প্রেস বিজ্ঞপ্তি
স্ট্রিট
ভেণ্ডরস(প্রটেকসন অব লাইভলিহুড অ্যান্ড রেগুলেসন অব স্ট্রিট ভেন্ডিং) বিল, ২০১২,
লোকসভার গৃহীত হল
মাননীয়,
ভারতে হকারদের সব থেকে বড় সংগঠন, ন্যাশনাল হকার
ফেডারেশন, ১৯৯৯-২০০০ সাল থেকে হকার সম্বন্ধীয় আইন প্রনয়নের জন্য সারা দেশে তীব্র
আন্দোলন গড়ে তুলেছে। ২৫টি রাজ্যে, ১টি কেন্দ্র শাসিত রাজ্যে ৮০০টি অদলীয় ট্রেড
ইউনিয়ন, ১১টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নানান সংগঠনের সমাহারে গঠিত
ন্যশনাল হকার ফেডারেশনের এই দীর্ঘ লড়াইএর ফলে ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩য় স্ট্রিট ভেণ্ডরস(প্রটেকসন
অব লাইভলিহুড অ্যান্ড রেগুলেসন অব স্ট্রিট ভেন্ডিং) বিল, ২০১২, লোকসভার গৃহীত হয়।
এই বিলটিতে হকারদের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, শহরের রাস্তায়
ব্যবসাকরার নানান বিধি প্রণীত হয়েছে।
সারা ভারতে হকারদের সব থেকে বড় সংগঠন হিসেবে, ন্যশনাল
হকার ফেডারেশন সর্বপ্রথম ধন্যবাদ জানাচ্ছে ৪ কোটি এবং পরিবার মিলে ২০ কোটি হকারের
পরিজনকে। এর সঙ্গে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল, ট্রেড
ইউনিয়ন এবং আরও প্রত্যেক সংগঠন এবং ব্যক্তি, যাদের নিরবিচ্ছিন্ন সমর্থন এবং
আন্দোলন ছাড়া এই আইন লোকসভায় গৃহীত হওয়া সম্ভব ছিল না।
আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই শ্রীমতী ডঃ গিরিজা ব্যাস,
কেন্দ্রীয় গৃহ নির্মান এবং শহরী দারিদ্র নির্মূলন মন্ত্রকের মাননীয়া মন্ত্রীকে। তিনি
এই বিলটি সংসদে পেশ করেন এবং বলেন ‘হকারি শহরের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ
অঙ্গ। হকারি শুধু শহরের গরীবদের স্বরোজগার দেয় তাই নয়, এটি শহরের সংখ্যাগরিষ্ঠ
সাধারণ মানুষকে সস্তা এবং পছন্দসই সেবা পেতে সাহায্য করে। হকাররা তাদের অসম্পুর্ণ
শিক্ষার জন্য শহরের মূলস্রোতে কাজ জোগাড় করতে পারেন না। তারা তাই অতুলনীয় পরিশ্রম
করে এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগ সম্বল করে শহরের ফুটপাথকে ব্যবসা/সেবার স্থান হিসেবে বেছে
নিয়েছেন’।
স্ট্রিট ভেণ্ডরস(প্রটেকসন অব লাইভলিহউড অ্যান্ড রেগুলেসন
অব স্ট্রিট ভেন্ডিং) বিল, ২০১২র মূল বিষয় সমুহঃ
বিলের প্রধান উদেশ্য হল শহরে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবেশ
সৃষ্টি করে উচ্ছেদ এবং হয়রানি ছাড়া কীভাবে হকারদের ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া যায়
তার বিধি প্রণয়ন করা।
১) এই বিলের বিষয়গুলি বাস্তবে রূপায়িত করতে দেশের
প্রত্যেকটি স্থানীয় স্বসাশিত সংস্থা একটি টাউন ভেন্ডিং অথরিটি তৈরি করবে,
২) দেশী(ন্যাচার্যাল) বাজার/হাট নির্ধারণ করা, স্ট্রিট
ভেন্ডিংএর পরিকল্পনা নির্ধারিত করা, হকারির স্থান নির্নয় করা, হকারদের সমীক্ষা করাইত্যাদি
অংশভাগী এবং সহভাগীমূলক নানান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে টাউন ভেন্ডিং কমিটি। এই
কমিটিতে সরকারী আমলা, ব্যক্তি এবং হকারদের বিশেষ করে মহিলা, পিছিয়ে পড়া
সম্প্রদায়সমূহ এবং প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। কমিটির ৪০ শতাংশ অবশ্য হকার
হতে হবে, যার এক তৃতীয়াংশ মহিলা হবেন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে এই মনোনয়ন কর্মটি
সমাধা হবে।
৩) কোনোরকম পক্ষপাতকে নির্মুল করতে এই বিল ন্যুনতম
প্রত্যেক ৫ বছর অন্তর একটি সমীক্ষা করে ভেন্ডিং জোনে হকারদের বিশেষ করে মহিলা,
পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়সমূহ এবং প্রতিবন্ধীদের গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসার জন্য তাদের
শংসাপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
