ঊক্ত শতাব্দীতে নিকলি কোন্টি এতদ্দেশে আগমন করিয়াছিলেন।
তিনি বাঙ্গালার অনেক সমৃদ্ধশালী নগরের উল্লেখ করিয়াছেন()। ষোড়শ শতাব্দীর প্রারম্ভে
ভারথেমা নামে একজন ইতালীয় পরিব্রাজক বঙ্গদেশে উপস্থিত হইয়াছিলেন। তিনিও সোনার
বাংলার সমৃদ্ধির কথা উল্লেখ করিয়াছেন। ভারথেমা বলেন যে, এখানে অপর্য্যাপ্ত শস্য ও
সর্ব্বপ্রকার মাংস প্রচুরপরিমাণে পওয়া যাইত। তদ্ভিন্ন অপর্য্যাপ্ত চিনি, আদা ও
তুলাজন্মিত। পৃথিবীর কোন দেশে এই সমস্ত দ্রব্য এত অধিক পরিমানে পাওয়া যাইত না।
ভারথেমা এখানে অনেক ধনশালী বণিকের সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন। প্রতি বৎসর পঞ্চাশখানি
জাহাজ সূতী ও রেশমী বস্ত্রে পরিপুর্ণ হইয়াবঙ্গদেশ হইতে বহুস্থানে গমন করিত।
ভারথেমা তাহাদের ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের নামোলেখও করিয়াছেন। ঐ সমস্ত বস্ত্র তুরষ্ক,
সিরিয়া, আরব প্রভৃতি দেশে ও ভারতের সর্বত্র নীত হইত। এতদ্ভিন্ন বঙ্গদেশে অনেক
জহরতব্যবসায়ী বণিকের সমাগম হইত()।
ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমভাগ হইতে পুর্টুগীজগণ বঙ্গদেশে আগমন
করিয়া ইহার অধিবাসিগণের সহিত বাণিজ্যব্যাপারে লিপ্ত হয়। এই সময় সপ্তগ্রাম
বাঙ্গালার সর্বপ্রধান বন্দর ছিল। কিন্তু ক্রমে তাঁহার নিম্নস্থ নদীপ্রবাহ রূদ্ধ
হইতে আরম্ভ হওয়ায়, তাহার অবস্থা দিন দিন হীন হইয়া পড়ে। পুর্টুগীজগণ
চট্টগ্রামকেপ্রধান বন্দর করিয়া তুলে। ক্রমে সপ্তগ্রামের পরিবর্তে হুগলী তাঁহার
স্থানে বন্দরে পরিণত হয়। পুর্টুগীজেরা যে যে স্থানে বাণিজ্যপলক্ষে বাস করিয়াছিল,
সেই সেই স্থানকে তাহারা ব্যান্ডেল বা বন্দর নামে অভিহিত করিত। অদ্যপি হুগলী ও চট্টগ্রামের
নিকট ব্যান্ডেলের অস্ত্বিত্ব বিদ্যমান রহিয়াছে।
পুর্টুগীজগণএর সময়ে বঙ্গদেশের মানচিত্র ইয়োরোপে প্রচারিত
হয়। ডি ব্যারো ইহার বিবরণসহ মানচিত্র প্রকাশ করেন। তাঁহার মানচিত্রে এসিয়ার সমস্ত
প্রদেশের উল্লেখ থাকিলেও বঙ্গদেশেরও উল্লেখ বিশেষরূপে দৃষ্ট হইয়া থাকে। সপ্তগ্রাম
ও চট্টগ্রামের বিবরণে বাঙ্গালার বাণিজ্যের বিষয় বিশেষরূপে উল্লিখিত হইয়াছে()।
পুর্টুগীজগণ চট্টগ্রামকে পোর্টো গ্রান্ডি বা বৃহৎ বন্দর ও সপ্তগ্রামকে পোর্টো
পেকিনো বা ক্ষুদ্রবন্দর নামে অভহিত করিত। সময়ে সময়ে হুগলী ও পিপলী পোর্ট পেকিনো
নামে কথিত হইত।
১৫৭০ খৃঃ অব্দে ফ্রেড্রিক নামে একজন ইউরোপীয় বঙ্গদেশে
আগমন করিয়াছিলেন, তিনি সপ্তগ্রামের বাণিজ্যের বিষয় উল্লেখ করিয়াছেন। ষোড়শ শতাব্দীর
শেষভাগে ১৫৮৬ খৃঃঅব্দে প্রথম ইংরেজ র্যালফ ফিচ্ বঙ্গদেশে উপস্থিত হন। ফিচ
বাঙ্গালার বহুস্থানের কার্পাস, কার্পাসবস্ত্র ও রেশমীবস্ত্রের প্রাচুর্যয়্যের বিষয়
উল্লেখ করিয়াছেন। টাঁডা, কুচবিহার, হিজলী, বাকলা, শ্রীপুর প্রভৃতি স্থানের
কার্পাস, কার্পাসবস্ত্র ও রেশমীবস্ত্রের বিষয় তাঁহার বিবরণে দৃষ্ট হয়। ফিচের
বিবরণে সোনারগাঁওয়ের মসলিনের উল্লেখ আছে। তিনি উল্লেখ করিয়াছেন যে, হিজলীর
একপ্রকার তৃণ হইতে রেশমীবস্ত্রের ন্যায় সুন্দর বস্ত্র নির্ম্মিত হইত। এতদ্ভিন্ন
অপর্য্যাপ্তপরিমাণে ধান্য চাউলের উতপত্তি ও বাণিজ্যের কথা তাঁহার বিবরণে দৃষ্ট
হইয়া থাকে। সপ্তগ্রাম প্রভৃতির যে বাজারের বিষয় তিনি বর্ণনা করিয়াছেন, তাহা হইতে
জানা যায় যে, সেই সমস্ত বাজারের অনেক দ্রব্যের আমদানী রপ্তানী হইত()।
No comments:
Post a Comment