১৮৫১র ১১ ডিসেম্বর বেথুন সভা তৈরি হল। ‘সেকালের লোক’
পুস্তকের ২২ পৃষ্ঠায়, মনীষী কৈলাসচন্দ্র বসু শীর্ষক রচনায় মন্মথ নাথ ঘোষ লিখছেন, ১৮৫১
খৃষ্টাব্দে ১১ই ডিসেম্বর দিবসে শিক্ষাপরিষদের সভাপতি ও ভারতবাসীর অকৃত্রিম বন্ধু
ড্রিঙ্কওয়াটার বেথনের স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ ডাক্তার মৌইয়েট এতদ্দেশীয় ব্যক্তিবৃন্দের
সহজগিতায় ‘বেথুন’ সোসাইটি নামক এক সাহিত্য-সভার প্রতিষ্ঠা করেন। ...যখন ডাক্তার
মৌয়েট, ডাক্তার ডফ, আরচডিকন প্র্যাট, অধ্যাপক কাউয়েল, কর্নেল ম্যালিসন, কর্নেল
গুডউইন, ডাক্তার রোয়ার, ডাক্তার চেভারস, রেভারেন্ড ডল প্রভৃতি য়ুরোপিয় পন্ডিতগণ
এবং গুডিভ চক্রবর্তী, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, লালবিহারী দে, কৈলাসচন্দ্র বসু,
গিরীশচন্দ্র ঘোষ, কিশোরীচাঁদ মিত্র, প্যারীচরন সরকার, প্রসন্নকুমার সরব্বাধিকারী,
ঈশরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, নবীন চন্দ্র বসু, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, মহেন্দ্রলাল সরকার
প্রভৃতি উচ্চ শিক্ষিত বাঙ্গালীর বাগ্মীতায় বেথুন সভার গৃহ মুখরিত হইয়া উঠিত তখন
সভার কি গৌরবের দিনই গিয়াছে।
অর্থাৎ ক্রমশঃ গ্রামবাংলা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে, তত
কলকাতার নবজাগরনীয় সভাগুলিতে ব্রিটিশ সিভিলিয়ান এবং সেনানায়কদের অংশগ্রহণ এবং
নজরদারি বাড়ছে, যাতে গ্রামীণদেরমত কলকাতার বাবুসমাজও সরকার বিরোধী কিছু না করে
বসে। এর আগে নজরদারি করতেন রায়ান আর বার্ড। এখন যখন বাংলার গ্রামে গ্রামে
স্বাধীনতা সংগ্রামের জ্যোতি আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন দেখছি, ক্রমশঃ সেনা
বাহিনির উচ্চপদস্থ আমলাদের অংশগ্রহণ। আর আমরা যেন ভুলে না যাই এর মাত্র ৬ বছর পরেই
ভারত ওলটানো স্বাধীনতা সংগ্রাম। তার আঁচ কি কোম্পানি আর সাম্রাজ্য পাচ্ছে?
আরও একটা ভাষার মারপ্যাঁচ লক্ষ করুন, ব্রিটিশরা সকলে
পণ্ডিত আর এদেশীয়রা শুধুই কিন্তু উচ্চ শিক্ষিতমাত্র। অর্থাৎ সাম্রাজ্য
স্বার্থরক্ষার স্বার্থে, চাকরির কেরিয়ার রক্ষার জন্য, যে কোনও সময়ে বিনা অজুহাতেই
দাড়ি কাটা যেত। বইটির প্রবন্ধে তিনি আরও বলছেন, ...কৈলাসচন্দ্র(বসু) কেবল এই
সভার প্রতিষ্ঠাকারী সভ্য ছিলেন না, তিনি এই সভায় বহু সারগরভ সন্দরভাদি পাঠ
করিয়াছিলেন, এবং অন্যান্য বক্তাদের বক্তৃতার পরে যে তর্কবিতর্ক হইত তাহাতে তিনি
প্রায়ই যোগদান করিতেন। ...১৮৫৪ খৃষ্টাব্দে এই সভায় তিনি The Women of Bengal(বঙ্গনারী) সম্বন্ধে একটী প্রস্তাব পাঠ করেন। ...বাংলা
গভর্নমেন্টের তদানীন্তন সেক্রেটারী মিস্টার(পরে সার) সিসিল বীডন এই বক্তৃতা শ্রবণ
করিয়া এতদুর প্রীত হন যে বাঙ্গালা গভর্নমেন্টের দপ্তরে একটী উচ্চবেতনের পদ শূন্য হইলে কৈলাসচন্দ্রকে সেই
পদে নিযুক্ত করেন। অর্থাৎ মন্মথ নাথ ঘোষ ইঙ্গিত দিচ্ছেন, এই ধরণের সভায়
অংশগ্রহনের পুরস্কারস্বরূপ বাঙ্গালী ইংরেজি শিক্ষিতরা চাকরিযোগ্য হয়ে উঠছেন।
No comments:
Post a Comment