৪) এখন যারা শহরের ফুটপাথে ব্যবসা করেন, তারা এই
সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত হবেন, তবে এই ভেন্ডিং জোনের পরিমাপ হবে সেই ওয়ার্ডের, জোনের
বা শহরের জনসংখ্যার ২.৫ শতাংশ।
৫) যেখানে দেখা যাবে নির্দিষ্ট ভেন্ডিং জোনে হকারদের
সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে, সেখানে টাউন ভেন্ডিং কমিটিকে নানান বিষয়কে বিবেচনা করে
প্রত্যেক হকারকে সংশাপত্র দিতে হবে, যাতে সেই হকারদের উচ্ছেদ, পুনর্বাসিত না করে আশেপাশের
ভেন্ডিং জোনে ব্যবসার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া যায়।
৬) এই বিলটি পাস হওয়ার আগে থেকে যাদের রাস্তায় ব্যবসা
করার সংশাপত্র রয়েছে, তাঁদের প্রত্যেককে নতুন করে যতক্ষন না শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে,
ততক্ষন তাঁদের হকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
৭) যতক্ষণ না নতুন করে সমীক্ষা হচ্ছে এবং প্রত্যেককে
সংশাপত্র দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষন কোনও হকারকে উচ্ছেদ করা যাবে না।
৮) কোনও হকার মারাগেলে বা দুর্ঘটনায় চিরকালের জন্য পঙ্গু
হয়ে গেলে, প্রাথমিকভাবে তাঁর স্ত্রী বা সন্তানকে সেই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ না হওয়া
পর্যন্ত সেই নির্দিষ্ট যায়গায় ব্যবসা করতে দিয়ে হবে।
৯) এইভাবে প্রত্যেক হকারকে হয়রানি থেকে বাঁচনো যাবে এবং
তাঁদের জীবন এবং জীবিকা সুনিশ্চিত করা যাবে।
১০) পুনর্বাসন বা স্থানান্তর, উচ্ছেদ এবং তাঁদের মালামাল
জব্দ করে নেওয়ার পদ্ধতিটিও নির্দিষ্ট এবং হকারস্বার্থবাহী হবে। সেই স্থানীয়
স্বসাশিত সংগঠনটির এই সব কাজের জন্য টাউন ভেন্ডিং কমিটি নির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ও
পরিকল্পনা এবং নীতিমালা গ্রহণ করবে।
১১) হকারদের পুনর্বাসন বা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হবে
হকার ব্যবস্থাপনার শেষতম পদ্ধতি। এর জন্য বিলের দ্বিতীয় তফশিলে নির্দিষ্ট কিছু
নীতি প্রনীত হয়েছে ক) পুনর্বাসন বা স্থানান্তর যতদূর সম্ভব না করা যায়, তা দেখতে
হবে। জোনের এবং নির্দিষ্ট জমিটির প্রয়জনীয়তা এবং গুরুত্ব নির্ধারণ করেই একমাত্র
পুনর্বাসন বা স্থানান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। খ) যে সব হকারকে
পুনর্বাসিত করা হচ্ছে, তিনি/তারা বা তার/তাদের প্রতিনিধি এই পরিকল্পনা, তাকে
বাস্তবে প্রয়োগ করার কাজে দৈনন্দিনভাবে সরাসরি যুক্ত থাকবেন। গ) পুনর্বাসন বা
স্থানান্তর করা হকারদের জীবন জীবিকার মানোন্নয়নই হবে পুনর্বাসনের বা স্থানান্তরণের
অন্যতম উদ্দেশ্য, অন্ততঃ তার পুনর্বাসনের বা স্থানান্তরণের আগের পুরনো জীবিকার মান
যাতে বজায় থাকে সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। ঘ) যে সব দেশিয়(ন্যাচারাল) বাজারে হকারেরা
৫০ বছরেরও বেশী ব্যবসা করছে সেগুলিকে ধ্রুপদী বা ঐতিহ্যসম্পন্ন বাজারের মর্যাদা
দিতে হবে।
১২) টাউন
ভেন্ডিং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, প্রত্যেক ৫ বছর অন্তর স্থানীয় স্বশাসিত
সংস্থাগুলো হকারদের বিষয়ে বিশদ পরিকল্পনা করবে, যাতে হকারদের ব্যবসার পরিবেশ বজায়
থাকে এবং আগামীদিনে হকারির জন্য যথেষ্ট পরিমাণ জমি বরাদ্দ হয়। এই বিলে বিশেষ করে
বলা হয়েছে, নো-ভেন্ডিং জোন তৈরি হবে এইসব নীতিগুলি অনুসারে; সমীক্ষায় কোনও
দেশী(ন্যাচার্যাল) বাজার/হাটকে নো-ভেন্ডিং জোন ঘোষণা করা যাবে না; নো-ভেন্ডিং জোন
এমন একটি স্থানে তৈরি করতে হবে, যাতে যত কম হকার উচ্ছেদ/পুনর্বাসিত হয়; যতক্ষণ না
হকারদের সমীক্ষা সম্পুর্ণ হয়ে নতুন পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে, ততক্ষণ কোনও এলাকাকেই নো-ভেন্ডিং জোন ঘোষণা করা যাবে না। এর থেকে
