। সেই
প্রথম বোঝাগেল, রেলপথ কিভাবে ব্রিটিশ কারখানাগুলির জন্য ভারতের কৃষি উৎপাদন
নির্বিচারে ব্রিটেনের জন্য রপ্তানি করছে যাতে ৪০ বছর ব্রিটেনে মন্বন্তরের অবস্থা তৈরি
না হয়। ভারতজুড়ে শস্যদানার কৃত্রিম অভাব তৈরি হয়েছে। এই অভাব এলাকায় শস্যদানার দাম
বাড়িয়ে সাধারনের নাগালের বাইরে নিয়ে গিয়েছে। রেল পরিবহন আর রেলরাস্তার পাশে তৈরি
টেলিগ্রাফ লাইনের দরুন কোথায় সস্তায় শস্যদানা পাওয়া যাচ্ছে আর কোথায় দাম বেশী, সেই
খবর বিদ্যুৎ গতিতে পৌঁছে যাচ্ছে ফড়েদের কানে। ফলে নিত্যদিন নতুন নতুন মন্বন্তর
এলাকা তৈরি হচ্ছে রেলপথের পাশের গ্রামগুলোয়। আর শস্যে মড়ক লাগলেতো কোথাই নেই।
কমিশনের সামনে বহু ভারতীয় রেলপথের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা বলছেন রেল
বিশ্বজুড়ে ভারতীয় ভাল আর গমের চাহিদা তৈরি করেছে, কিন্তু ভারতে উৎপাদন খুব একটা
বাড়ে নি। ফড়েরা রেলপথ আর টেলিগ্রাফের মদতে, ভারতজুড়ে, কম দামের শস্য বেশি দামের
অঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার একটা অস্বাভাবিক দামী শস্যবাজার তৈরি করে।
১৮৭৭এর মাদ্রাজ মন্বন্তরে দানাশস্যর দাম ৫ থেকে ৮ গুণ
বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য শস্য কেনার ক্ষমতা সাধারনের হাতের বাইরে চলেযায়। আরও অস্বাভাবিক
কাণ্ড হল, তখনও কৃষি শ্রমিকদের কাজ ছিল। সেবছরও ভারত অফিস বলে গিয়েছে শস্য সরবরাহ
স্বাভাবিক। অথচ ১৮৭৬-৭৮এর সময়ে বোম্বে আর মাদ্রাজ প্রদেশে ২৩টি তালুকে মন্বন্তর শুরু
হয়ে গিয়েছে। ১৮৮০র মন্বন্তর কমিশনার স্যর
রিচার্ড স্ত্রাচি মন্বন্তর রুখতে আরও ১০,০০০ মাইলের রেলপথ তৈরি করার প্রস্তাব দেন।
এত বড় কথা বলার পেছনে ছোট একটা সুতোর গিঁট রয়ে গিয়েছে। ১৮৭৭এ রিচার্ড স্ত্রাচি ভারতের
সবথেক বড় রেল কোম্পানির প্রধান ছিলেন। এর পরে বহু কমিশন বলেছে কেন রেল, মন্বন্তর
এলাকাগুলো থেকে তার শস্য পরিবহনের দায়িত্ব পালন করতে পারলনা।
রমেশ দত্ত বলছেন,
যেহেতু সাম্রাজ্যের নীতিই হল ভারতে রেলপথেই সমস্ত বিনিয়োগ করা, সেহেতু, সেচ বা
অন্যান্য সামাজিক উদ্যমে বিনিয়োগের পরিমান যথেষ্ট ছিল না। তিনি বলছেন ফাটকা
কারবারি আর মিলমালিকদের জন্য তৈরি ১৮৭৮এর পরে তৈরি রেললাইনগুলো ফাটকা কারবারি আর পুঁজিপতিদের জন্য
তৈরি হয়। দানাসশ্যর দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় কৃষককে অনেক বেশি পরিমানে
খাজনা দিতে হয়। ১৮৯৭র পর রমেশ দত্তর নিদান ছিল বিন্দুমাত্র রেলে বিনিয়োগ না করে
মাঠে উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া। কেননা, রেল তৈরির অজুহাত দেখিয়ে জমির খাজনা
বহুগুণ বাড়ানো হয়েছে, ফলে শস্য দানার দাম বেড়েছে। এমনকি গরীব কৃষককে অনেক বেশি কর দিতে হয়েছে। কৃষি উৎপাদন কমায় ছোট শিল্প উতপাদকেদের উৎপাদন কমেছে লক্ষণীয় হারে।
No comments:
Post a Comment