প্রমাণ হয়, এই বিলে হকারদের জীবন জীবিকা সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট প্রবিধান রাখা
হয়েছে।
১৩) বিল দেশী(ন্যাচার্যাল) বাজার/হাটের ওপর যথেষ্ট
গুরুত্ব দিয়েছে, এবং এই বিলে এর সংজ্ঞা নির্নয় করা হয়েছে। হকারদের নিয়ে যে
পরিকল্পনা করাই হোক না কেন, হকারদের যে স্থান নির্দিষ্ট করা হচ্ছে, তা যেন
বর্তমানের চালু দেশী(ন্যাচার্যাল) বাজার/হাটের বাস্তবতা এবং অস্ত্বিত্বের সঙ্গে
সঙ্গতি রেখে তৈরি করা হয়। এই বিল স্বাভাবিক বা দেশী(ন্যাচার্যাল) বাজার/হাটের ক্রেতা-বিক্রেতার
উভয়ের স্বার্থকে বজায় রাখে।
১৪) বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য একটি নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা
প্রণয়ন করা হয়েছে, এবং হকারদের ক্ষোভ নিরসনে যাতে নিরপেক্ষতা বজায় থাকে, তার জন্য
বিচার ব্যবস্থায় কাজ করা একজন প্রাক্তন আমলা/আধিকারিক এই বিচার ব্যবস্থায় প্রধান
চেয়ারম্যান মনোনীত হবেন।
১৫) যে সব দ্রব্য প্রশাসন হকারদের থেকে জোর করে জমা
নিচ্ছে, সেই সব পচনশীল, অপচনশীল দ্রব্য ফেরত পাওয়ার নিশ্চিত ব্যবস্থা এই বিলে করা
হয়েছে। অপচনশীল বস্তুগুলি স্থানীয় প্রশাসন, হকারদের আবেদনের দুটি কাজের দিনের
মধ্যে এবং পচনশীল বস্তুগুলি ঐ দিনেই হকারদেরকে হস্তান্তর করতে বাধ্য থাকবে।
১৬) ঋণ, বীমা, এবং অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষার প্রকল্প,
গবেষণা, হকারদের ক্ষমতায়ন, প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ইত্যাদি হকার কেন্দ্রিক প্রকল্পগুলো
যাতে হকারদের জন্য তৈরি হয় সে বিষয়ে এই বিল প্রচারের সুযোগ রেখেছে।
১৭) এই বিলের ২৯ নম্বর ধারায় পুলিস এবং অন্যান্য
প্রশাসনের হয়রানির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি
ওভার রাইডিং ক্লজেরও ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে তারা হয়রানি উপেক্ষা করে ব্যবসা করতে
পারেন।
১৮) এই বিলটিতে বলা হয়েছে, বিলটি গ্রহণের এক বছরের মধ্যে
বিলের রুলগুলি নোটিফিকেশন করতে হবে এবং ৬ মাসের মধ্যে প্রকল্পগুলি নোটিফিকেসন করতে
হবে।
আগামীদিনে যে ভাবে ভারতের শহরীকরণের ঝোঁক বাড়ছে, তাতে যে
ভবিষ্যতে শহরে হকারের সংখ্যা বাড়বে তা স্পষ্ট। ডঃ গিরিজা ব্যাস বললেন, ‘হকারেরা
যাতে নির্বিঘ্নে কোনও রকম হয়রানি ছাড়া তাদের জীবন এবং জীবিকার ব্যবস্থা করতে
পারেন, সে দিকে এই বিলটি বিশেষভাবে নজর রেখেছে। একাদশ এবং দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী
পরিকল্পনায় যে ইনক্লুসিভ উন্নয়নের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে, তাতে এই বিল হকারদের
অবস্থার উন্নয়ন করে অর্থনীতির সার্বিক বিকাশ এবং ইনক্লুসানকে আরও ত্বরান্বিত
করবে।’
এই আইনটি দ্রুত এবং আইনের নানান ধারা, উপধারাকে বাস্তবে
কার্যকরীভাবে প্রয়োগ করতে, ন্যশনাল হকার ফেডারেশন দাবি করছে,
১। আই আইন প্রয়োগ করতে আশু একটি কেন্দ্রীয় নজরদারি
কর্মসমতি(সেন্ট্রাল মনিটরিং টাস্কফোর্স) তৈরি করা প্রয়োজন।
২। হকারদের সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের জন্য একটি বিশেষ
হকার বোর্ড তৈরি করা প্রয়োজন।
৩। হকারদের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা যোজনায় সঙ্গে
কর্মচারী রাজ্য বীমা(এমপ্লয়িজ স্টেট ইন্সুরেন্স)য় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪। রাজীব আবাস যোজনায় এবং জবাহরলাল নেহেরু আরবান
রিনিউয়াল মিশনে প্রত্যেক হকারকে আবাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
শুভেচ্ছায়
শক্তিমান ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক,
No comments:
Post a Comment